রাজধানীতে ভাসমান যৌনকর্মীদের মারধর
ঢাকার ভাসমান যৌনকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের মারপিট করছেন কিছু যুবক।
এমন মারপিটের কিছু ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে। তিনটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাস্তায় যৌনকর্মীদের পেটাচ্ছেন যুবকেরা।
‘এইভাবে উচ্ছেদ করতে হবে পতিতাদের। এক গ্রুপকে মারছি, আরেক গ্রুপ আসছে।’ নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক যুবকের এমন একটি ভিডিও শুরু হয় এই কথাগুলো বলে। যুবকের মুখে মাস্ক পরা ছিল। এবার মাস্ক খুলে নিয়ে কথাগুলো বলেন ‘এইচ এম রাসেল সুলতান (এটুকু ইংরেজিতে লেখা) (দোকানি রাসেল)’ নামের যুবকটি।
তারপর ওই যুবক সবুজ রঙের পাইপ দিয়ে এক নারীকে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। তারপর আরেকজনকে তাড়া করেন। পরে এক কিশোরীকে পেটাতে থাকেন। যুবকের পা ধরতে ধরতে মেয়েটি বারবার বলতে থাকে, ‘এ কাজ ছাইড়া দিমু।’ একপর্যায়ে মেয়েটির কাছে থেকে মুঠোফোনটিও কেড়ে নেন সেই যুবক।
ভিডিওগুলো দেখার পর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘন। কেউ আইন হাতে নিতে পারে না। আমি ঘটনাগুলো দেখে সংশ্লিষ্ট থানায় কথা বলেছি। এসব ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।’
ভিডিও সংযুক্ত পোস্টে রাসেল লিখেছেন, ‘শেষ পর্যন্ত না দেখে কোনো মন্তব্য করবেন না প্লিজ। এদের মূলহোতা এই কাপড় পরা মহিলাটা। দেখলে প্রতিহত করুন। ...সবাই প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করুন। উৎসাহ দিন।’
রাসেল আরও লিখেছেন, ঘটনাটি রাজধানীর শ্যামলী স্কয়ারে ঘটেছে।
কল্যাণময়ী নারী সংঘ ভাসমান যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করে। সংগঠনটির হিসাবে, গত আগস্ট মাসের ২৭ তারিখ থেকে এভাবে একের পর এক হামলার শিকার হয়েছেন নারীরা। অন্তত ৬০ জন নারী যৌনকর্মী আহত হয়েছেন এসব ঘটনায়।
তাঁদের একজন পারভীন (ছদ্মনাম)। তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি বাসায় যৌনকর্মীর কাজ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২৭ আগস্ট তিনি এবং আরও দুই নারী ওই বাসায় ছিলেন। সেখানে পাঁচ যুবক আসেন। কাজ শেষে টাকা চাইতে গেলে তাঁরা মারতে আসেন। পারভীন বলেন, তাঁকে যুবকদের একজন বলেছিলেন, ‘তোগো শিক্ষা দিতাছি। দাঁড়া একটু পর বুঝতে পারবি।’
যুবকেরা চলে যাওয়ার পরপরই চার যুবক আসেন ওই বাসায়। এসেই তাঁরা পারভীনসহ ওই নারীদের মারপিট শুরু করেন। সেই সঙ্গে যৌন পেশায় আর না থাকার ব্যাপারে শাসিয়ে যান।
কল্যাণময়ী নারী সংঘের সভাপতি রিনা আকতার প্রথম আলোকে বলেন, ভয়ে এখন ভাসমান যৌনকর্মীরা রাস্তায় বেরোতে পারছেন না। রাস্তায় বের হলেই পেটানো হচ্ছে।
রিনা বলেন, রাজধানীর সবখানেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
১৯৯৫ সালে বেসরকারি সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশের একটি জরিপের কাজে যুক্ত ছিলেন যৌনকর্মীদের আরেক নেত্রী শাহনাজ বেগম। তিনি বলেন, ঢাকায় তখন ৭০টি এলাকায় যৌনকর্মীদের কাজ করতে দেখা গিয়েছিল।
এদিকে রাজধানীতে এখন কমপক্ষে ১০ হাজার ভাসমান যৌনকর্মী আছে বলে কল্যাণময়ী নারী সংঘ সূত্র জানায়।
নারী নেত্রী খুশী কবির বলেন, এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া অরাজকতার লক্ষণ। কোনো অরাজকতার সৃষ্টির জন্য সরকার পরিবর্তন হয়নি। বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের যাঁরা দায়িত্ব আছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই দেখবেন।