জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরের (টেক) পদে ৩ হাজার ৫৩৪ জনের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ‘জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর’ পদে নিয়োগসংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপনের কার্যক্রম তিন মাস স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
এর ফলে ৩ হাজার ৫৩৪ জনের ২৯ জানুয়ারি যোগদান আটকে গেল বলছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। প্রজ্ঞাপন অনুসারে, নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীদের ২৯ জানুয়ারি যোগদান করার কথা ছিল।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেন।
ওই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তুলে শওকত আকবরসহ নিয়োগবঞ্চিত ১৮ জন চলতি মাসে রিটটি করেন। প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে ‘২৪ বছর ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত তারা’ শিরোনামে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটিসহ এ বিষয়ে ‘আবেদ আলীদের স্বীকারোক্তি’, ‘ফল প্রকাশের আগেই তথ্য চেয়েছিল সিআইডি’ শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করা হয় রিটে।
আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী কায়সার কামাল এবং এ জেড এম নূরুল আমিন শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. মাকসুদ উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. গোলাম রহমান ভূঁইয়া।
আদেশের পর আইনজীবী কায়সার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর ওই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) নন–ক্যাডার হিসেবে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর, ইনস্ট্রাক্টর ও ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর পদের (৯ম ও ১০ম গ্রেড) জন্য ওই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ৩ হাজার ৫৩৪ জনের নিয়োগ ৩ মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।’
রিট আবেদনকারীপক্ষের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর ওই নিয়োগের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। ২০২২ সালের ১৮ মার্চ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ২৫ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত। তবে এ নিয়োগ পরীক্ষায় ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস’ হয়েছে, এমন অভিযোগ নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে গত বছর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
পিএসসি গত বছরের ২৬ নভেম্বর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে। মনোনীত প্রার্থীদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীন ১০ম গ্রেডে নিয়োগে সাময়িকভাবে সুপারিশ করা হয়। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি ৩ হাজার ৫৩৪ জনকে যোগদানের জন্য পৃথক প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়।
এ অবস্থায় নিয়োগ চূড়ান্ত করে যোগদানসংক্রান্ত ২৩ জানুয়ারির পৃথক প্রজ্ঞাপন নিয়ে সম্পূরক আবেদন দাখিল করেন রিট আবেদনকারীপক্ষ। শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ প্রজ্ঞাপনের কার্যক্রম স্থগিত করে আদেশ দেন।
যোগদানসংক্রান্ত ২৩ জানুয়ারির প্রজ্ঞাপনগুলো (৪৩টি) কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। শিক্ষা সচিব, পিএসসির চেয়ারম্যান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ (নন–ক্যাডার) বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিট আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী এ জেড এম নূরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (১০ম গ্রেড) পদে পৃথক ৪৩টি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৩ হাজার ৫৩৪ জনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে ২৩ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ প্রজ্ঞাপনগুলো জারি করে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর একই রকমভাবে রেলওয়ের নিয়োগ স্থগিত করা হলেও এ ক্ষেত্রে (টেক) তা হয়নি বলে উল্লেখ করেন এই আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ এখন সিআইডিতে তদন্তনাধীন। এ সত্ত্বেও ৩ হাজার ৫৩৪ জনকে যোগদানের জন্য ৪৩টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। যে কারণে যোগদানসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনগুলো নিয়ে সম্পূরক আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট রুল দিয়ে ৪৩টি প্রজ্ঞাপনের কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। ফলে তাদের নিয়োগের কার্যক্রম আটকে গেল।’