কমলাপুরে এসে জানলেন ট্রেন চলবে না, বিকল্প খুঁজছেন সদ্য মা হওয়া শামীমা

ট্রেন চলবে না। তাই বিকল্প উপায়ে যাওয়ার জন্য ফোনে যোগাযোগ করছেন শামীমা খাতুন (ডানে)। ১৮ দিন আগে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনিছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ঢাকা থেকে আজ মঙ্গলবার কুষ্টিয়া যাওয়ার কথা শামীমা খাতুনের। ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল সকাল ৯টায়। ১৮ দিন আগে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। সাতসকালেই নবজাতক, আরেক শিশু ও ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে কমলাপুরে এসেছেন। কিন্তু এসে জানতে পারেন ট্রেন চলবে না।

রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে কমলাপুরে এসেছেন শামীমা। ট্রেন চলবে না জানতে পেরে তাঁর এখন চিন্তার শেষ নেই। কিছুদিন আগেই অস্ত্রোপচার হওয়ায় বাসে যেতে পারবেন না বলে জানালেন। এখন গাড়ি ভাড়া করে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে ভাড়া অনেক বেশি চাইছে।

আরও পড়ুন

শামীমা খাতুন বলেন, হুট করে এভাবে ট্রেন চলাচল বন্ধের খবরে তাঁর বিপদের শেষ নেই। তাঁর সঙ্গে কথা বলার সময় আরেক স্বজন নবজাতককে নিয়ে টিকিট কাউন্টারে টিকিট ফেরতের চেষ্টা করছিলেন।

কমলাপুর স্টেশনে শামীমা খাতুনের মতো আরও অনেক যাত্রীর এমন ভোগান্তি দেখা যাচ্ছে। স্টেশনে এসে ট্রেন না চলার খবর জানতে পেরে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।

রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল সোমবার মধ্যরাতের পর থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে সকাল ৯টার দিকে পঞ্চগড় থেকে একটি ট্রেন কমলাপুরে আসতে দেখা গেছে।

রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় যাত্রীদের বসে থাকার খবর জানা গেছে। অনেকে বিকল্প পথে যাত্রা শুরু করেছেন।

মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক–সুবিধা দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। গত বুধবার চট্টগ্রামে পুরোনো রেলস্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দাবি মানার শর্ত দেয় রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন। অন্যথায় ২৮ জানুয়ারি থেকে রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় তারা।

এই রানিং স্টাফরা হলেন গার্ড, ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)। তাঁরা সাধারণত দীর্ঘ সময় ট্রেনে দায়িত্ব পালন করেন। দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিকের (মূল বেতন) হিসেবে বাড়তি অর্থ পেতেন তাঁরা। এ ছাড়া অবসরের পর বেসিকের সঙ্গে এর ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে অবসরকালীন অর্থের হিসাব হতো।

তবে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর এই সুবিধা সীমিত করে অর্থ মন্ত্রণালয়। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মন্ত্রণালয় আন্দোলনরত কর্মীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে। ট্রেন বন্ধ করে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে না ফেলার আহ্বান জানান তিনি।