বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ পুলিশ সদস্য আহত, গ্রেপ্তার ৯০
বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার মেহেদী হাসানসহ ২০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আজ শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর কয়েকটি প্রবেশমুখে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপির ৯০ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মাতুয়াইলে সকালে বিএনপির সমর্থকেরা পুলিশের আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ওই হামলায় মেহেদী হাসান আহত হন। মাতুয়াইলে আরও দুজন এএসআই আহত হয়েছেন।
ফারুক হোসেন বলেন, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির সমর্থকদের হামলায় এখন পর্যন্ত ২০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্যদের রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় মহাসমাবেশ করে বিএনপি। সেই সমাবেশ থেকে আজ শনিবার ঢাকার প্রবেশমুখগুলোকে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির বিপরীতে পাল্টা কর্মসূচি দেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন। গতকাল রাত ১১টার পর ডিএমপি থেকে জানানো হয়, পুলিশের অনুমতি না নিয়ে আজকের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দুই দল।
ডিএমপির দাবি, শনিবার বেলা ১১টার পর থেকে বিএনপির নেতা–কর্মীরা রাজধানীর প্রবেশপথ গাবতলী, আবদুল্লাহপুর, ধোলাইখাল, উত্তরা ও মাতুয়াইলে লাঠিসোঁটা হাতে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ সব সড়কে অবস্থান নেন দলটির নেতা–কর্মীরা। এতে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। তাই জনদুর্ভোগ লাঘব করতে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে গেলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ও পুলিশের যানবাহনে হামলা চালায়।
ডিএমপি আরও দাবি করে, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির নেতা–কর্মীরা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। অনেক জায়গায় গাড়ি ভাঙচুর ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাবতলীতে খালেক এন্টারপ্রাইজের বাস কাউন্টারের পাশে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের নেতৃত্বে বিএনপির নেতা–কর্মীরা জড়ো হন। তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়।
দুপুর ১২টার দিকে অবস্থান কর্মসূচি থেকে আমানউল্লাহ আমানকে তুলে নিয়ে জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে পুলিশ। পরে তাঁকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর আগে গাবতলী হানিফ বালুর মাঠ এলাকায় মঞ্চ তৈরি করে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা। বেলা ১১টার দিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীরা লাঠিসোঁটা হাতে একটি মিছিল নিয়ে মাজার গেট এলাকা থেকে গাবতলীর দিকে আসেন। একপর্যায়ে মিছিল থেকে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ধাওয়া দেওয়া হয়। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীরা বিএনপির অন্তত সাতজনকে নেতা–কর্মীকে ধরে পুলিশে দেন। এদিকে গাবতলী থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসানকে আটক করা হয় বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটি।
ধোলাইখালে আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রথমে পুলিশের ধাওয়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পিছিয়ে যান। পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে ধাওয়া দেন। দুই পক্ষের সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আহত হন। দুপুর ১২টার দিকে তাঁকে ধরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তাঁকে ছেড়ে দেয় ডিবি।