আবারও সংঘর্ষে ৩ কলেজের শিক্ষার্থীরা, ঢাকা কলেজ–আইডিয়াল কলেজ বন্ধ
সংঘর্ষের কারণে প্রায় তিন ঘণ্টা রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব ও গ্রিন রোড এলাকায় যান চলাচল বন্ধ ছিল।
আবারও ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘর্ষে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন।
গতকাল রোববার দুপুর ১২টা থেকে থেমে থেমে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় তিন ঘণ্টা রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব ও গ্রিন রোড এলাকায় যান চলাচল বন্ধ ছিল। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে বেলা সোয়া তিনটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জবাবদিহি ও আইনের শাসনের ঘাটতি, অন্যায় করে পার পাওয়ার প্রবণতা, মূল্যবোধের চর্চা না থাকার কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে।
এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মইনুর রহমান, মো. তাহসীন, মোহাম্মদ বায়েজিদ ও মোহাম্মদ মাহতাব। আইডিয়াল কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তাঁদের নাম–পরিচয় জানা যায়নি।
অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আজ সোমবার ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে দুই কলেজ কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া আগামীকাল মঙ্গল ও বুধবার সরকারি ছুটি থাকায় দুটি কলেজ বন্ধ থাকবে।
গতকাল বেলা পৌনে ১১টার দিকে সায়েন্স ল্যাব এলাকায় একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়। এ ঘটনাকে ঘিরে ওই এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে একই এলাকায় তিন কলেজের শিক্ষার্থীরা তুচ্ছ কারণে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন, যা সেখানকার পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তোলে।
গত বৃহস্পতিবারও ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তা বন্ধ করে মারামারিতে জড়ান। এর আগেও ছোটখাটো ঘটনায় শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন।
এদিকে গতকালের ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘১৫ দিন আগে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আইডিয়াল কলেজের সামনে গিয়ে তাদের ‘ফার্মের মুরগি’ বলে এসেছে। এর জেরে আইডিয়ালের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুর করে। পরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আইডিয়াল কলেজের সামনে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের নামফলক তুলে নিয়ে আসে। এসব ঘটনার ধারাবাহিকতায় তারা সংঘর্ষে জড়ায়।’ এ ঘটনায় পুলিশ মামলা করবে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ইমাম মেহেদী দাবি করেছেন, একটি কোচিং সেন্টারের দিকে যাওয়ার পথে আইডিয়ালের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের এক দল শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। পরে দুই পক্ষের মধ্যে প্রথমে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, পরে সংঘর্ষ শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ করে সায়েন্স ল্যাব এলাকার সড়কে নেমে আসেন ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা একে অপরকে ধাওয়া দেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষই ইটপাটকেল ছোড়ে। তখন দুই ঘণ্টার মতো সায়েন্স ল্যাব থেকে গ্রিন রোড এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কে সড়কের পাশের দোকানিরা তাঁদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। এ দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা পুলিশের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। বেলা তিনটার দিকে তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশও পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। ১৫ মিনিটের মতো এমন পরিস্থিতি চলে।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের গেটের ভেতর প্রবেশ করিয়ে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের ওপর শিক্ষার্থীরা চড়াও হলে সেখানেও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে গেলে বিকেল সোয়া তিনটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক রাজীব রায় বলেন, ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুর ও আইডিয়াল কলেজের নামফলক খুলে আনার কারণে আগে থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে শিক্ষকেরা বেলা সাড়ে ১১টা থেকেই মাঠে ছিলেন। শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। তারপরও সংঘর্ষে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে গেছে। তাঁকে ল্যাবএইডে ভর্তি করা হয়েছে। আরও চার-পাঁচজন শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আইডিয়াল কলেজের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক মারুফ নেওয়াজবলেন, ‘কারা মারামারিতে উসকানি দিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খুঁজে বের করতে বলেছি।’
বিকেল চারটার দিকে দেখা যায়, আইডিয়াল কলেজের সামনের সড়কে ইটপাটকেল পড়ে আছে। কলেজের ভেতরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের পুলিশ নিরাপদে বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছে। আর ঢাকা কলেজের সামনের সড়কেও ইটপাটকেল পড়ে আছে। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখা যায়নি।
তুচ্ছ ঘটনাকে ঘিরে এভাবে সংঘর্ষে জড়ানোর বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান নেহাল করিম প্রথম আলোকে বলেন, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির চিত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এসে পড়েছে। জবাবদিহি ও আইনের শাসনের ঘাটতি, অন্যায় করে পার পাওয়ার প্রবণতা, মূল্যবোধের চর্চা না থাকার কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে।