যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী

রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বিক্ষোভ, সমাবেশের কারণে সৃষ্টি হয় যানজটের। এতে বিভিন্ন জায়গায় যানবাহনের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। বাসস্ট্যান্ডে গণপরিবহন এলেই যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। গতকাল বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটেছবি: দীপু মালাকার

কর্মস্থল বাংলামোটর যাওয়ার জন্য গতকাল সোমবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা আলী আহমেদ। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী। আধা ঘণ্টা ধরে তিনি যানজটে আটকা ছিলেন আজমপুরে। সেখান থেকে যানজট পেরিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে আবার নতুন করে যানজটে পড়েন তেজগাঁওয়ে এসে। এরপর অফিসে যাওয়ার জন্য কোনো যানবাহনে ওঠার সাহস না করে হেঁটেই রওনা হন তিনি। শেষ পর্যন্ত পৌনে দুই ঘণ্টা পর পৌঁছান কর্মস্থলে।

আলী আহমেদের মতো গতকাল সকালের দিকে রাজধানীতে যাঁরা বাসা থেকে বের হয়েছেন, তাঁদের এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। নানা দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়ে সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভের কারণে আগের দিনের মতো গতকালও নগরজুড়ে ছিল তীব্র যানজট।

সচিবালয়–সংলগ্ন আবদুল গণি রোড, শাহবাগ, পান্থপথ, সিদ্ধেশ্বরী, বাড্ডা ও মিরপুরে বিভিন্ন দাবিতে অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এর প্রভাব পড়ে রাজধানীর সড়কগুলোতে। থেমে থেমে চলে গাড়ি। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি সময় লাগে।

পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হয় রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ও শোভাযাত্রা। এতে যানজট দেখা দেয় রাজধানীর শাহবাগ, বাংলামোটর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারা, বিজয় সরণি, তেজগাঁও, মুগদা, সিদ্ধেশ্বরী, মতিঝিল, ধানমন্ডি, মিরপুর, গাবতলী, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ বলেছে, গত রোববার থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি বিভিন্ন দাবি পূরণে সড়কে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করছে নানা পেশাজীবী সংগঠনও। এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যে মেট্রোরেল চলাচলও বন্ধ রয়েছে। এসবের প্রভাব পড়েছে রাজধানীর সড়কগুলোতে।

বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর খামারবাড়ি থেকে শোভাযাত্রা বের করে চন্দ্রিমা উদ্যানে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলটির নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া দলটির পক্ষ থেকে বাড্ডা ও খিলক্ষেত এলাকায় শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে এসব এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে।

রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের দোকানমালিকেরা মার্কেটের দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তির অপসারণের দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। ওতে ওই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।

গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সচিবালয় সংলগ্ন আবদুল গণি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশের সদস্যরা। এ ছাড়া গতকাল বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চাকরি জাতীয়করণ, বৈষম্য দূরীকরণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণসহ বিভিন্ন দাবিতে শাহবাগ মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব, সচিবালয়ের সামনে বিভিন্ন সংগঠন, ফোরাম ও বঞ্চিতরা সভা-সমাবেশ করেন। ১৭ দফা দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন মিডওয়াইফ ও নার্সরা।

এ ছাড়া বিসিএস মৎস্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা, মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন এনএটিপি-২ এর সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (মৎস্য) কল্যাণ ফোরাম, বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা স্বেচ্ছাসেবী (মহিলা) দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ, জাতীয় মহিলা সংস্থা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম’ সমাবেশ করে। এতে সচিবালয় ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক সংকুচিত হয়ে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। সৃষ্টি হয় যানজটের। শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আরেকটি সংগঠনের অবস্থান নেওয়ার কারণে শাহবাগসহ কারওয়ান বাজার ও বাংলামোটর এলাকায়ও সৃষ্টি হয় যানজটের।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে আমিনুল রেজা নামের এক ব্যক্তি মিরপুর-১ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে কলাবাগান যাওয়ার জন্য বাসে ওঠেন। তিনি বেলা একটার দিকে আসাদগেটে পৌঁছান। এ সময় বাসের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েন তিনি।

এদিকে গতকাল সকালে বিমানবন্দর–সংলগ্ন বলাকার সামনে একটি কাভার্ড ভ্যান বিকল হয়ে পড়ায় ওই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে তা ৩০০ ফিট সড়ক এবং কুড়িলসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে র‌্যাডিসন হোটেল থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজট থাকায় উত্তরা বা বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের অতিরিক্ত সময় নিয়ে বের হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৯ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে থাকা ৩ হাজার ৮০০ ট্রাফিক সদস্য সড়কে ছিলেন না। এ সময় শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে প্রশংসা কুড়ান। পরে ১০ আগস্ট ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা কাজে যোগ দেন।

যানজটের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাফিক বিভাগের সব সদস্য এখন সড়কের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। গত রোববার থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নানা দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীসহ নানা পেশাজীবী সংগঠনের লোকজন নগরীর বিভিন্ন সড়কে আলাদাভাবে বসে পড়েন। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকায় সড়কে মানুষের চাপ বেড়েছে।