ট্রেনের চাকায় কাটা পড়ল হার না–মানা সাঈদের পথচলার লড়াই

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন কলেজছাত্র সাঈদ আবদুল্লাহ
ছবি: সংগৃহীত

কৈশোরে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে হাল ছাড়েননি তিনি। কক্সবাজারে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকায় এসে কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। ছাত্র পড়িয়ে সেই টাকা দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে অপেক্ষা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। কিন্তু ট্রেনে কাটা পড়ে অবসান হলো তাঁর জীবনসংগ্রামের।

তিনি সাঈদ আবদুল্লাহ (২২)। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকার তেজগাঁওয়ে রেললাইন পার হওয়ার সময় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। রেলওয়ে থানা (ঢাকা-জিআরপি) জানায়, সাঈদ মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে রেললাইন পার হচ্ছিলেন। এ সময় রাজধানীর কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রেন ঢাকার বাইরে যাচ্ছিল। ঢাকার বাইরে থেকে আরেকটি ট্রেন কমলাপুরের দিকে আসছিল। কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনে কাটা পড়ে সাঈদ ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। পরে জিআরপি থানা–পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠায়।

মৃত্যুর খবর পেয়ে সাঈদ আবদুল্লাহর বন্ধু ও সহপাঠীরা বিকেলে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে ভিড় করেন। সেখানে তাঁর বন্ধুরা জানান, সাঈদ আবদুল্লাহর বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ার হোতালিয়া পাড়ায়। তিনি দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। বিষয়টি জানতে পেরে পরিবার তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় এবং তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে ছেদ টানে। এর পর থেকে চকরিয়ার এক ব্যক্তি তাঁকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছিলেন। সাঈদ এসএসসি পাস করে ঢাকায় এসে তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং সেখানকার হোস্টেলে ওঠেন।

সাঈদ আবদুল্লাহর সহপাঠী ও বন্ধু আবদুল্লাহ নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাঈদ অনেক কষ্ট করে চলত। কিন্তু কারও কাছে বলত না। পরিবার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও সাঈদ তার মায়ের সঙ্গে গোপনে দেখা করত। আমাকে সে বলেছিল, কিছুদিনের মধ্যে বাড়িতে গিয়ে গোপনে মায়ের সঙ্গে আবার দেখা করবে।’

সাঈদের স্মৃতিচারণা করে আবদুল্লাহ বলেন, সুযোগ পেলেই তাঁরা দুজনে একসঙ্গে বসে গল্প করতেন। কলেজ চলাকালে সাঈদ আর তিনি এক টেবিলে খেতেন। সাঈদ অত্যন্ত ভদ্র ও মেধাবী ছিলেন। ফুটবলও ভালো খেলতেন।

এখন সাঈদের লাশ গ্রহণ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, সাঈদের বাবা জানিয়ে দিয়েছেন, ছেলের লাশ তাঁরা গ্রহণ করবেন না।

যোগাযোগ করলে সাঈদের মা অবশ্য ছেলের লাশ দেখতে ঢাকায় আসার কথা বলেছিলেন। তবে ওই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদের লাশ পাঠালে দাফন করতে রাজি হয়েছেন।

এ বিষয়ে ঘটনা তদন্তকারী বিমানবন্দর রেলস্টেশন পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিদর্শক কামরুল হাসান সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, সাঈদের লাশ কেউ গ্রহণ করতে না চাইলে সেটি ঢাকা মেডিকেলের মর্গে হিমঘরে রাখা হবে। পরে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী লাশ দাফনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।