বিদেশি কর্মজীবীদের জন্য ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় ৪০তম ঢাকা
বিদেশি কর্মজীবীদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির চেয়ে ঢাকায় জীবনযাপনে বেশি ব্যয় হয়। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিখ্যাত মুম্বাই শহরে থাকতে গেলেও বিদেশি কর্মজীবীদের ঢাকার চেয়ে খরচ কম হয়। নিউইয়র্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মার্সার চলতি বছরের ‘কস্ট অব লিভিং’ জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এ জরিপে বলা হয়েছে, বিদেশি কর্মজীবীদের জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাদ। আর সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল শহর কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেক।
গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ব্যয়বহুল ২০৯টি শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ৪০। গত বছরের একই জরিপে ঢাকার অবস্থান ছিল ২৬ নম্বরে। অর্থাৎ এই এক বছরের ব্যবধানে ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে ১৪ ধাপ। সেই হিসাবে অবশ্য গতবারের তুলনায় বর্তমানে ঢাকায় জীবনযাত্রার খরচ কিছুটা কমেছে। থাকা, খাওয়া ও যাতায়াতের খরচ বিবেচনায় নিয়ে ব্যয়বহুল শহরের বার্ষিক এ তালিকা করেছে মার্সার।
এবারের তালিকায় এক ধাপ এগিয়ে শীর্ষে উঠেছে আশখাবাদ। শীর্ষ অবস্থান হারিয়ে ২ নম্বরে চলে গেছে হংকং। আর ৪২ ধাপ এগিয়ে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে লেবাননের রাজধানী বৈরুত। সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০টি শহরের তালিকায় বাকি নামগুলো যথাক্রমে জাপানের টোকিও, সুইজারল্যান্ডের জুরিখ, চীনের সাংহাই, সিঙ্গাপুর সিটি, সুইজারল্যান্ডের জেনেভা, চীনের বেইজিং ও সুইজারল্যান্ডের বের্ন। অন্যদিকে কম ব্যয়বহুল শহরগুলোর মধ্যে বিশকেকের পরেই রয়েছে যথাক্রমে জাম্বিয়ার লুসাকা, জর্জিয়ার তিবলিস, তিউনিসিয়ার তিউনিস ও ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়ার নাম।
তালিকা অনুযায়ী, বিদেশি কর্মজীবীদের জীবনযাপনে ঢাকার চেয়েও কম ব্যয় হয় দুবাইয়ে। শহরটির অবস্থান ঢাকার চেয়ে দুই ধাপ পরে, ৪২ নম্বরে। ঢাকার চেয়ে কম ব্যয়ের শহরের মধ্যে রয়েছে ব্যাংকক (৪৬তম), ওয়াশিংটন ডিসি (৫১তম), মিউনিখ (৫২তম), মেলবোর্ন (৫৯তম), বার্লিন (৬০তম), মস্কো (৬২তম), স্টকহোম (৭২তম), মুম্বাই (৭৮তম), জেদ্দা (৯৪তম), দিল্লি (১১৭তম), দোহা (১৩০তম), কুয়ালালামপুর (১৫২তম), বেঙ্গালুরু (১৭০তম), ইস্তাম্বুল (১৭৩তম), কলকাতা (১৮১তম), কলম্বো (১৮৫তম), ইসলামাবাদ (১৯৯তম) ও করাচি (২০১তম)।
এদিকে চলতি বছর বিশ্বের বসবাসযোগ্য শহরের তালিকায় তলানিতে দেখা গেছে ঢাকার নাম। প্রতিবছর বসবাসযোগ্য শহরের তালিকা প্রকাশ করে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)। চলতি বছরের তালিকায় ১৪০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৩৭ নম্বরে। অর্থাৎ বসবাসের অযোগ্য হিসেবে ঢাকা বিশ্বের শীর্ষ শহর। ঢাকার ওপরে থাকা তিনটি শহর পাপুয়া নিউগিনির পোর্ট মোরেসবি (১৩৮তম), নাইজেরিয়ার লাগোস (১৩৯তম) ও সিরিয়ার দামেস্ক (১৪০তম)। আর তালিকায় বসবাসযোগ্য শহর হিসেবে শীর্ষে রয়েছে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড।
ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে দেশের ভেতরেও পর্যবেক্ষণ আছে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, টানা তিন বছর ধরে ঢাকায় টিকে থাকতে বেশি বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। এর মধ্যে ২০২০ সালে ব্যয় বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। গত ১৬ জুন ‘জীবনযাত্রার ব্যয় ও ভোক্তা স্বার্থসংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয়ে প্রতিবেদন-২০২০’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ক্যাব। এতে বলা হয়েছে, গত বছর ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং সেবা-সার্ভিসের দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। ২০১৯ সালে এটি ছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ ও ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এর আগের বছর তা ছিল ৬ শতাংশ ও ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ।