পুলিশের অভিযান টের পেয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে গেলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ

পুলিশের অভিযান টের পেয়ে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যাওয়া সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনছবি: সংগৃহীত

পুলিশের অভিযান টের পেয়ে গুলি ছুড়ে পালিয়ে গেছেন চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন। গতকাল বুধবার রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন এলাকায় সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালায় পুলিশ। সাজ্জাদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন দুজন। বর্তমানে তাঁরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জোড়া খুনসহ ১০ মামলার আসামি সাজ্জাদ হোসেনকে পুলিশ গতকাল রাতে অক্সিজেন এলাকা একটি বাসায় অভিযানে যায়। তবে টের পেয়ে সাজ্জাদ গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান। তাঁর ছোড়া গুলিতে স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ জাবেদ ও সিটি ব্যাংকের একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী কাজল কান্তি দে গুলিবিদ্ধ হন। গোলাগুলির ঘটনার পর পুলিশের সোয়াট দল আসে ঘটনাস্থলে। কিন্তু সাজ্জাদকে পাওয়া যায়নি। পরে ওই বাসা থেকে সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না বেগম, দুই যুবকসহ তিনজনকে আটক করা হয়।

জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) রইছ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ধরতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আসছে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে, অক্সিজেন এলাকার একটি বাসায় অবস্থান করছেন তিনি। তাঁকে ধরতে পুলিশ অভিযানে গেলে তিনি গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান। তাঁর ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন দুজন।

জোড়া খুনসহ ১০টি মামলা রয়েছে সন্ত্রাসী সাজ্জাদের বিরুদ্ধে। গতকাল পুলিশের অভিযান ফসকে পালিয়ে যান তিনি। পালানোর সময় তাঁর ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন দুজন। তাঁরা হলেন স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ জাবেদ ও সিটি ব্যাংকের একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী কাজল কান্তি দে।

এদিকে সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ধরা না পড়ায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও হাটহাজারী থানার প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা আতঙ্কে রয়েছেন। এলাকায় তাঁর চাঁদা দাবির বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে। মূলত নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তোলেন এই সন্ত্রাসী।

সাজ্জাদ হোসেন বিদেশে পলাতক ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনের অনুসারী। অপরাধজগতে পা রেখে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সাজ্জাদ। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। গত ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। বায়েজিদ বোস্তামী থানা-সংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে তিনি।

চাঁদা না পেলেই গুলি

নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন অনন্যা, শীতলঝর্ণা, কালারপুল, বায়েজিদ থানার সীমান্তবর্তী হাটহাজারীর কুয়াইশ, নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল ও পাঁচলাইশ এলাকায় ১৫ থেকে ২০ জনের বাহিনী নিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালান সাজ্জাদ।

পুলিশ ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদা না পেলেই সাজ্জাদ গুলি করেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ কালারপুল এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদা না পেয়ে তিনি গুলি করেন। ৬০ জন ব্যক্তি মিলে ভবনটি নির্মাণ করছেন। স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, ভবনমালিকদের সাজ্জাদকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হয়েছে।

প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে চাঁদা নিতে আসেন সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে চট্টগ্রামের কালারপুল এলাকায়
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে

এর আগে গত ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসা লক্ষ করে গুলি করেন সাজ্জাদ ও তাঁর সহযোগীরা। এ ঘটনার ভুক্তভোগী মো. ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকায় এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়ার প্রতিবাদ করায় সাজ্জাদ আমার বাড়ি লক্ষ করে কয়েক রাউন্ড গুলি করেন।’ এ ঘটনায় ইকবাল বাদী হয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মামলা করেন।

চাঁদা না পেয়ে গত বছরের ২৭ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকায় মো. হাছান নামের এক ঠিকাদারের বাসা লক্ষ করেও গুলি করেন সাজ্জাদ। এ ঘটনায় হাছান বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় মামলা করেছেন।

বালু ব্যবসায়ী ও জোড়া খুনের আসামি

গত ২১ অক্টোবর নগরের চান্দগাঁওয়ের শমসেরপাড়া এলাকায় আফতাব উদ্দিন নামের এক বালু ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। পুলিশ ও নিহতের পরিবার বলছে, সাজ্জাদ এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের করা মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে।

এর আগে গত ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অনন্যা আবাসিক ও বায়েজিদ সীমানা-সংলগ্ন কুয়াইশ এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয় মো. আনিস ও মাসুদ কায়সার নামের দুই যুবককে। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয় বায়েজিদ ও হাটহাজারী থানায়। পুলিশ বলছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। দুটিতে সাজ্জাদ ও তাঁর সহযোগীদের আসামি করা হয়। আসামিরা ধরা না পড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানান নিহত মাসুদ কায়সারের ভাই মো. আরিফ।

আরও পড়ুন