রাষ্ট্রকাঠামোর নানা পরতে এখনো ফ্যাসিবাদের ছায়া বিদ্যমান

গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটলেও রাষ্ট্রকাঠামোর নানা পরতে এখনো ফ্যাসিবাদের ছায়া বিদ্যমান বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। তাঁরা বলেছেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার যেসব নিবর্তনমূলক আইনের মাধ্যমে জনগণের ওপর শোষণ-নিপীড়নের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করেছিল, সেসব আইন এখনো বলবৎ রয়েছে।

আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিশিষ্টজনেরা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ছিল, মানুষের স্বাধীনতা খর্বকারী ও পীড়নমূলক সব আইন বিলোপের মধ্য দিয়ে মানুষের মর্যাদা সংহত করা হবে। কিন্তু ঘটছে উল্টো। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সাইবার নিরাপত্তা আইনের নামে প্রতিস্থাপিত করে ফ্যাসিবাদী জমানার পীড়নব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে সামাজিক ফ্যাসিবাদের বিকাশের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। বিদ্যমান এসব আইনের সুযোগ নিয়ে মুক্তিকামী নাগরিকদের ওপর আইনি পীড়ন ও গোষ্ঠীবদ্ধ উষ্মা আরোপের সুযোগ পাচ্ছে বিভিন্ন কায়েমি গোষ্ঠী ও ব্যক্তি।

১১৯ জন নাগরিকের পক্ষে পাঠানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের হাতিয়ার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, যেটি ২০২৩ সালে বিলুপ্ত করে পূর্ববর্তী নিপীড়নমূলক ধারাগুলো বলবৎ রেখে সাইবার সুরক্ষা নিরাপত্তা আইন নামে নতুন একটি আইন করা হয়; অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশেও সেই আইনের প্রয়োগ বহাল তবিয়তে ঘটে চলেছে। সম্প্রতি লেখক-সংগঠক রাখাল রাহা এবং নাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’-এর অভিযোগে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। কবি সোহেল হাসান গালিব একই আইনে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খাটছেন। গোষ্ঠীবদ্ধ উষ্মা উৎপাদনের মধ্য দিয়ে তাঁদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলা হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক সমাজে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
বিবৃতিতে রাখাল রাহা ও নাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি ফ্যাসিবাদী জমানার নিদর্শন এই নিবর্তনমূলক আইনকে সম্পূর্ণ বিলোপের দাবি জানানো হয়েছে।

১১৯ জন নাগরিক তাঁদের বিবৃতিতে বলেছেন, ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহিষ্ণুতার সংস্কৃতিকে জলাঞ্জলি দিয়ে কোনোভাবেই দেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কায়েম হতে পারে না। আর রাষ্ট্রও এমন কোনো আইন জারি রাখতে পারে না যা ভিন্নমত দমনে ব্যবহৃত হয়, অসহিষ্ণুতাকে উৎসাহিত করে।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সংগীতশিল্পী কফিল আহমেদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত কাইয়ুম, আইনজীবী সারা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুমন সাজ্জাদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ আল মামুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর রাজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত প্রমুখ। এই বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি সদস্য মারজিয়া প্রভা।