মেলায় বিদায়ের সুর
এবার শনিবার ছুটির দিনে শুরু হয়েছিল অমর একুশের বইমেলা। শেষও হচ্ছে আরেক ছুটির দিন আজ শুক্রবারে। বেলা ১১টায় শুরু হবে শিশুপ্রহর দিয়ে, মেলা চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত।
গতকাল থেকেই মেলায় ছিল বিদায়ের আবহ। প্রকাশকেরা খুশি হতে পারলেন না মেলা নিয়ে। এবার লেখকদেরও উপস্থিতি দেখা গেল না বিশেষ। তবে লোকসমাগম হয়েছিল অনেক। সে তুলনায় বেচাকেনা অল্প। প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহারের সঙ্গে কথা হলো সন্ধ্যায়। তিনি বললেন, মেলার আবার বারোয়ারি চরিত্র ফিরে এসেছে। মানুষ অনেক এসেছে, তবে যাঁরা প্রকৃতই বই পছন্দ করেন, কেনেন—তেমন মানুষের উপস্থিতি খুব কম। যাঁরা নির্দিষ্ট কোনো লেখক বা বিষয় নিয়ে বই করেন, তাঁদের বিক্রি সবচেয়ে কম। যাঁরা বিচিত্র ধরনের বই করেছেন, তুলনামূলকভাবে তাঁদের বিক্রি ভালো।
শিশুসাহিত্যিক দন্ত্যস রওশন বললেন, এবার মেলার ব্যবস্থাপনায়, পরিকল্পনার ঘাটতি ছিল। অনেক অপ্রিয় ঘটনা ঘটেছে, তার একটা প্রভাব পড়েছে বিক্রিতে।
বাতিঘরের প্রকাশক দীপঙ্কর দাশ ও প্রধান নির্বাহী জাফর আহমদ রাশেদ জানালেন, মেলার বিক্রি নিয়ে তাঁরা হতাশ। এতটা নেমে যাবে বিক্রি, তা ভাবনাতেই ছিল না। মেলার পরিকল্পনা নিয়ে আয়োজকদের ঘাটতি ছিল।
প্রকাশদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, বিক্রি গত বছরের তুলনায় এক–তৃতীয়াংশের মতো। নবযুগের প্রকাশক অজিত রায় নন্দী, অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা, স্বপ্ন’৭১ এর প্রকাশক আবু সাঈদসহ ছোট–বড় অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রকাশক ও কর্মকর্তারা জানালেন, অনেকেরই এবার লোকসান হবে। বিশেষ করে ছোট প্রকাশকদের অবস্থা খারাপ। তবে বই বিক্রি কেন এমন ব্যাপক কমে গেল, সে বিষয়টি তাঁদের কাছেও পরিষ্কার নয়।
এ পরিস্থিতিতেও প্রচুর নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল মেলার তথ্যকেন্দ্রে নতুন বই এসেছে ১৭৬টি। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত নতুন বইয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৬৫। নতুন বই তিন হাজারের ঘর পেরিয়ে যাবে শেষ দিনে। কালও অনেক নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হলো। বিকেলে অন্যপ্রকাশের স্টলে মোড়ক উন্মোচন হলো গীতিকার আসিফ ইকবালের আত্মোন্নয়নমূলক বই যদি লক্ষ্য থাকে অটুট। লেখকের সঙ্গে শিল্পী ফাহমিদা নবী, লুৎফর হাসান, প্রকাশক মাজহারুল ইসলামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সায়মা রহমান তুলির বই একাকিত্ব ও মনের যত্ন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হলো সন্ধ্যায় স্বপ্ন ’৭১–এর স্টলে। এখান থেকে এবার এসেছে জিয়াউল সরকারের ব্যতিক্রমী ধারার গল্পগ্রন্থ সুরতহাল।
এবার নতুন বইগুলোর মধ্যে জলধী এনেছে সেলিম মোরশেদের সাহিত্য সংগ্রহ, নবযুগ এনেছে ড. বিনয়েন্দ্র নাথ চৌধুরীর বৌদ্ধ সাহিত্য, মনীন্দ্র কুমার গুপ্তর ভারতীয় সাধক, প্রথমা এনেছে এ কে এম সুফিউল আনামের ইয়েমেনে অপহৃত এক বাঙালির কাহিনি: অপহরণের ৫৪৫ দিন, ইউপিএল এনেছে শওকত হোসেন মাসুমের কেলেঙ্কারির অর্থনীতি: বাংলাদেশের অর্থনীতির পেছনের অনর্থনীতি, ঋদ্ধি এনেছে আলমগীর সাত্তারের ছোটদের এরোপ্লেন আবিষ্কারের কাহিনি, মূর্ধন্য এনেছে ইকবাল খোরশেদের কবিতা বুকপকেটের পদ্য, পুঁথিপ্রকাশ এনেছে ইমরান মাহফুজের গণ-অভ্যুত্থানবিষয়ক বই নির্মম জুলাই ও গণ-অভ্যুত্থানে আহত লেখক, পাঠক সমাবেশ এনেছে হাসান হাফিজের স্মৃতির সময়।
আফ্রিকা দক্ষিণ
লেখক মো. তৌহিদ হোসেন তাঁর কূটনৈতিক জীবনের শেষ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁর ব্যাপক পরিভ্রমণের সুযোগ হয়। নিজের আগ্রহে অনুসন্ধানী দৃষ্টি নিয়ে দেশগুলোর মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। সে অভিজ্ঞতার বিবরণই সরল ও অনাড়ম্বর ভাষায় কিন্তু আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন আফ্রিকা দক্ষিণ বইয়ে। বইটি সাধারণ পাঠকের কাছে এক অজানা জগতের দ্বার উন্মোচন করবে। মো. তৌহিদ হোসেন বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।