দেশে আগ্রহ কক্সবাজার, সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম আর বিদেশে ভারত, থাইল্যান্ড, নেপাল

এবারের ঈদে ভ্রমণপিপাসুদের আগ্রহের শীর্ষে কক্সবাজার
ছবি: সংগৃহীত

ঈদের উৎসব মানেই নিত্যদিনের কাজ থেকে ছুটি। আর এই ছুটি কাটাতে শহরের একটি বড় অংশের মানুষ ছুটে যান গ্রামের বাড়ি। পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপনের রেওয়াজ পুরোনো। তবে এর সঙ্গে ঈদের ছুটিতে পর্যটন এলাকায় বেড়াতে যাওয়ার আগ্রহ বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বেড়াতে যান অনেকে। তবে পর্যটক ও ভ্রমণ-সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বলছে, মূল্যস্ফীতির কারণে এবার বিদেশে বেড়ানোর প্রবণতা কিছুটা কম।

পরিবার নিয়ে ভারতে বেড়াতে যাচ্ছেন পর্বতারোহী শায়লা বীথি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের ছুটিটা বেড়ানোর জন্য ভালো। প্রতিবার নতুন জায়গায় যেতে চান। তবে এবার খরচের চাপ সামলে বেড়াতে যাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। উড়োজাহাজের টিকিটের দাম চড়া। তাই প্রতিবেশী দেশ ভারতের সিকিম যাচ্ছেন। খরচ কমাতে উড়োজাহাজ এড়িয়ে সড়কপথে লম্বা রাস্তা পাড়ি দিতে হচ্ছে।

এবার ঈদের ছুটিতে পর্যটকের চাপ কম। কম খরচে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু উড়োজাহাজের টিকিটের দামের কারণে তা করা যাচ্ছে না। বিদেশে ভ্রমণের হার আগের চেয়ে কমে গেছে। সব মিলে ৩০ লাখের বেশি পর্যটক দেশে-বিদেশে বেড়াতে যেতে পারেন।
তৌফিক রহমান, প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব

আবার খরচের হিসাব মেলাতে না পেরে শেষ মুহূর্তে বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাদ দিয়েছেন বেসরকারি একটি সংস্থার কর্মকর্তা রামিমুল হাসান। তিনি বলেন, ঈদের ছুটি একটা বড় উপলক্ষ। অন্য সময় এমন ছুটি পাওয়া যায় না। এবার সব পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেও বাদ দিতে হয়েছে উড়োজাহাজের চড়া ভাড়ার জন্য। এখন দেশের মধ্যে কোথাও যাওয়ার কথা ভাবছেন।

রাঙামাটিতে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ ঝুলন্ত সেতু
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সূত্র বলছে, এবার বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা আগের বছরের চেয়ে কম। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেড়ানোর বুকিং হয়েছে। মূলত ঈদের পরদিন থেকে এসব ভ্রমণ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ট্যুর অপারেটররা। সব মিলে দেশের বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্যে ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ বেড়াতে যেতে পারে বলে আশা করছে তারা। আর দেশের বাইরে বেড়াতে যেতে পারে ৮ থেকে ১০ লাখ মানুষ।

উড়োজাহাজ টিকিট ব্যবসার সঙ্গে ২০ বছর ধরে যুক্ত আছেন এক্সপেরিয়র হলিডেজের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ ইমরান আলী। তিনি বলেন, টিকিট-বাণিজ্যের একটা চক্র গড়ে উঠেছে দেশে। তারা বেশির ভাগ টিকিট আগে থেকে বুকিং করে রাখে। তাই সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা কম টিকিটের বিপরীতে বাড়তি চাহিদার জন্য দাম বেড়ে যায়। বেড়াতে যাওয়ার খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে উড়োজাহাজের ভাড়া।

ঈদের ছুটিটা বেড়ানোর জন্য ভালো। এবার খরচের চাপ সামলে বেড়াতে যাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। উড়োজাহাজের টিকিটের দাম চড়া। তাই ভারতের সিকিম যাচ্ছি। খরচ কমাতে উড়োজাহাজ এড়িয়ে সড়কপথে লম্বা রাস্তা পাড়ি দিতে হচ্ছে
শায়লা বীথি, পর্বতারোহী

টোয়াব সদস্যরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির জন্য মানুষ চাপে আছে। ট্রাভেল এজেন্সিগুলোতে ভ্রমণের ব্যাপারে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা কমছে। তবু যাঁরা আসছেন, তাঁরা কম টাকার প্যাকেজ চাচ্ছেন। কিন্তু উড়োজাহাজ টিকিটের চড়া দামের জন্য তা দেওয়া যাচ্ছে না। একটি ফ্লাইটের শিডিউল ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যেই টিকিট শেষ হয়ে যায়।

সিন্ডিকেট করে এসব টিকিট দখল করে রাখা হয় বলে অভিযোগ আছে। ডলারের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণেও বিদেশে ট্যুর কাটছাঁট করছেন কেউ কেউ। বিদেশে ভ্রমণ-ইচ্ছুকেরা সাধারণত খোলাবাজার থেকে ডলার কেনেন। এখন খোলাবাজারে ১ ডলার কিনতে হয় ১১১ থেকে ১১২ টাকায়।

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সিজ অব বাংলাদেশের (আটাব) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাযহারুল এইচ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা অত ভালো নয়। তাই বিদেশে যাওয়ার উড়োজাহাজের টিকিটের ওপর চাপ কম। কিন্তু ভাড়া কমছে না।

দেশের মধ্যে পর্যটনে এগিয়ে কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট। এর বাইরে নতুন নতুন কিছু এলাকাতেও আগ্রহ বাড়ছে। কুয়াকাটা, সুনামগঞ্জেও যাচ্ছেন অনেকে। এসব এলাকায় যাঁরা ভ্রমণ প্যাকেজ দিচ্ছেন, তাঁরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। অধিকাংশ রিসোর্ট শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে।

হোটেল-রিসোর্টগুলো বিভিন্ন ছাড় দিয়েছে। ছোটখাটো হোটেল-রিসোর্ট থেকে শুরু করে পাঁচ তারকা হোটেলেও বিভিন্ন ছাড় চলছে। তবে করোনা মহামারির আগে ঈদের ছুটিতে যতটা চাপ ছিল, এখনো সেই অবস্থা ফেরেনি বলে মনে করছেন এ খাতের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজারে আছে সাড়ে পাঁচ শর বেশি হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট। এসব হোটেলের ধারণক্ষমতা দুই লাখের বেশি। স্থানীয় হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস মালিক সমিতি বলছে, ঈদের পরের ১০ দিনে ১০ লাখের বেশি পর্যটক বেড়াতে আসতে পারেন। ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে কোনো রুম ফাঁকা নেই। বিভিন্ন এলাকায় আগ্রহ দেখা যাচ্ছে পর্যটকদের। তবে গরমের কারণে উত্তরবঙ্গ ও সুন্দরবনে এবার পর্যটকদের আগ্রহ কম।

সরকারি ঘোষণা অনুসারে, ঈদের ছুটি এবার শুরু হয়ে গেছে দুই দিন আগে। এতে করে বাড়তি ছুটির সুবিধা উপভোগ করতে দেশের বাইরেও বেড়াতে যাচ্ছেন অনেকে। ভারতের কাশ্মীর, সিকিমের মতো বরফশীতল জায়গাগুলোতে আগ্রহ বেশি। থাইল্যান্ডের বিভিন্ন দ্বীপের প্যাকেজ নিচ্ছেন পর্যটকেরা। নেপালেও যাচ্ছেন কেউ কেউ। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ে আগের মতো চাপ নেই। তবে এসব গন্তব্যেও যাচ্ছেন পর্যটকেরা। ঈদের ছুটির সময়ে বেশির ভাগ উড়োজাহাজের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।

প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব তৌফিক রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এবার ঈদের ছুটিতে পর্যটকের চাপ কম। মানুষ রয়েসয়ে বেড়াতে যাচ্ছেন। কম খরচে যেতে চাচ্ছেন। কিন্তু উড়োজাহাজের টিকিটের দামের কারণে তা করা যাচ্ছে না। বিদেশে ভ্রমণের হার আগের চেয়ে কমে গেছে। ঈদপরবর্তী এক সপ্তাহকে ঈদ ভ্রমণের প্যাকেজের মধ্যে ধরা হয়। এতে সব মিলে ৩০ লাখের বেশি পর্যটক দেশে-বিদেশে বেড়াতে যেতে পারেন।