দূরপাল্লার বাসে যেমন ইচ্ছা তেমন ভাড়া
রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বেশির ভাগ বাসেই নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি আদায় করা হচ্ছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে যাত্রীপ্রতি কোথাও ৫০, কোথাও ১০০, কোথাও ২০০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহনশ্রমিকদের বাগ্বিতণ্ডাও চলছে।
রাজধানী এক্সপ্রেস পরিবহনে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া যেতে ভাড়া ছিল ৪০০ টাকা। আজ শনিবার সকালে নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। রাজবাড়ীর ভাড়া ছিল ৩০০ টাকা। সেটি ৪০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
রাজধানী এক্সপ্রেসের একজন কাউন্টারমাস্টার বলেন, ‘ডিজেলের দাম এত বাড়ছে, টিকিটের দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই।’ ঝিনাইদহ যাওয়ার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে গাবতলী এসেছেন ইকবাল মিয়া। তিনি বলেন, ‘জননী পরিবহনে জনপ্রতি ৭০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে। আগে ছিল ৫০০ টাকা। অনেক বেশি ভাড়া চাইছিল। পরে দুজনের ১ হাজার ২০০ টাকা ভাড়া নিয়েছে।’
জননী পরিবহনের কাউন্টারমাস্টার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাত্রীপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ অবশ্য ৫০ টাকাও বেশি নিচ্ছে। যার থেকে যতটা নেওয়া যাচ্ছে আরকি।’
জ্বালানির দাম বাড়ায় অনেক বাস টার্মিনাল ছেড়ে যায়নি। গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনের দুই পাশের সড়কে সারি দিয়ে এসব বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। পরিবহনশ্রমিকেরা আশপাশে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের আলোচনার একটাই বিষয়, তেলের এত দাম বেড়েছে, কী হবে তাদের ভবিষ্যৎ।
পূর্বাশা পরিবহনের কর্মী আনসার আলী বলেন, ‘সরকার বাসভাড়া তো বাড়াবে। কিন্তু মালিক কি আমাদের বেতন বাড়াবে? আমরা দিনের টাকা দিনে পাই। সবকিছুর দামই বাড়বে, দিন কীভাবে চলবে আমাদের। অনেক ছোট বাস কোম্পানি বন্ধও হয়ে যাবে।’
নাবিল পরিবহনের মাজার রোড কাউন্টার থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে বেলা একটা পর্যন্ত বিভিন্ন গন্তব্যে ১৯টি বাস ছেড়ে যায়। আজ সকাল থেকে ১০টি বাস ছেড়েছে। কাউন্টারের দায়িত্বরত মাস্টার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেলা একটায় নীলফামারীর বাসে ২০ থেকে ২২ জন যাত্রী পেয়েছি। এই যাত্রী নিয়ে আজ বাস চালালে পোষাবে না। তাই বাস বন্ধ রাখা হয়েছে।’
গাবতলীর হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে ঢাকা থেকে মৌলভীবাজারের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫৫০ টাকা। গতকাল পর্যন্ত এই ভাড়া ছিল ৪৭০ টাকা। চট্টগ্রামের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৬৫০ টাকা। আগে যা ছিল ৫৮০ টাকা।
গোল্ডেন লাইন পরিবহনে ফরিদপুরের আগের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩৫০ টাকা। আগেও এই ভাড়াই ছিল। গোল্ডেন লাইন পরিবহনের কাউন্টারমাস্টার মো. শামীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে ফরিদপুর যেতে একটা বাসে গড়ে ৪৫ লিটার ডিজেল লাগে। প্রতি লিটারে ৩৪ টাকা দাম বাড়ায় অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে দেড় হাজার টাকা। আজ বাস চালানো হবে আগের ভাড়াতেই। ভাড়া না বাড়ালে কাল বাস বন্ধ থাকবে।’
গতকাল শুক্রবার রাতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এখন থেকে ডিজেলের দাম হবে ১১৪ টাকা লিটার, যা এত দিন ৮০ টাকা ছিল। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৪ টাকা। বাড়ানো হয়েছে পেট্রল ও অকটেনের দামও। পেট্রলের নতুন দাম ১৩০ টাকা, যা এত দিন ৮৬ টাকা ছিল। এ ক্ষেত্রে দাম বেড়েছে লিটারে ৪৪ টাকা।
অকটেনের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটারে ৪৬ টাকা। এত দিন অকটেন ৮৯ টাকা লিটার বিক্রি হতো। এখন তা ১৩৫ টাকায় বিক্রি হবে। গত রাত ১২টার পর থেকেই নতুন এই দাম কার্যকর হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের ইতিহাসে কখনোই জ্বালানি তেলের দাম একসঙ্গে এতটা বাড়ানো হয়নি।