শফিকুল ইসলাম ওরফে শাহীন পেশায় ওষুধ ব্যবসায়ী। রাজধানীর জুরাইনে তাঁর ফার্মেসি রয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তিনি দোকানে ছিলেন। পরে তাঁকে কদমতলী থানায় যেতে বলা হয়। তিনি রাতেই থানায় গেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ—এমনটাই অভিযোগ করেন শফিকুলের স্ত্রী মাহফুজা আক্তার।
মাহফুজা আক্তার আদালত প্রাঙ্গণে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী এখন কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। অনেক আগে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। হঠাৎ করেই আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। খবর পেয়ে আমি আত্মীয়স্বজনসহ থানায় যাই।’
আজ বৃহস্পতিবার শফিকুলকে কদমতলী থানার পুরোনো একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়েছে।
কেবল মাহফুজা আক্তার নন, আরও অনেক গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপির নেতা–কর্মীদের আত্মীয়স্বজন সকাল থেকেই ঢাকার সিএমএম আদালতের সামনে ভিড় করতে শুরু করেন। দুপুর ১২টার পর থেকে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা–পুলিশ প্রিজন ভ্যানে করে বিএনপির নেতা–কর্মীদের আদালতের হাজতখানায় আনতে শুরু করে। আদালতের ফটকে প্রিয়জন ভ্যান প্রবেশের পর বিএনপির নেত–কর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা স্বজনেরা প্রিজন ভ্যানের ফাঁক গলে স্বজনকে দেখে চিৎকার করে ডাকতে থাকেন।
ষাটোর্ধ্ব বিএনপি নেতা ইউসুফ আলী ভূঁইয়াকে তুরাগ থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই খবর শোনার পর তাঁর বড় ভাই মো. বিল্লাল হোসেন আজ দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার সিএমএম আদালতের সামনে হাজির হন।
বিল্লাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বড় ভাই নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গতকাল বেলা দুইটার পর তাঁকে তুরাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
মোহাম্মদপুর থেকে জামাল নামের এক বিএনপি নেতাকে গ্রেপ্তার করে আজ ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়েছে। জামালের ভাই সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘হঠাৎ করেই পুলিশ আমার ভাইকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে গেছে। এখন আদালতে আনা হয়েছে।’
বুধবার দুপুর থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত গ্রেপ্তার অন্তত ২০ নেতা–কর্মীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। এই স্বজনদের দাবি, পুলিশ হঠাৎ করেই বাসা এবং বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে। এলাকায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কোন থানায় কত গ্রেপ্তার
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বেলা আড়াইটা পর্যন্ত অন্তত ২৩০ জন বিএনপি নেতা–কর্মীকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দারুস সালাম থানা ৫৭ জনকে, কাফরুল থানা ৩৯ জনকে আর পল্লবী থানা ৩২ জন, ডেমরা থানা ৮ জন, যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ ৫ জনকে নিয়ে আসে। গত মে মাসে করা নাশকতার মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এ ছাড়া কদমতলী থানা–পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তিনজন নেতা–কর্মীকে। তুরাগ থানা গ্রেপ্তার করেছে নয়জনকে, রামপুরা থানা দুজনকে আর সবুজবাগ থানার পুলিশ বিএনপি একজনকে।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও বলছে, গুলশান থানা পুলিশ ও বনানী থানা–পুলিশ বিএনপির ১২ জন করে ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। কোতোয়ালি থানা–পুলিশ ১৭ জনকে, লালবাগ ৯ জনকে, ধানমন্ডি ৫ জনকে এবং উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ ২ জন বিএনপি নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
এর আগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নাশকতার নতুন ও পুরোনো মামলায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৭৮ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাঁদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
যাঁদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা, তাঁরাই গ্রেপ্তার হচ্ছেন
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে হঠাৎ করে পুরোনো ও নতুন গায়েবি মামলায় মহানগর পুলিশ তাঁদের অনেক নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। আমাদের কাছে খবর আসছে, ঢাকা মহানগর পুলিশ দলের নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে।’
তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নাশকতায় জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, যাঁদের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে, কেবল তাঁদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। নিরীহ কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।