বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং সুশাসন ও জবাবদিহির অভাবে একের পর পর অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানি ঘটে চলেছে বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, একটি ঘটনা ঘটার পর বিচ্যুতিগুলো চিহ্নিত হয়, কমিটি গঠন ও বিভিন্ন সুপারিশ দেওয়া হয়। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা শাস্তি পাচ্ছেন না। অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে ২২টি আইন ও হাইকোর্টের ১টি নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
আগুনে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে ভবনের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে দেখভালকারী সরকারি সংস্থাগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনা, জমির মালিকসহ বিভিন্ন সংস্থার কার কী গাফিলতি ও অবহেলা ছিল, তা চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, জলাধার বাড়ানো এবং দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছেন কামাল উদ্দিন আহমেদ।
আজ রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ে ‘অগ্নিদুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি: প্রাণহানির শেষ কোথায়’ শিরোনামের সংবাদ সম্মেলনে কামাল উদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, রুলস অব বিজনেসে আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের কথা বলা আছে। সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নোটিশ দিচ্ছে। কিন্তু শুধু নোটিশ দিয়ে ক্ষান্ত হলেই চলবে না, এ ধরনের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ জরিমানার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। ঘটনা ঘটার পর বিভিন্ন মহলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে সব স্তিমিত হয়ে যায়। মামলাগুলোও আর চলমান থাকে না। এটি খুবই কষ্টকর। এসব ঘটনায় দায়ী প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, ভবনমালিকসহ দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করা হলে অগ্নিকাণ্ড ও মৃত্যুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে।
ভয়াবহ আগুনের ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া যায় কি না, সে প্রশ্নও তোলেন কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সরকারি নিয়ন্ত্রণ সংস্থার উদাসীনতা, ‘ম্যানেজড’ হওয়ার প্রবণতাও প্রতীয়মান হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্বহীনতায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মামলা হয়নি। আবার দু-একটি ক্ষেত্রে মামলা হলেও সাজার কোনো নজির নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ীদের চিহ্নিত করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির বিভিন্ন ঘটনায় আসল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার না করে অন্যদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘সবাই মিলে খেতে যাবে, সে অবস্থাও থাকছে না। অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা কতটুকু আছে? রেস্তোরাঁয় খেতে যাব, আমার নিরাপত্তার বিষয়টি আমি দেখব, না যাদের বিষয়টি তত্ত্বাবধান করার কথা, তারা দেখবে? ভবনের নিরাপত্তা আছে কি না, তা দেখা আমার-আপনার দায়িত্ব না।’
বিভিন্ন সময় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর অগ্নিদুর্ঘটনা ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকাসহ যেসব পরিসংখ্যান দিয়েছে, তা তুলে ধরেন কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, নিমতলী থেকে গুদাম সরেনি। আবাসিক ভবনেও রেস্তোরাঁর ব্যবসা করছেন অনেকে। এগুলো কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে হবে।
অগ্নিনিরাপত্তায় করণীয় নিয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে আয়োজিত কর্মশালা, সমীক্ষাসহ নানা কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা দুঃখিত, বারবার একই ঘটনা ঘটছে।’ প্রয়োজনে কমিশন মামলা করতে পারে, কিন্তু কমিশন কত মামলা করবে, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা, সচিব সেবাষ্টিন রেমা, সদস্য ড. তানিয়া হক, সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম, পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আরফান আশিক, উপপরিচালক এম রবিউল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।