হামলায় মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ৫০ কোটি ও ন্যাশনাল মেডিকেলের ১০ কোটি টাকার ক্ষতি

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা করে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। ২৫ নভেম্বর ২০২৪ছবি: প্রথম আলো

হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটে ঢাকার মাতুয়াইলের ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের (ডিএমআরসি) ৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ক্ষতি হয়েছে ১০ কোটি টাকার।

আজ মঙ্গলবার পৃথক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠান দুটির পক্ষ থেকে এ দাবি করা হয়েছে। এর আগে গত রোববার রাতে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা দাবি করেছিলেন, হামলায় তাঁদের প্রতিষ্ঠানের ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ন্যাশনাল মেডিকেলে ডিএমআরসির শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় গত রোববার ঘেরাও কর্মসূচি দেয় মোল্লা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ‘সুপার সানডে’ নামের ওই কর্মসূচি থেকে ন্যাশনাল মেডিকেল ও পাশের সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। হামলার সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে স্নাতকের পরীক্ষা দেওয়া কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরাও আক্রান্ত হন। স্থগিত হয় তাঁদের পরীক্ষা। এর প্রতিবাদে ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচি দিয়ে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা ডেমরা সড়ক–সংলগ্ন মোল্লা কলেজে গিয়ে গতকাল সোমবার হামলা ও লুটপাট করেন। এ সময় সেখানে দুই পক্ষের সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

আজ দুপুরে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন প্রতিষ্ঠানটির সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘দেশে যে ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি হচ্ছে, এটা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানাই, দেশকে বাঁচিয়ে রাখি। আজকে যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো, তা বলার মতো নয়। আজকে হিসাব করছি, প্রাথমিক ধারণা, ৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। আরও বেশি হতে পারে।’

তবে হামলা-লুটপাটের ঘটনায় এখনো মামলা করেননি বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল্লাহ নয়ন। এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা আছে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন ছাত্রদেরই ছিল। আগেও কুচক্রী মহল ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। কুচক্রী মহল এটার সুযোগ নিয়েছে। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দল সম্পৃক্ত কি না, সেটা আমার জানা নেই।’

ন্যাশনাল মেডিকেলের ক্ষতি ১০ কোটি টাকা

এদিকে হামলা ও সার্বিক বিষয়ে জানাতে আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ সময় তারা জানায়, তদন্তের স্বার্থে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের চিকিৎসকসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) একজন চিকিৎসক ও দুজন নার্স রয়েছেন।

১৮ নভেম্বর ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত অবস্থায় চিকিৎসাধীন মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ মারা যান। সহপাঠীদের অভিযোগ, প্লাটিলেট কমে গেলে পরিবার অভিজিৎকে ঢাকা মেডিকেলে নিতে চাইলে ন্যাশনাল মেডিকেল কর্তৃপক্ষ তাঁকে সেখানে নিতে দেয়নি। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে ১১ সদস্যদের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ইফফাত আরা লিখিত বক্তব্যে বলেন, কোনো কুচক্রী মহল হাসপাতালের ওপর মিথ্যা দায়ভার চাপানোর ঐকান্তিক চেষ্টায় লিপ্ত। রোগীর মৃত্যু হলেই ভুল চিকিৎসা, দায়িত্বে অবহেলা বলে চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের লাঞ্ছিত করা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। একজন চিকিৎসকের কাছে তাঁর রোগীর চিকিৎসাসেবা ইবাদত বা প্রার্থনার সমান। অভিজিতের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকেরা তাঁদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এত কিছুর পরও দিন শেষে চিকিৎসকদের কপালে মিথ্যা অপবাদ জুটেছে, যা কোনোক্রমেই কাম্য নয়।

এ ঘটনার সূত্র ধরে হাসপাতালে হামলায় প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেন অধ্যাপক ইফফাত আরা।

আরও পড়ুন

প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ রেজাউল হক বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করলে জানা যাবে অভিজিতের চিকিৎসায় হাসপাতালের কোনো দুর্বলতা ছিল কি না। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য কমিটিতে অভিযোগকারীদের পক্ষ থেকেও একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চাওয়া হয়েছে।

অভিজিতের লাশ আটকে রাখার অভিযোগের বিষয়ে রেজাউল বলেন, ‘রোগীর মরদেহ বাড়িতে নেওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া পরিশোধ করার জন্য আটকে রাখা হয়—এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। রোগীর পরিবার গরিব ছিল। তাদের আইসিইউ বিলই ছিল ৩৬ হাজার ৪০০ টাকা, যা মানবিক বিবেচনায় তখনই মওকুফ করে দেওয়া হয়। ১০ হাজার টাকা দিয়ে কি মৃত্যু ধামাচাপা দেওয়া যায়? মূলত ওই টাকাটা আমরা অ্যাম্বুলেন্স খরচ হিসেবে তাদের দিতে বলেছিলাম, তারা যেন লাশটি নিয়ে যাতে পারে।’

আরও পড়ুন