তিন শহীদ বোনের স্মৃতি নিয়ে শুরু শিল্প প্রদর্শনী

শিল্প প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদছবি: জাহিদুল করিম

মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগ, যাঁরা যুদ্ধের নির্মম বাস্তবতার শিকার হয়েছিলেন, তাঁদের প্রতীক হিসেবে তিন বোনের করুণ পরিণতির বিস্মৃত গল্পগুলো নিয়ে শুরু হলো শিল্প প্রদর্শনী ‘ত্রিবেণী’। জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালার গ্যালারিতে আজ বুধবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীতে উঠে এসেছে আসমা, নাজমা ও ফাতেমা নামে তিন বোনের একসঙ্গে মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনা। ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মর্টার শেলের আঘাতে প্রাণ হারান এই তিন বোন। সেই হামলায় তাঁদের সঙ্গে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৬ জন।

বুধবার দুপুরে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আসমা বেগম, নাজমা বেগম ও ফাতেমা বেগম একসঙ্গে শাহাদাত বরণ করেন। তাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যরাও আহত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের এমন আত্মত্যাগের ঘটনাগুলোও ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে জুলাই বিপ্লবের শহীদ আবু সাঈদের প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করা হবে।

এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ততোধিক নামে একটি সংস্থা। কিউরেট করেছেন তরুণ শিল্পনির্দেশক ওয়ারেসু ফাওমি। তিনি বলেন, এই প্রদর্শনী মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্যাগ স্বীকার করা মানুষের অজানা গল্পের প্রতিফলন। এটি শুধু শিল্পের জন্য নয়, বরং বিস্মৃত স্বপ্ন, সাহস ও স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অনন্য প্রয়াস। ফাওমি জানান, এই প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ওই তিন বোনের ব্যবহৃত পোশাক।

শহীদ তিন বোনের বড় ভাই বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের (পিএইচএফবিডি) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মুজাহেরুল হক এই প্রদর্শনীর উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আগের প্রজন্মের ত্যাগের কথা কি আমরা মনে রেখেছি? মুক্তিযুদ্ধের সময়ের প্রথম দিকের শহীদ আমার তিন বোন। কিন্তু কোনো দিন তাঁদের কথা কেউ তুলে ধরেনি। এই প্রথমবারের মতো তাঁদের স্মৃতি স্মরণ করা হচ্ছে জনসমক্ষে।’

ত্রিবেণী প্রদর্শনীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের মর্টার শেলের হামলায় একসঙ্গে শহীদ হওয়া তিন বোনের স্মৃতি তুলে ধরা হয়েছে চিত্রকলা, ইনস্টলেশন, ভিজ্যুয়াল মাধ্যম এবং তাদের ব্যবহৃত পোশাকের প্রদর্শনীর মাধ্যমে। স্থান পেয়েছে মোট ৪৫টি শিল্পকর্ম।

বক্তব্য দেন শহীদ তিন বোনের বড় ভাই বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মুজাহেরুল হক
ছবি: জাহিদুল করিম

তিন বোনের সাদাকালো একটি মাত্র ছবি সম্বল করে তাঁদের বিভিন্ন ধরনের ছবি এঁকেছেন শিল্পীরা। এখানে স্থান পেয়েছে তরুণ শিল্পী প্রশুন হালদার, মৃৎমন্দির গুঞ্জন কুমার রায়, জয়তী বিশ্বাস, সারাহ জাবীনের মতো কয়েকজন শিল্পীর কাজ। এ প্রদর্শনী চলবে আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দর্শকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে প্রদর্শনী ত্রিবেণী।