উত্তর সিটি
করপোরেশনের জায়গার ‘মালিক’ কাউন্সিলরপুত্র
ঢাকা উত্তর সিটির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বনানী কমিউনিটি সেন্টার কাম কাঁচাবাজারের এক পাশে ওই জায়গা।
কমিউনিটি সেন্টারের রান্নাঘর ফুলের দোকানের জন্য ভাড়া।
মাসে ৬০ হাজার টাকা ভাড়া নেন কাউন্সিলরের ছেলে।
জামানত বাবদ অগ্রিম চার লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ।
রাজধানীর বনানীতে ঢাকা উত্তর সিটির কমিউনিটি সেন্টারের রান্নাঘরের জায়গা ফুল দোকানের জন্য ভাড়া দিয়েছেন ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মফিজুর রহমানের ছেলে রেজওয়ানুর রহমান। তিনি বনানী থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও বনানী কাঁচাবাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক।
অভিযোগ রয়েছে, জান্নাত পুষ্পালয় নামের একটি ফুলের দোকান মালিকদের কাছ থেকে জামানত বাবদ রেজওয়ানুর অগ্রিম চার লাখ টাকা নিয়েছেন। আর দোকানের মালিক থেকে মাসে ভাড়া নেন ৬০ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ছেলের অগ্রিম টাকা নেওয়া ও দোকান ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে তিনি ওই লোককে বের করে দিয়েছেন। টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জায়গাটি কাউন্সিলর কার্যালয়ের মালপত্র রাখার গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হয় দাবি করে মফিজুর বলেন, ‘এখন একজন গরিব মানুষ ওই জায়গাটি খুলে ভেতরে বসেন। দরকার হলে তাঁকে বিদায় করে দেব।’
দোকান ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করেন রেজওয়ানুর রহমান। তিনি প্রথমে বলেছিলেন, একটি হত্যাকাণ্ড ও স্থানীয় রাজনৈতিক কিছু ইস্যু নিয়ে এলাকায় বিভক্তি চলছে। অনেক অপপ্রচার চলছে।
পরে রেজওয়ানুরকে তাঁর বাবার (কাউন্সিলরের) বক্তব্যের বিষয়টি জানানো হলে তিনি বলেন, ‘আগে কী হয়েছে, সেটি বিষয় না। বর্তমানে যাঁরা দোকানদারি করছেন, তাঁরা কীভাবে বসছেন, বাবা কী বলছেন, ওনার সঙ্গে কথা না বলে কিছু বলতে পারব না।’
রেজওয়ানুরের দাবি, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কয়েকজনকে সেখানে বসতে দেওয়া হয়েছে। ওদের গত মাসে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। ১৫ আগস্ট কেন্দ্র করে ফুল বিক্রেতারা বসার জন্য কাউন্সিলরের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন। ভাড়ার বিষয়টি অপপ্রচার।
ঢাকা উত্তর সিটির সমাজকল্যাণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বনানী কমিউনিটি সেন্টার কাম কাঁচাবাজারের সংস্কার ও উন্নয়নকাজ চলছে। দীর্ঘদিন ধরে স্থাপনাটি একই অবস্থায় আছে, সংস্কারকাজ দৃশ্যমান নয়। ঠিক কবে কাজ শুরু হয়েছে, কী কাজ হচ্ছে, কবে শেষ হবে—এসব তথ্য জানা নেই সমাজকল্যাণ বিভাগের কর্মকর্তাদেরও।
ভবনটির নিচতলায় নিয়মিত কাঁচাবাজার বসছে। দ্বিতীয় তলার একাংশে কাউন্সিলর কার্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠানের বুকিং না হওয়ায় এখান থেকে আয় হচ্ছে না করপোরেশনের।
গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, কমিউনিটি সেন্টারের নিচতলায় দক্ষিণ–পূর্ব কোণে একটি খোলা জায়গা রয়েছে, যা কাঁচাবাজার থেকে বিচ্ছিন্ন। এটি মূলত কমিউনিটি সেন্টারের খাবার রান্নার জায়গা। ফুলের দোকানের জন্য ভাড়া দেওয়ার আগে জায়গাটি কাউন্সিলরের মালপত্র রাখার গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৩–এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ওই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল বাকির কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।