ঢাকায় সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আজ রোববার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এবং চারজন শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নিহত আওয়ামী লীগ নেতার নাম আনোয়ারুল ইসলাম। ষাটোর্ধ্ব এই প্রকৌশলী ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। তাঁর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আনোয়ারুল ইসলাম উত্তরা এলাকায় আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচিতে ছিলেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে বেলা একটার দিকে উত্তরার রাজলক্ষ্মী এলাকার লতিফ এম্পোরিয়াম মার্কেটে আশ্রয় নেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা গিয়ে তাঁর ওপর হামলা করেন। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরে মরদেহ উত্তরা-১৪ নম্বর সেক্টরে নিহতের নিজ বাসায় রাখা হয়েছে।
এদিকে দুপুরে রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম আবদুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩)। তিনি রাজধানীর হাবীবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী।
বিকেল পৌনে চারটার দিকে আবদুল্লাহকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, তাঁকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।
আবদুল্লাহর বন্ধু পরিচয় দিয়ে জহির ইসলাম নামের একজন প্রথম আলোকে জানান, জিগাতলা এলাকায় আবদুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। আবদুল্লাহ পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার এলাকার কলতা বাজারের বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম আবু বকর।
কারওয়ান বাজার এলাকায় সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন রূপ (২৪) নামের বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রমিজের বাড়ি রংপুরে। তাঁর বাবার নাম মো. রাহেল।
সকালে শাহবাগ এলাকায় সেলিম (৪০) নামের এক ব্যক্তি ইটের আঘাতে আহত হন। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে রেজাউল করিম নামের এক কিশোরের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসেন কয়েকজন। সে যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
যাত্রাবাড়ী এলাকায় রিয়াজুল নামের ৩৫ বছরের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। সন্ধ্যার পর ঢাকা মেডিকেলে আনা হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। রাত আটটার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে জুয়েল (২৮) নামের এক যুবকের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসেন কয়েকজন পথচারী। তাঁর বুকের বাঁ পাশে গুলির চিহ্ন রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে। চিকিৎসকেরা তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করার পর মরদেহ নিয়ে যান ওই যুবকেরা।
এ ছাড়া রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া এক কিশোরের লাশ রাতে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। চিকিৎসকেরা মৃত্যু নিশ্চিত করার পর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। ওই কিশোরের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
এর আগে বিকেলে ফার্মগেট এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে আহত হয়ে তাহিদুল ইসলাম (২২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি গত বছর সরকারি কবি নজরুল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টার পাশাপাশি মহাখালীর ডিএইট কনসালট্যান্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, মৃত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাহিদুলের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
বিকেলে গুলিস্তান থেকে জহির উদ্দীন নামের এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লায় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে তাঁর বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
এদিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজনের লাশ নেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতালের পরিচালক শফিউর রহমান জানিয়েছেন। তবে তিনি নিহতের বিস্তারিত পরিচয় জানাতে পারেননি।
এ ছাড়া রাজধানীর শাহবাগ, শনির আখড়া, নয়াবাজার, ধানমন্ডি, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, পল্টন, প্রেসক্লাব এবং মুন্সিগঞ্জ থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শতাধিক ব্যক্তিকে আজ ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়।