একজনের বয়স নয় বছর, অপরজনের সাত। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে শিশু দুটি। ধর্ষণের শিকার শিশু দুটিকে চিকিৎসকেরা তিন দিন ধরে স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবু মাঝেমধ্যেই কাঁদছে ওরা।
গত সোমবার দুপুরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি দুটি শয্যায় শিশু দুটি। সাত বছরের শিশুটির বাড়ি চান্দিনা উপজেলায়। নয় বছরের শিশুটির বাড়ি লাকসামে।
হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের জ্যেষ্ঠ সেবিকা মনোয়ারা বেগম বলেন, গত ১০ দিনে ধর্ষণের শিকার মোট চারজন এ ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। এর মধ্যে এই শিশু দুটির অবস্থা খারাপ।
ধর্ষণ শেষে পুকুরে নিক্ষেপ: চান্দিনার এক প্রবাসীর মেয়ে সাত বছরের শিশুটি ১৭ জুন সন্ধ্যায় ধর্ষণের শিকার হয়। হাসপাতালে তার সঙ্গে থাকা স্বজনেরা জানান, নিজ গ্রামের একটি বাগানে তাকে প্রথমে কিল–ঘুষি মেরে চোখমুখ থেঁতলে দেওয়া হয়। এরপর ধর্ষণ শেষে তাকে পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেয় ধর্ষকেরা। রাত আটটার দিকে গ্রামবাসী তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
এ ঘটনায় মেয়েটির বাবা চান্দিনা থানায় একটি মামলা করেন।
শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ: লাকসাম উপজেলার নয় বছরের মেয়েটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ছাত্রী। পরিবার জানায়, ১৮ জুন বেলা দুইটার দিকে সে মাদ্রাসায় পড়তে যায়। এ সময় ওই মাদ্রাসার শিক্ষক লোকমান হোসেন তাঁকে একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। গত রোববার লোকমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান করুণা রানী কর্মকার বলেন, শিশু দুটির ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। একদিকে শরীরের যন্ত্রণা, অন্যদিকে মানসিক অস্থিরতা। সব মিলিয়ে ওদের এখনো স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না।
আরও দুজনের ওপর বর্বরতা: ধর্ষণের শিকার হয়ে এর আগে ১০ জুন এ হাসপাতালে ভর্তি হন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার এক তরুণী। স্থানীয় একটি কলেজের ডিগ্রি পাস কোর্সের ওই শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়ে গত সোমবার বাড়ি ফিরেছেন।
মেয়েটির বোন জানান, ৮ জুন সকালে কলেজে যাচ্ছিলেন ওই তরুণী। পথে মোজাম্মেল হোসেন নামের এক বখাটে তাঁকে অটোরিকশায় তুলে নেয়। এরপর বুড়িচং উপজেলার একটি গ্রামে নিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। পরে পুলিশ মোজাম্মেলকে আটক করে। এ ঘটনায় ব্রাহ্মণপাড়া থানায় মামলা হয়েছে।
এ ছাড়া ১০ জুন চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ছয় বছরের এক শিশু প্রতিবেশীর ধর্ষণের শিকার হয়। তাকে ১১ জুন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নার্স মনোয়ারা বেগম বলেন, ওই প্রতিবেশী খুবই প্রভাবশালী। ফলে নিরাপত্তার ভয়ে চিকিৎসা না নিয়েই মেয়েটিকে পরদিন হাসপাতাল থেকে নিয়ে চলে যায় পরিবার।