শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, রাষ্ট্রকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে

‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী শিক্ষাভাবনা—কেমন শিক্ষাব্যবস্থা চাই?’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো

শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারটা বৈপ্লবিক না হয়ে ধীরে, সময় নিয়ে হওয়া উচিত। আর শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে চাইলে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং রাষ্ট্রকেই সেই দায়িত্ব নিতে হবে। সবাইকে শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে।

শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে ‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী শিক্ষাভাবনা—কেমন শিক্ষাব্যবস্থা চাই?’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এ কথাগুলো বলেছেন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) এই সংলাপের আয়োজন করে।

সংলাপে লেখক-অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আমরা যদি শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে চাই, তাহলে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং রাষ্ট্রকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে। শিক্ষা নিয়ে আসল প্রশ্ন হচ্ছে, কত বছর পর্যন্ত শিক্ষাকে আমরা অধিকার বলব, শিক্ষার বিষয়বস্তু কী হবে এবং কোন ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হবে।’

শিক্ষাকে জাতীয়করণ করতে হবে উল্লেখ করে এই অধ্যাপক বলেন, শিক্ষার খরচ, বিষয়বস্তু এবং ভাষা—এই তিনটার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। শিক্ষার সুযোগ সবার থাকতে হবে। শিক্ষক-ছাত্রের অনুপাতকে যৌক্তিক সীমায় নিয়ে আসতে হবে। যথেষ্ট শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, ‘আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বাচ্চাদের বইগুলোতেও রাজনৈতিক গল্প ঢোকানো হয়েছে। প্রতিটি বইয়ের পেছনে রাজনৈতিক বক্তব্য এবং প্রচ্ছদে রাজনৈতিক ছবি। ছোট ছোট বাচ্চাদের বইয়ের রাজনীতি ঢোকানোর ঘটনা পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই।’

সংলাপে লেখক-অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

উন্নয়নের নামে জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করার হিড়িক পড়েছিল ও অযোগ্যদের শিক্ষক বানানো হয়েছে উল্লেখ করে কামরুল হাসান বলেন, ‘সব মিলিয়ে দেশের ১৬১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষক কখনোই ছিল না।...নতুন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, আসন্ন বাজেটে একটা ভালো বরাদ্দ থাকবে। আমি দেখতে চাই, সরকার একটা কার্যকর শিক্ষা কমিশন গড়ে তুলবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার বৈপ্লবিক না করে ধীরে ধীরে হওয়া উচিত। শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার এত তাড়াতাড়ি করা সম্ভব নয়। এ জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদদের নিয়ে কাজ করা দরকার। শিক্ষকদের কাজ চারটা–পাঁচটার চাকরির মতো না, তাঁদের কাজটা ২৪ ঘণ্টার। তাঁদের সেই পরিবেশ দিতে হবে।

লেখক ও গবেষক রাখাল রাহা বলেন, ‘আমি কোনো স্বপ্নের শিক্ষাব্যবস্থা বাংলাদেশে চাই না। স্বপ্নের শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চিত্র বাংলাদেশে বিরাজ করছে না। মৃত শিক্ষাব্যবস্থাকে বাঁচানোর চেষ্টা করাটা আশু কর্তব্য।’

বক্তব্য দিচ্ছেন অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাভিন মুর্শিদ বলেন, ‘আমরা এমন একটা শিক্ষাব্যবস্থা চাই, যেখানে শিক্ষার্থীরা চিন্তা করতে পারবে। জটিল বিষয়ে চিন্তা করতে পারা যেকোনো শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি।’

একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীম জামান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে এখনো কোনো শিক্ষা সংস্কার কমিশন গড়ে ওঠেনি। অবিলম্বে একটা শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা দরকার।

সংলাপটি সঞ্চালনা করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ।