২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সাড়ে ৩ বছরেও অগ্রগতি নেই চার বছরের প্রকল্পের

ঝিলমিল রেসিডেনসিয়াল পার্কে চার বছরের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৪ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের কথা ছিল।

এত দিনে বহুতল ভবন তৈরি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে এখন ঝোপঝাড় হয়ে আছে। কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল রেসিডেনসিয়াল পার্ক এলাকায়। সম্প্রতি তোলা ছবিপ্রথম আলো

ঢাকার ওপর জনসংখ্যার চাপ কমাতে কেরানীগঞ্জে প্রায় ১৪ হাজার ফ্ল্যাট তৈরির কথা ছিল চার বছরে। কিন্তু গত সাড়ে তিন বছরে ওই প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্যের কোঠায়। সেখানে এখন পর্যন্ত একটি ফ্ল্যাটও নির্মিত হয়নি। প্রকল্প এলাকাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত হচ্ছে।

ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে ‘ঝিলমিল রেসিডেনসিয়াল পার্ক’ নামে ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে নেওয়া এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চার বছর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে মালয়েশিয়ার বিএনজি গ্লোবাল হোল্ডিংস অ্যান্ড কনসোর্টিয়াম নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়। বিএনজিকে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে সাইট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ শুরু হয়নি।

রাজউক জানায়, ১৩ হাজার ৭২০টি ফ্ল্যাট নির্মাণে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের পুরো টাকাই বিনিয়োগ করবে বিএনজি। প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগের এই টাকা জোগাড় করতে বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। বিনিয়োগের টাকা রাজউক পরে কিস্তিতে পরিশোধ করবে।

নির্মাণকাজ শেষ হলে এটি হবে দেশের অন্যতম প্রধান বহুতল ভবনবিশিষ্ট আবাসন। রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার কারণে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে বিএনজির প্রতিনিধিরা দেশে আসতে পারেন। তখন তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে সময়সীমা ঠিক করা হবে।

প্রকল্পের ভবনগুলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিল্ডিং সিস্টেমে তথা আইবিএস পদ্ধতিতে নির্মিত হবে। এর মানে ভবনগুলোতে খুঁটি বা কলাম থাকবে না। ভবনের প্রতিটি দেয়ালই খুঁটির কাজ করবে। এ জন্য প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য সামগ্রী আমদানি করতে হবে। যার আমদানি শুল্ক অত্যন্ত বেশি। প্রকল্পের দায়িত্ব পাওয়ার পর আমদানি শুল্ক মওকুফ করতে রাজস্ব বোর্ডে আবেদন করা হয়েছে। রাজস্ব বোর্ড এখনো শুল্ক মওকুফের বিষয়টির অনুমোদন দেয়নি। যথাসময়ে কাজ না হওয়ার এটা অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন রাজউকের পদস্থ কর্মকর্তারা।

রাজউকের একাধিক প্রকৌশলী প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়ায় প্রকল্প নিয়ে নতুন করে পর্যালোচনা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে এক সভায় সেখানে প্রকল্প করার বাস্তবতা এখন আছে কি না এবং এই প্রকল্প নিয়ে মানুষের আগ্রহ কেমন ইত্যাদি বিষয় নতুন করে পর্যালোচনা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, ১৬০ একর জমিতে নেওয়া এই প্রকল্পের মাত্র ৩৩ শতাংশ ভূমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। বাকি ৭৭ শতাংশ জায়গা উন্মুক্ত থাকবে। প্রকল্পের মাধ্যমে ১৪০০ বর্গফুটের ৯ হাজার ১২০টি, ১৬০০ বর্গফুটের ২ হাজার ৫৭৬টি, ২২০০ বর্গফুটের ২ হাজার ২৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে।

এসব ফ্ল্যাট নির্মাণে সেখানে ৮৫টি বহুতল ভবন নির্মিত হবে। এর মধ্যে সেমি বেসমেন্টসহ ২০তলা ভবন হবে ৬০টি এবং সেমি বেসমেন্টসহ ২৫তলা ভবন হবে ২৫টি। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মার্কেট, লেক, পার্ক, খেলার মাঠ ও কমিউনিটি স্পেস নির্মাণ করা হবে। সেখানে ৩৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের একটি দোতলা মসজিদ নির্মাণ করা হবে। ১২ একর জায়গায় লেকের উন্নয়ন করা হবে। এ ছাড়া ১টি পার্ক ও ২টি খেলার মাঠসহ ৩৯ দশমিক ৫৫ একর জমিতে সবুজ চত্বর তৈরি করা হবে।

প্রতিটি ফ্ল্যাটের নির্মাণ ব্যয় কত হবে এবং কত টাকায় তা বিক্রি হবে—এ বিষয়টি এখনো ঠিক হয়নি বলে জানিয়েছেন পাঁচ মাস আগে প্রকল্পের পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়া রাজউকের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মো. ওয়াহিদ সাদিক। বছর বছর নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়লেও প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে না বলে জানিয়েছেন রাজউকের এই প্রকৌশলী।

কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানা-পুলিশ জানায়, গত বছর প্রকল্প এলাকায় একটি দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে নানা অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এ জন্য সেখানে যেতে হলে সঙ্গে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, আগে থেকেই সতর্ক থাকলে দুর্ঘটনা না–ও ঘটতে পারে।

এদিকে করোনার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে জানিয়ে রাজউক চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুতই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনি থানাকে জানিয়েছেন।