ঢাবি প্রক্টরের অপসারণ দাবিতে শিক্ষক নেটওয়ার্কের স্মারকলিপি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীকে প্রক্টরিয়াল দায়িত্বপালনে 'ব্যর্থ' বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। তাঁকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে শিক্ষক নেটওয়ার্ক। আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে সংগঠনটি এসব কথা বলেছে।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের একটি অংশকে নিয়ে গঠিত এই সংগঠন বলছে, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একজন 'নিরপেক্ষ শিক্ষককে' এই পদে নিয়োগ দেওয়া হোক।
শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক গীতি আরা নাসরিন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক সামিনা লুৎফা ও অর্থনীতির শিক্ষক রুশাদ ফরিদী।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই প্রক্টর হিসেবে গোলাম রব্বানীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের সহযোগী হয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
স্মারকলিপিতে প্রক্টরের অপসারণ ছাড়াও আরও তিনটি দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। এগুলো হলো- গত মে ও সেপ্টেম্বরে ছাত্রদলের ওপর এবং চলতি অক্টোবরে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পূর্ণ এবং সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা, ভবিষ্যতে এ ধরনের সহিংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া এবং আবাসিক হলগুলোকে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের দখল থেকে মুক্ত করে শিক্ষকদের দায়িত্বে নিয়ে আসার ব্যবস্থা নেওয়া।
শিক্ষক নেটওয়ার্কের স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গত ছয় মাসে তিনটি বড় সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনাতেই দেখা গেছে বিরোধী মতের ছাত্রসংগঠনগুলোকে লাঠিসোঁটা, লোহার পাইপ, রড ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নির্বিচারে ও নির্মমভাবে পিটিয়েছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। গত মে মাসে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের দুই দফায় পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দোষী ছাত্রদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা তো নেয়ইনি, উল্টো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা এক মামলায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটির নেতারা ফুল ও মিষ্টি নিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর আপনার (উপাচার্য) সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেন। আসার পথে নীলক্ষেতের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে তাঁদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ছাত্রলীগ। যথারীতি এ ঘটনাতেও এখনো পর্যন্ত দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ গত ৭ অক্টোবর বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে ছাত্র অধিকার পরিষদ আয়োজিত স্মরণসভায় নির্মম হামলা করে ছাত্রলীগ। হামলায় আহত ছাত্ররা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে গেলে সেখানেও পুলিশের উপস্থিতিতেই তাঁদের মারধর করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পুলিশ এরপর অবিশ্বাস্যভাবে ছাত্র অধিকার পরিষদেরই প্রায় ২০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় আর ছাত্রলীগই আবার ছাত্র অধিকার পরিষদের ২৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে। কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ নিপীড়নমূলক ঘটনার বিচার বা দোষীদের শাস্তির বিষয়ে আপনার (উপাচার্য) অধীনস্থ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ এখনো আমাদের নজরে আসেনি।’
স্মারকলিপিতে শিক্ষক নেটওয়ার্ক আরও বলেছে, ‘শুধু প্রক্টর নন, বর্তমানের সব ঘটনা পরম্পরা দেখে মনে হচ্ছে যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থাই এখন আর নেই। এখানে নামমাত্র আছেন উপাচার্য, প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টর। মূল দায়িত্বে আছে ছাত্রলীগ।’
ছাত্রলীগের ইচ্ছা মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো চলছে উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, সেখানে ছাত্রদের নামে সন্ত্রাসীদের লালন-পালন করা হচ্ছে এবং যখন প্রয়োজন তখন এই সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে বিরোধী মতের শিক্ষার্থীদের দমন করা হচ্ছে। কিছু কিছু হলের প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা শিক্ষকেরা হয় এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন অথবা সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছেন।
চার দফা দাবির বিষয়ে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে স্মারকলিপিতে আশা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এরপর প্রশাসনের উদ্যোগ পর্যালোচনা করে শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।