স্কেলভুক্তির দাবিতে দৈনিক মজুরিতে নিয়োজিত শ্রমিকদের হট্টগোল

চাকরি ‘স্কেলভুক্ত’ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় হট্টগোল করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া শ্রমিকেরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটির নগর ভবনে এ ঘটনা ঘটে।

উত্তর সিটির বিভিন্ন বিভাগের পাঁচজন কর্মকর্তা ও তিনজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে হট্টগোলের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা বলেছেন, ঢাকা উত্তর সিটির সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য গঠিত কমিটির চতুর্থ সভা (বোর্ড সভা) ছিল আজ। ওই সভা চলাকালে ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা নগর ভবনের ষষ্ঠ তলায় সভাকক্ষের সামনে স্লোগান দিতে থাকেন। সভা শেষে তাঁরা করপোরেশনের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। এতে সভা শেষে চলে যাওয়ার সময় বাধার মুখে পড়েন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।

ঢাকা উত্তর সিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভায় ৪ নম্বর আলোচ্যসূচিতে ছিল ‘দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিকদের স্কেলভুক্তকরণ’। এ বিষয়ে সভায় অংশ নেওয়া বোর্ড সদস্যদের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়, স্কেলভুক্তির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা এবং আর্থিক বিধিবিধান পর্যালোচনা করে পরবর্তী বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হবে।

তবে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিয়োজিত শ্রমিকদের প্রত্যাশা ছিল, আজকের বোর্ড সভাতেই তাঁদের স্কেলভুক্তি করা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এমন সিদ্ধান্ত না হওয়ার খবর দ্রুত শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিক অর্ধশতাধিক শ্রমিক নগর ভবনের ষষ্ঠ তলায় সভাকক্ষের সামনে জড়ো হন। কর্মীদের একজনের করা ভিডিওতে হট্টগোলকারী শ্রমিকদের স্লোগান দিতে শোনা গেছে। স্লোগানে বলা হয়, ‘আমাদের দাবি, আমাদের দাবি—মানতে হবে, মানতে হবে।’ ভিডিওতে সবাইকে ষষ্ঠ তলায় আসার আহ্বানও জানানো হয়।

হট্টগোলের বিষয়ে জানতে ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা (সংস্থাটির সচিব) মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিকের মুঠোফোনে কল করা হয়। তবে তাঁদের কেউই ফোন ধরেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা উত্তর সিটির এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা উত্তর সিটিতে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে (মাস্টাররোল) নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন দপ্তরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী, অফিস সহায়ক, কম্পিউটার অপারেটর কিংবা গাড়িচালক হিসেবে কাজ করছেন। তঁদের মধ্যে দক্ষ শ্রেণির শ্রমিকেরা দিনে ৬০০ টাকা, আর অদক্ষ শ্রেণির শ্রমিকেরা ৫৭৮ টাকা পান। এর বাইরে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পান না। মানবিক দিক বিবেচনায় করপোরেশন থেকে তাঁদের দুটি ধর্মীয় উৎসবে ৩ হাজার টাকা করে ৬ হাজার টাকা উৎসব ভাতা এবং ৫০০ টাকা বৈশাখী ভাতা দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজকের বৈঠকে ঢাকা উত্তর সিটিতে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কর্মরত ২ হাজার ১০০ শ্রমিককে স্কেলভুক্ত করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। স্কেলভুক্ত হলে এই শ্রমিকেরা সরকারি বেতনকাঠামোর ২০তম গ্রেডে পারিশ্রমিক পাবেন। শ্রমিকেরা তখন বেতনের সঙ্গে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, বোনাস-ভাতা, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুবিধা পাবেন। তবে এই শ্রমিকেরা অবসর–পরবর্তী সুবিধা (পেনশন) পাবেন না।

হট্টগোলের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বোর্ড সভা শেষে শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রশাসক আলোচনা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, শ্রমিকদের দাবি যৌক্তিক। বেতন বাড়ানোর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন। আর স্কেলভুক্তির বিষয়টি পরবর্তী বোর্ড সভায় উত্থাপন করা হবে।