রাজশাহীতে 'পীর' খুন

.
.

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হত্যার রেশ না কাটতেই এবার স্থানীয় একজন ‘পীর’কে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক অন্যান্য হত্যার মতো এ ঘটনায়ও উগ্রপন্থীদের সন্দেহ করছে পুলিশসহ স্থানীয় লোকজন।
নিহত ব্যক্তির নাম শহীদুল্লাহ (৬৫)। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার মহানন্দখালী গ্রামে। শুক্রবার সন্ধ্যায় তানোর উপজেলায় একটি আমবাগান থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
গতকাল শনিবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামে শহীদুল্লাহর লাশ দাফন করা হয়। সেখানে রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) নিশারুল আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যে ধরনের খুন হচ্ছে, তার সঙ্গে এই খুনের মিল রয়েছে। পুলিশ সেই অনুযায়ীই তদন্ত করছে।
শহীদুল্লাহর স্ত্রী রওশন আরা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামী শুক্রবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। তখন বলে গেছেন, ওই দিন বাড়ি ফেরা না-ও হতে পারে।
শহীদুল্লাহর ছেলে ইকবাল হোসেন বলেন, শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে তাঁর বাবার ফোনে কয়েকটি কল আসে। তখন তিনি গোসল করছিলেন। ফোন পাওয়ার পর বাড়ি থেকে বের হন। তাঁর বাবা সাধারণত চাঁপাইনবাবগঞ্জে যেতেন ট্রেনে বা বাসে। এবারই তাঁকে দুই ব্যক্তি মোটরসাইকেলে করে নিয়ে গেছে।

গতকাল বিকেলে লাশ দাফনের সময় উপস্থিত লোকজন বলাবলি করছিলেন, ভক্ত সেজে ওই দুই ব্যক্তি পরিকল্পিতভাবে শহীদুল্লাহকে মোটরসাইকেলে নিয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ, পীর-খানকাবিরোধী উগ্রপন্থী কোনো গোষ্ঠী এর সঙ্গে জড়িত।

দাফনে অংশ নিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার গোলাপবাড়ী (আমনুরার পাশের গ্রাম) থেকে শহীদুল্লাহর নয়জন ভক্ত এসেছিলেন। তাঁদের একজন মামুন হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায় শহীদুল্লাহর কিছু ভক্ত আছেন। তিনি প্রায়ই ওই এলাকায় যেতেন।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় তানোর উপজেলার জুমারপাড়া গ্রামের হাসান ডাক্তারের আমবাগানে স্থানীয় লোকজন একটি লাশ দেখতে পান। পরে তাঁরা থানায় খবর দেন। লাশের শরীরে বিভিন্ন ক্ষতচিহ্ন ও গলা কাটা ছিল। এখন পর্যন্ত কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছেলে রাসেল আহাম্মেদ বাদী হয়ে তানোর থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই শরীফুল ইসলাম (৫৫) প্রথম আলোকে বলেন, শহীদুল্লাহ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজারের নূরু ফকিরের অনুসারী ছিলেন। গ্রামের মোড়ে শহীদুল্লাহর একটি মুদিদোকান আছে। সেখানে তাঁর ভক্তরা আসতেন।

শরীফুল বলেন, তাঁর ভাইকে কে বা কারা এবং কেন হত্যা করেছে, তা তিনি আন্দাজ করতে পারছেন না। গ্রামের এক ব্যক্তিকে জমি দখলে সহায়তা করেছিলেন, এ কারণে অন্য পক্ষের সঙ্গে বিরোধ হয়েছিল। এর বাইরে তাঁর ‘ফকিরি’ বা ‘পীরআলী’র কারণে কোনো কিছু ছিল কি না, সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না।

এর আগে গত ২৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এর আগে ২৫ ডিসেম্বর রাজশাহীর বাগমারায় জুমার নামাজের সময় একটি আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে বোমা হামলা হয়। তাতে বোমা বহনকারী নিহত হয়। এ দুটি ঘটনায় কারা দায়ী, তা এখন পর্যন্ত উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। দুটি ঘটনায়ই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের (ইসলামিক স্টেট) নামে দায় স্বীকার করা হয়েছিল। তবে পুলিশের সন্দেহ দেশীয় জঙ্গি সংগঠন জেএমবিকে।