ধর্ষকের বিচার দাবিতে আবার রাস্তায় শিক্ষার্থীরা
নোয়াখালী, সিলেটের এমসি কলেজসহ দেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের বিচার দাবিতে রাজধানীর উত্তরায় আবার রাস্তায় নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। তিন দিনের জন্য বিক্ষোভ স্থগিতের পর সাত দফা দাবি নিয়ে তাঁরা আবার নামেন। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনে মানববন্ধন-বিক্ষোভে তাঁরা ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি ও সাত দফা বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বর্তমান সমাজব্যবস্থায় ধর্ষণ মারাত্মক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে ধর্ষণ ও নিপীড়নের মতো ঘটনা। ক্ষমতার অপব্যবহার বা আইনের ফাঁক গলে এসব অপরাধ থেকে পার পেয়ে যাচ্ছেন অনেকে। তাই এর প্রতিকার হিসেবে ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি ও ধর্ষণ রোধে সাত দফা দাবি উত্থাপন করেছেন তাঁরা। কিন্তু দাবিগুলো উত্থাপনের তিন দিন পার হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সেভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে আবার রাস্তায় নেমেছেন তাঁরা।
ধর্ষণবিরোধী এ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি কার্যকরের ব্যাপারে সরকার থেকে কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ধর্ষণ রোধে আমরা আরও যে ছয় দাবি উত্থাপন করেছি, সে ব্যাপারে কোনো কথা হচ্ছে না, কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।’ দাবিগুলোর ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আবার রাস্তায় নেমেছেন তাঁরা। তাতেও কাজ না হলে আগামীকাল সোমবার থেকে আবার লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
গত রোববার থেকে উত্তরায় মানববন্ধন-বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বুধবার সাত দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবি বাস্তবায়নে তিন দিনের সময় বেঁধে দেন। দাবিগুলো বাস্তবায়নে কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় আবার রাস্তায় নামেন তাঁরা।
শিক্ষার্থীদের দেওয়া দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও সর্বনিম্ন শাস্তি যাবজ্জীবন নিশ্চিত করা; ধর্ষণের মামলায় লিঙ্গভেদে নারী–পুরুষ কর্মকর্তা নিয়োগ করা; সালিসি পদ্ধতিতে ধর্ষণের বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ করা ও বাদীর নিরাপত্তা-চিকিৎসা নিশ্চিত করা; আগের সব মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা; ইভ টিজিং, সাইবার বুলিংসহ সব যৌন নির্যাতন বন্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন শিক্ষা ও আত্মরক্ষামূলক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে; দলীয় বা প্রশাসনের কেউ ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে এবং মিথ্যা মামলার মাধ্যমে নারী, শিশু বা কাউকে হয়রানি করা হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোপরি দাবিগুলো নিশ্চিতকরণে সরকারকে লিখিত দিতে হবে এবং এ ব্যাপারে কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশকে রাখতে হবে।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টার দিকে বিএনএস সেন্টারের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ব্যানারসহ ধর্ষণবিরোধী নানা লেখা নিয়ে রাস্তায় অবস্থান নেন। মানবন্ধন করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা ধর্ষকের বিচার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে লেখা রয়েছে ‘ধর্ষণমুক্ত দেশ চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘নারী কোনো পণ্য নয়, নারী কোনো ভোগ্য নয়’ প্রভৃতি। শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন, ‘মানুষ তুমি চুপ কেন?’, ‘আমার সোনার বাংলায় ধর্ষকের ঠাঁই নাই’ প্রভৃতি।