নিজস্ব সার্ভার বানিয়ে তিন মাস পর জন্মনিবন্ধন শুরু করল ঢাকা দক্ষিণ সিটি
তিন মাস বন্ধ থাকার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজ আজ বুধবার থেকে শুরু হয়েছে। নিজস্ব সার্ভার তৈরি করে এই সেবা চালু করেছে তারা। রাজস্বের অর্থ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ডিএসএসসিতে নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ওই সময় নাগরিকদের ভোগান্তি চরমে ওঠে। অনেকের জরুরি প্রয়োজনে জন্মনিবন্ধন করার দরকার থাকলেও তা করতে পারেননি। ডিএসএসসিতে মোট ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে।
আজ জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজ শুরুর তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ডিএসসিসির অঞ্চল ২-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সুয়ে মেন জো। প্রথম আলোকে তিনি জানান, আজ অনলাইনে বেশ কিছু আবেদন জমা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১ থেকে ৩৬ পর্যন্ত পুরোনো ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কার্যালয়গুলোকে গত মাস থেকে নিবন্ধনের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে ডিএসএসসিতে আগের মতো আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতেই নিবন্ধন কাজ চলবে বলে জানান ডিএসসিসির অঞ্চল ২-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সুয়ে মেন জো।
ডিএনসিসির ৩৭ থেকে ৫৪ নম্বর পর্যন্ত নতুন ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়গুলোর সচিবের পদ শূন্য আছে বলে সেখানে নিবন্ধনের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সেই ওয়ার্ডগুলোর নাগরিকেরা আঞ্চলিক কার্যালয়ে গিয়ে নিবন্ধন করেন।
জানা গেছে, স্বতন্ত্র সার্ভারের মাধ্যমে নিবন্ধন সেবা চালু করেছে ডিএসসিসি। জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন, রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের সার্ভার থেকে সারা দেশে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজ হয়। এর বাইরে গিয়ে নিজস্ব সার্ভার চালু করেছে ডিএসএসসি। https://bdris.dscc.gov.bd এখানে গিয়ে অনলাইনে নিবন্ধন করা যাবে। সারা দেশে যে সার্ভারে নিবন্ধন হয়, সেটা হচ্ছে https://bdris.gov.bd।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির নিবন্ধন কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের সার্ভারে কোনো আবেদনে ভুল হলে অনলাইনে ওই আবেদনে ঢুকেই সংশোধন করা যাবে। ফলে ভোগান্তি কম হবে নাগরিকদের। সাধারণভাবে নিবন্ধনে কোনো আবেদনকারীর নিবন্ধন ভুল হলে তাঁকে সংশোধনের জন্য নতুন আবেদন করতে হয়। জন্ম দিন ও মাস স্থানীয়ভাবে সংশোধনের সুযোগ থাকলেও নাগরিকদের জন্ম সাল সংশোধনে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে আবেদন করতে হয়। ডিএসএসসিতে জন্ম সাল সংশোধন করবেন মেয়র।
জানা গেছে, স্বতন্ত্র সার্ভার চালু হওয়ায় নিবন্ধন ফির অর্থ সরাসরি পাবে ডিএসসিসি। প্রসঙ্গত, ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কাজে করপোরেশনের ব্যয়ের পুরো টাকা সরকার পরিশোধ না করা পর্যন্ত নিবন্ধনের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের ফি পরিশোধে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা সীমিত পরিসরে চালু হয় গত এপ্রিল মাসে। পরে পর্যায়ক্রমে ই-পেমেন্ট বা অনলাইনে ফি পরিশোধ সারা দেশে চালু করে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। তবে এই ব্যবস্থা চালুর পর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা সরাসরি চলে যাওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের কাজ বন্ধ রাখে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দাবি, এ খাতে ফি বাবদ আয় সিটি করপোরেশনের তফসিলভুক্ত আয় হিসেবে আলাদা কোডের মাধ্যমে নিজস্ব তহবিলে জমা হতে হবে অথবা তাদের যা ব্যয় হয়, তার পুরোটা সরকারকে দিতে হবে। জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কাজে তাদের বছরে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। ফির টাকা তাদের তহবিলে জমা না হলে বছরে এই পরিমাণ টাকা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে সরকারের।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম তাঁর একান্ত সচিব ও স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন-৩ অধিশাখার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকীকে সমস্যা সমাধানে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি গত ২৫ জুলাই প্রথম আলোকে বলেছিলেন, অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চলছে, যদি অন্য কোনো কোডে টাকা আনা যায় (ডিএসসিসির ব্যয়ের টাকা পরিশোধের জন্য), তাহলে সমস্যার আপাতত আপৎকালীন সমাধান হবে। বিষয়টির স্থায়ী সমাধানের জন্য এই ব্যয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোড তৈরি করতে হবে। তারা যে ব্যয় করে, তার তুলনায় সরকারের বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। তাদের ব্যয়ের টাকাটা তারা চাইছে। তাদের এই সমস্যাটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টির দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।