‘ভাইরাল না হলে চিকিৎসার খোঁজও নেওয়া হচ্ছে না’

‘দৃকের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বুক পেতেছি, গুলি কর’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের পাশাপাশি নিজেদের স্বামী-সন্তান হারানোর যন্ত্রণা তুলে ধরলেন স্বজনেরা। রাজধানীর পান্থপথে দৃকপাঠ ভবনে গতকাল শুক্রবার শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন গণ-অভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থী ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আলোকচিত্রীদের ক্যামেরায় ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের স্থিরচিত্র নিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রদর্শনী। সেখানে লাশ, পতাকা, পুলিশের নির্যাতন, বিক্ষোভ থেকে শুরু করে পোষা প্রাণীর আতঙ্কিত হওয়ার দৃশ্যও উঠে এসেছে। ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এ প্রদর্শনী।

রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজ নিহত হন ১৮ জুলাই ধানমন্ডিতে। ফাইয়াজের খালা ফারজানা মুনমুন জানান, সংঘর্ষ শুরু হলে বেশ কয়েকজনকে রক্ষা করতে নিজে এগিয়ে গেলে গুলিবিদ্ধ হন ফাইয়াজ। এই বর্ণনা দিয়ে তিনি প্রশ্ন রাখেন ‘নিরপরাধ, নিরস্ত্র আমার এতটুকু বাচ্চার বুক তাক করে পুলিশ গুলি চালাল; এতটুকু হাত কাঁপল না?’

ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক চোখ হারানো শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিন এমদাদ বলেন, ‘চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকায় হেলমেট পরে একে-৪৭ হাতে ছিল হামলাকারীদের। এই অস্ত্র তারা কোথায় পেয়েছিল?’

এ সময় গুরুতর আহতদের সুচিকিৎসার দাবি জানিয়ে এমদাদ বলেন, ‘ভাইরাল না হলে চিকিৎসার জন্য খোঁজও নেওয়া হয় না। আমাদের জাতীয় রোগ হয়েছে এখন ভাইরাল হওয়া।’

নিহত সাংবাদিক হাসান মেহেদির স্ত্রী ফারহানা ইসলাম তাঁর স্বামীর মরদেহ হাসপাতালে দেখার বর্ণনা করে জানান, সে দিন রাতে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গের সামনে সারা রাত দাঁড়িয়ে প্রতিটি লাশের মুখ দেখেছেন। এ সময় তিনি বলেন, তাঁর এক বছরের কম বয়সী কন্যাসন্তান সদ্যই বাবা ডাকতে শিখেছিল। তখনই হারিয়ে গেল বাবা।

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের (ইউডা) চারুকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জুলফিকার আহমেদ। ৪ আগস্ট মিরপুরে মাথায় গুলি লেগে নিহত হন জুলফিকার। তাঁর মা বিবি আয়েশা সন্তানকে নিয়ে একটি কথাও বলতে পারেননি। পুরো সময়ই তিনি শুধু কেঁদেছেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ। উদ্বোধনী আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, লেখক রেহনুমা আহমেদ, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ইডেন কলেজে সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা শাহীনুর সুমি প্রমুখ।