স্বাধীনতার পর অনেক অর্জনের মধ্যেও নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন ও জঙ্গিবাদের মতো ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন নিয়ে এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করলেও স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও সেই স্বপ্ন এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।
বুধবার ‘আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস’ উপলক্ষে দি হাঙ্গার প্রজেক্টের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনলাইন আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। তাঁরা বলেন, সাংবিধানিক আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশে এখনো একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গড়ে ওঠেনি।
সহিংসতা পরিহার ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার আহ্বানে দি হাঙ্গার প্রজেক্টের অনুপ্রেরণায় গঠিত প্ল্যাটফর্ম পিস ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপ (পিএফজি), সুজন, ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গারসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের নেতারা এই অনলাইন সভায় যুক্ত হন।
সুজন সম্পাদক ও দি হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা ভিন্ন ধর্ম কিংবা ভিন্নমতাদর্শের হতে পারি, কিন্তু আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য। ১৯৭১ সালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠা, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে এবং দেশে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গতিশীল করতে ও সামাজিক ন্যায়বিচারকে প্রতিষ্ঠিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান জরুরি। সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতির কোনো বিকল্প নেই। সমাজের মধ্যে যদি শান্তি, সম্প্রীতি ও অহিংস মূল্যবোধের চর্চা ঘটানো সম্ভব না হয়, তাহলে আগামী দিনের বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি মুখ থুবড়ে পড়বে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংঘাতের রাজনীতি পরিত্যাগ করে অহিংস আন্দোলনকে বুকে ধারণ করে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একই সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে।
জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ২০০৭ সালে বিশ্বে শান্তি, সহিষ্ণুতা, সহানুভূতিশীলতা ও অহিংসার সংস্কৃতি সুরক্ষিত করতে ২ অক্টোবরকে ‘আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস’ ঘোষণা করা হয়। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট ‘সংঘাত নয়, ঐক্যের বাংলাদেশ গড়ি’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ২০১৭ সাল থেকে পিএফজির মাধ্যমে সারা দেশে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস পালন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার দেশব্যাপী দিবসটি উদ্যাপিত হয়েছে।