ডিএনসিসির ‘ঈদ আনন্দ উৎসব’, থাকছে ঈদের জামাত, আনন্দমিছিল, মেলা ও অনুষ্ঠান
নগরবাসীর মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে বর্ণাঢ্য ঈদ আনন্দ উৎসবের আয়োজন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদের জামাতসহ এ উৎসব আয়োজনে থাকছে ঈদ আনন্দমিছিল, মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের জন্য রয়েছে আপ্যায়নের ব্যবস্থাও। এ আয়োজনে ঢাকা উত্তর সিটির ব্যয় হচ্ছে প্রায় দুই কোটি টাকা।
ঢাকা উত্তর সিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদের দিন সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে ঈদের জামাত হবে। জামাত শেষে মাঠ থেকেই শুরু হবে ঈদ আনন্দমিছিল। মিছিলটি আগারগাঁওয়ের প্রধান সড়ক হয়ে খামারবাড়ি মোড় দিয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে শেষ হবে। সেখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অংশগ্রহণকারীদের জন্য থাকবে সেমাই ও মিষ্টির ব্যবস্থা।
এ ছাড়া আনন্দ উৎসবের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুই দিনব্যাপী ঈদ আনন্দমেলার আয়োজন করা হচ্ছে। ঈদের দিন এবং পরদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ মেলা চলবে। মেলায় উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ১০০টি স্টলের পাশাপাশি শিশুদের জন্য নাগরদোলা ও অন্য খেলার সরঞ্জাম থাকবে।
ঈদের জামাত সকাল সাড়ে ৮টায়
ঈদুল ফিতরের দিন সকাল সাড়ে ৮টায় প্রথমে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। নামাজের জামাতে মূল ইমামতি করবেন কারি গোলাম মোস্তফা। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মুফতি জুবাইর আহাম্মদ আল-আযহারী।
ঈদের জামাতের জন্য পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে প্রায় ৪৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের প্যান্ডেল করা হয়েছে। প্যান্ডেলের বাইরেও নামাজ আদায়ের জন্য থাকবে কার্পেট ও নামাজের বিছানা। সব মিলিয়ে ঈদের দিন ওই মাঠে একসঙ্গে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন। প্যান্ডেলের ভেতরে দক্ষিণ পাশের একটি সারির বেশির ভাগ জায়গা বরাদ্দ রাখা হবে নারীদের নামাজের জন্য।
মাঠে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন অংশে ছয়টি ফটক থাকবে। ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন পুলিশের সদস্যরা। প্যান্ডেলের দুই পাশে একসঙ্গে ১০০ জন পুরুষ ও ৫০ জন নারীর অজু করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাঠের বিভিন্ন জায়গায় খাওয়ার পানির ট্যাংক রাখা থাকবে। ঈদের জামাতের জন্য মোট ১২ পেয়ার সাউন্ড সিস্টেম ও ১০০টি মাইক ব্যবহার করা হবে। জামাতে অংশ নিতে যাঁরা ব্যক্তিগত যানবাহনে আসবেন, তাঁদের গাড়ি রাখা যাবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কিংবা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে।
গতকাল শনিবার বিকেলে পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, প্যান্ডেল তৈরির কাজ প্রায় শেষ। বৈদ্যুতিক পাখাও লাগানো হয়েছে। এখন আনুষঙ্গিক কিছু সজ্জার কাজ করছেন ডেকোরেটরের কর্মীরা। পাশাপাশি, বাণিজ্য মেলার মাঠটি সমান করা, ধুলা ওড়া বন্ধে পানি ছিটানো, অজুর জায়গা প্রস্তুত করা—এসব কাজ করছেন ঢাকা উত্তর সিটির কর্মীরা।
আনন্দমিছিল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
ঈদের জামাত শেষের পর ওই মাঠ থেকেই শুরু হবে ঈদ আনন্দমিছিল। মুসল্লিদের পাশাপাশি আনন্দমিছিলে বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ থাকবে বলে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ। মিছিলটি বাণিজ্য মেলার মাঠ থেকে আগারগাঁওয়ের প্রধান সড়ক দিয়ে খামারবাড়ি মোড় হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে এসে শেষ হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি সূত্রে, আনন্দমিছিলে বাদ্যবাজনা বাজাবেন দেড় শটি ব্যান্ডদলের সদস্যরা। অংশগ্রহণকারীদের হাতে থাকবে ঈদের শুভেচ্ছা ও সচেতনতার বার্তাসংবলিত এক হাজার প্ল্যাকার্ড। আনন্দমিছিলের অগ্রভাগে পাঁচটি সুসজ্জিত ঘোড়া রাখা হবে। মিছিলের সঙ্গে থাকবে ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি। তাতে চড়ে অনেকেই অংশ নিতে পারবেন আনন্দমিছিলে। পাশাপাশি মোগল ও সুলতানি আমলের ইতিহাস–সংবলিত ১০টি পাপেট শো রাখা হবে। আনন্দমিছিল থেকে ন্যায্য ঢাকা শহর গড়ার বার্তা দেওয়া হবে।
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে মিছিল গিয়ে শেষ হওয়ার পর সেখানেই হবে সংক্ষিপ্ত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে শিল্পীরা ঈদের গান পরিবেশন করবেন। থাকবে বাউলশিল্পীদের পরিবেশনা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময়ে সাধারণ মানুষদের আপ্যায়ন করা হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ এ সময় ঈদের সেমাই ও মিষ্টি খেতে পারবেন।
দুই দিনব্যাপী ঈদমেলা
ঢাকা উত্তর সিটির ঈদ আনন্দ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ দুই দিনব্যাপী ঈদ আনন্দমেলা। ঈদের দিন ও এর পরদিন এ মেলা হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে। মেলায় বিভিন্ন পণ্যের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ১০০টির বেশি স্টল থাকবে। দুই দিনই মেলা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
ঢাকা উত্তর সিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্টলের বরাদ্দ বাবদ কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না। উদ্যোক্তারা স্টলের জন্য কোনো ভাড়া পরিশোধ ছাড়াই এ মেলায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। কাজটি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর তত্ত্বাবধান করছে। মেলায় শিশুদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা থাকবে। খেলাধুলার জন্য রাখা হবে বিভিন্ন খেলার সামগ্রী।
ইতিহাস-সংস্কৃতি ফেরাতে উদ্যোগ
বাঙালি মুসলমানের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতেই ঈদ আনন্দ উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। গতকাল শনিবার বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা বহু সংস্কৃতির শহর। এ শহরের ৯০ শতাংশ বাঙালি মুসলমান হলেও তাদের সংস্কৃতির জায়গা কমে গেছে। অতীতের এসব সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়নি। ঈদের যে একটা সাংস্কৃতিক বিষয় ছিল, যেমন-নামাজ, কোলাকুলি, ঈদের সালামি, অন্যের পরিবারে যাওয়া, সহযোগিতা করা—এসব কমে গেছে। এসব সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে এ উদ্যোগ। তিনি আরও বলেন, আনন্দমিছিলে অন্য ধর্মাবলম্বী ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষও উপস্থিত থাকবেন। পুরো আনন্দমিছিল হবে বাদ্যবাজনার মধ্য দিয়ে। ঈদের সময় এমন কিছু পুরো ঢাকাবাসী আগে দেখেনি। মানুষের নিরাপত্তা এবং ধর্মীয় সহনশীলতা, পবিত্রতা বজায় রেখেই এই অঞ্চলের বাঙালি মুসলিম সংস্কৃতির যে চর্চা, সেগুলো করা হবে।
ঈদের জামাতের আয়োজনসহ মোট পাঁচটি অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে জানিয়ে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ঈদ জামাত, মেলা, মিছিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আপ্যায়ন—সব মিলিয়ে দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এত টাকা হয়তো ব্যয় হবে না। এখনো সংযোজন-বিয়োজন চলছে। অনেক ক্ষেত্রে বাজেট কমানো হচ্ছে।