রাজধানীতে শ্রমিক নিহতের জেরে সড়ক অবরোধ, যানজটে ভোগান্তি

মিনিট্রাক চাপায় এক নারী পোশাকশ্রমিক নিহতের পর সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়ছবি: সাজিদ হোসেন

রাজধানীর বনানীতে মিনিট্রাকের চাপায় এক নারী পোশাকশ্রমিক নিহতের ঘটনায় আজ সোমবার সকাল থেকে সহকর্মীরা বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এর সঙ্গে দ্রুতগতির উড়ালসড়ক (এক্সপ্রেসওয়ে) হয়ে যান চলাচলও বন্ধ করে দেন তাঁরা। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সড়ক অবরোধে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। এতে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, কর্মস্থলে যাওয়ার সময় আজ পৌনে সাতটার দিকে বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় কলাবাহী একটি মিনিট্রাকের চাপায় মিনারা (১৯) নামের এক পোশাকশ্রমিক নিহত হন। আহত হন সুমাইয়া আক্তার (১৯) নামের আরেক পোশাকশ্রমিক। মিনারা বনানীর মাসুদ অ্যাপারেলস নামের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।

রূপা আক্তার নামের মিনারের এক সহকর্মী বেলা একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার ছয় ঘণ্টা পার হলেও ঘাতক চালককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তাঁর গ্রেপ্তারের দাবি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

ট্রাকচাপায় মিনারা নিহতের ঘটনা জানাজানি হলে সাতটার দিকে বনানী ও আশপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে বনানীসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এ যানজটের প্রভাব রাজধানী অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে।

শ্রমিকদের সড়ক অবরোধে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে
ছবি: প্রথম আলো

তীব্র যানজটে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন কর্মস্থলমুখী মানুষেরা। অবরোধ চলাকালে দেখা যায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় যানবাহন আটকে আছে। এতে যাত্রীরা গন্তব্যে যেতে বিপাকে পড়েন। তাঁদের অনেকে উপায় না পেয়ে হেঁটেই যাত্রা শুরু করেন।

বিমানবন্দর–বনানী রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কগুলোর একটি। বনানীতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধের কারণে বনানী, মহাখালী ও গুলশান এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হলে ধীরে ধীরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এর প্রভাব পড়ে। সড়কে তীব্র যানজটের প্রভাব পড়ে মেট্রোরেলেও।

প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর বেলা দেড়টার দিকে সড়ক ছেড়ে যান শ্রমিকেরা। এর পর থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

যানজটে অসহনীয় ভোগান্তি

বনানী থানার পুলিশ জানায়, সকাল ৬টা ৪১ মিনিটের দিকে মিনিট্রাকের ধাক্কায় পোশাকশ্রমিক নিহত হওয়ার পরপরই এর প্রতিবাদে বনানী ও আশপাশের বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করেন। তাঁরা বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ থেকে মহাখালীর আমতলী পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নেন। এতে দুই পাশের সড়কে শত শত গাড়ি আটকে পড়লে যান চলাচল স্থবির হয়ে যায়।

যানজটে আটকা পড়ে হেঁটে কর্মস্থলের পথে রওনা হন ফররুখ আহমেদ। তিনি গ্রিন রোড এলাকায় অবস্থিত একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। বেলা ১১টার দিকে তিনি বলেন, যান চলাচল একেবারে বন্ধ হতে দেখে তিনি হাঁটা শুরু করেন। বিমানবন্দর থেকে দুই-আড়াই ঘণ্টা হেঁটে মহাখালী পর্যন্ত এসেছেন।

সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন কামরুল হাসান। তাঁর ফ্লাইট ছিল বেলা ২টা ২৫ মিনিটে। যানবাহন না পেয়ে তিনি হেঁটে বিমানবন্দরের দিকে যাওয়ার সময় কথা হয় তাঁর সঙ্গে। কামরুল হাসান বলেন, কুমিল্লা থেকে গাড়িতে তেজগাঁও পর্যন্ত এসেছেন। রাস্তা বন্ধ শুনে হেঁটে রওনা দেন তিনি। কারণ, নির্ধারিত সময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে না পারলে তাঁর যাওয়া হবে না।

শ্রমিকদের সড়ক অবরোধে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়লে অনেককে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়
ছবি: প্রথম আলো

এনা পরিবহন নামে দূরপাল্লার একটি যাত্রীবাহী বাসের চালক হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সিলেট থেকে সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটের দিকে বনানীতে পৌঁছান তিনি। এরপর বাসটি আটকে দেন শ্রমিকেরা। এরপর কয়েক ঘণ্টা একই জায়গায় গাড়ি আটকে আছে। এটা দেখে বাস থেকে সব যাত্রী নেমে গেছেন।

স্কুলবাসের চালক শহিদুল ইসলাম দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, গুলশান থেকে তিনি উত্তরা যাচ্ছিলেন। সকাল ৭টা ২২ মিনিটের দিকে গাড়িসহ আটকে পড়েন তিনি। এর পর থেকে সেখানেই আটকে আছেন।

মামলা হয়নি

সড়কে পোশাকশ্রমিক নিহতের এ ঘটনায় আজ রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত মামলা হয়নি। পুলিশ মিনিট্রাকটি জব্দ করেছে। রাতে চালককে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সরোয়ার বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তেজগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে গাড়িটি জব্দ করা হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. তারেক মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকেরা তিনটি দাবি জানিয়েছিলেন। এর মধ্যে আছে মিনিট্রাক জব্দ ও চালককে আটক, নিহত নারীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং নিরাপদে রাস্তা পারাপার নিশ্চিত করা। দাবি পূরণের আশ্বাসে শ্রমিকেরা বেলা দেড়টার দিকে সড়ক ছেড়ে গেলে যান চলাচল শুরু হয়।

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ক্ষতিপূরণ ও নিরাপদে রাস্তা পারাপার নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করবেন।

বনানী থানার ওসি রাত সাড়ে আটটার দিকে জানান, নিহত পোশাকশ্রমিকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে, তাঁরা মামলা করতে আগ্রহী নন। তবে দুর্ঘটনায় আহত সুমাইয়া এখন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর পরিবার জানিয়েছে, সুমাইয়া সুস্থ হলে মামলা করবে তাঁরা।

এদিকে নারী পোশাশ্রমিককে চাপা দেওয়া মিনিট্রাকটির নিবন্ধন স্থগিত করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। গাড়ির মালিককে প্রয়োজনীয় সব দলিল এবং চালককে তাঁর লাইসেন্সসহ তিন দিনের মধ্যে বিআরটিএতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় পিকআপটির নিবন্ধন নম্বর (ঢাকা মেট্রো-ন-১৪-০৭৬২) স্থায়ীভাবে বাতিল করে মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিআরটিএ।