মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবায় কিমউনিটি ক্লিনিক
গত ২৫ আগস্ট ২০১৫, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবায় কিমউনিটি ক্লিনিক’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।
![স্বাস্থ্যসেবায় কিমউনিটি ক্লিনিক](http://media.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2015%2F09%2F05%2Fd36d3cc7651a505e0f55bc9f22408d17-29.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress)
আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রাম পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্বাস্থ্য সহকারীরা তাঁদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা প্রদান করছেন। তাঁরা দেশের তৃণমূল পর্যায়ে দরিদ্র মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছেন।
স্থানীয় জনগণের প্রতিনিধিরা এই স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র পরিচালনায় অংশ নিচ্ছেন। বর্তমানে দেশে ১৩ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজননস্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনাসেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, স্বাস্থ্যশিক্ষা, পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়।
স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নে ওয়ার্ল্ড ভিশন কাজ করছে। আলোচনায় কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবার অনেক বিষয় আসবে। এখন আলোচনা করবেন, দীন মো. নুরুল হক।
![দীন মো. নুরুল হক](http://media.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2015%2F09%2F05%2F0ae68c756875655d164e228bfeed8528-1.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress)
দীন মো. নুরুল হক: বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাত ঈর্ষণীয়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে যাওয়ার মূলে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গণমাধ্যম আমাদের অনেক ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেয়। ভুলত্রুটি ধরার সঙ্গে তারা যদি সফলতার দিকগুলো তুলে ধরে, তাহলে আমরা আরও উৎসাহ বোধ করি। বর্তমান সরকারের অনেক ভালো কাজ আছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি কাজ হলো কমিউনিটি ক্লিনিক। গ্রামে অনেক দরিদ্র মানুষ রয়েছে। এদের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা একেবারে কম। কমিউনিটি ক্লিনিক এসব মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক সহযোগিতা করছে। এ ক্লিনিক স্বাস্থ্যক্ষেত্রে একটি বিপ্লবের নাম। ক্লিনিকে ৩০ প্রকার ওষুধ বিনা মূল্যে প্রয়োজন অনুযায়ী দেওয়া হয়। নারীদের সন্তান প্রসবের উপকরণ আছে। প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যসেবাকর্মী আছেন।
প্রচণ্ড দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কারও ডায়রিয়া, শিশুসন্তান অসুস্থ হলে কোথায় যাবেন? আপনার বাড়ির পাশের এই কমিউনিটি ক্লিনিক একান্ত ভরসা হয়ে কাজ করছে।
গণমাধ্যমের সংবাদের ওপর মানুষ বেশি নির্ভর করে। আপনারা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সফলতা-দুর্বলতা দুটোকেই তুলে ধরবেন। এখনো সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোই গরিব মানুষের ভরসা। উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন পরিবারকল্যাণকেন্দ্র এগুলোই গরিব মানুষের স্বাস্থ্যসেবার আশ্রয়স্থল।
আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা কতগুলো সেবা খুব সহজে দিতে পারেন। যেমন: ডায়রিয়া হলে ওর স্যালাইন অথবা বাড়িতে তৈরি স্যালাইন, রক্তচাপ মাপা, সুগার টেস্ট, সাধারণ জ্বর, মাথাব্যথা, চোখ সাদা হলে আয়রন ট্যাবলেট, গর্ভবতী নারীদের ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ট্যাবলেট ইত্যাদি ক্ষেত্রে খুব সহজেই স্বাস্থ্যকর্মীরা সেবা দিতে পারেন।
কমিউনিটি ক্লিনিক গ্রামের একেবারে উপায়হীন একজন নারীকে সন্তান প্রসবের জন্য প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের বিপদ ও অদক্ষ দাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করছে।
এখন ডাক্তারদের দুই বছর গ্রামে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কেউ এক দিনও কম থাকতে পারবেন না। আগের থেকে সব পর্যায়ে তদারকি অনেক বাড়ানো হয়েছে।
মা সুস্থ থাকলে, সন্তান সুস্থ হবে। মা ও সন্তান সুস্থ থাকলে সুস্থ সমাজ হবে। আমি আশা করব, ওয়ার্ল্ড ভিশন তার কর্ম-এলাকায় ১০০ শতাংশ প্রসব হাসপাতালে নিশ্চিত করুক। আমাদের প্রতিবেদন দিক। আমরা এটাকে মডেল হিসেবে ব্যবহার করব।
বাংলাদেশে উন্নয়ন সহযোগীরা অবাধে কাজ করতে পারে। তারা আমাদের অনেক ক্ষেত্রেই সহযোগিতা করছে। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক সাফল্য আসবে।
![মাখদুমা নার্গিস](http://media.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2015%2F09%2F05%2F56d0ed812dea83b9eade53e428f79e27-2.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress)
মাখদুমা নার্গিস: আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিক একটি অতুলনীয় ধারণা। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোয় ঘুরেছি। কোথাও এমন যুগান্তকারী পদক্ষেপ দেখিনি। যখন কমিউনিটি ক্লিনিক শুরু করি, তখন খুব খোলা মনে এগিয়েছি। কারণ, সামনে কোনো উদাহরণ ছিল না। সবার পরামর্শ ও সহযোগিতায় এ পর্যন্ত এগিয়েছে। ওয়ার্ল্ড ভিশনসহ এখন আমাদের সঙ্গে ১৮টি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
এনজিওগুলো প্রকল্পভিত্তিক কাজ করে। প্রকল্প শেষ হলে কাজও শেষ হয়। এখন তারা সরকারের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে কীভাবে আরও শক্তিশালী করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এর ফলে সরকারের স্বাস্থ্যব্যবস্থা দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই হবে।
কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপকে কার্যকর করতেই হবে। কমিউনিটি গ্রুপ কার্যকর না হলে এ ক্লিনিকের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। আগে গ্রামের দরিদ্র মানুষ অপচিকিৎসার শিকার হতো। বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসাসেবার কথা বলতে হতো। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন মানুষ নিজেই তার প্রয়োজনে সেবা নিতে আসে। এ ক্ষেত্রে কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
আগের সময়ের অনেক বড় রোগ যেমন: কলেরা, বসন্ত মহামারি এখন তেমন নেই। কিন্তু ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেশারসহ অনেক রোগ দ্রুতগতিতে বাড়ছে।
এসব রোগ এখন গ্রামের মানুষেরও হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজগুলো করার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ।
খুলনার ফুলতলায় স্প্রিং নামে একটি বেসরকারি সংগঠন পুষ্টির বিষয়ে অনেক ভালো কাজ করছে। দেখে অভিভূত হয়েছি। তারা কেবল পুষ্টির পরামর্শই দিচ্ছে না, কীভাবে একটি বাড়িতে সবজির বাগান করা যায়, ছোট একটি খোঁয়াড়ে হাঁস-মুরগি পালন করা যায়, সেসব বিষয়ে পরিবারগুলোকে শিক্ষা দিচ্ছে।
শুধু সরকার সবকিছু করবে তা কিন্তু না, যার যার জায়গা থেকে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা প্রতিবছর ভালো ক্লিনিকগুলোকে পুরস্কার দিয়ে থাকি। অনেক জায়গায় কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ ক্লিনিকের জন্য দোতলা ভবন, সন্তান প্রসবের আলাদা জায়াগসহ আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা তৈরি করে দিয়েছে।
এভাবে যদি সবাই কাজ করে, তাহলে কমিউনিটি ক্লিনিকের ক্ষেত্রে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। আমরাও সেদিনের অপেক্ষায় আছি। প্রথম দিকে আমরা চেষ্টা করেছি সবগুলো কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করতে। সেটা করতে পেরেছি। এখন ক্লিনিকগুলোর মান উন্নয়ন করতে চাই।
![চন্দন জেড গোমেজ](http://media.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2015%2F09%2F05%2F917d065c5a1c2d308fe7f5fc54db7422-3.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress)
চন্দন জেড গোমেজ: জনাব দীন মো. নুরুল হক উন্নয়ন সহযোগীদের কাজের উল্লেখ করেছেন। এক অর্থে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশকে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমরা যেন কর্ম-এলাকায় ১০০ ভাগ প্রসব কমিউনিটি ক্লিনিকে নিশ্চিত করি। আমরা এ দায়িত্ব পালনের জন্য পূর্ণ আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা এ ক্ষেত্রে একাত্ম হয়ে কাজ করতে পারব বলে বিশ্বাস। বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। ওয়ার্ল্ড ভিশন ‘এখনই শিশুর স্বাস্থ্য’ নামে ১৫ বছর ধরে সারা বিশ্বে একটি প্রচার করছে। বাংলাদেশে তিন বছর ধরে এ প্রচার করছে।
এখন সরকারের সঙ্গে একটা চুক্তি করে মুক্তাগাছা ও ফুলবাড়ী দুটি উপজেলার ৮৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে কাজ করি। স্বাস্থ্যসেবার সব উপকরণ থাকা সত্ত্বেও মানসম্পন্ন প্রসব হচ্ছে না। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করি। তারপর কাজ শুরু করি।
আমরা কমিউনিটির মানুষদের সম্পৃক্ত করে কাজ করি। এর ফলে দুই বছরের মধ্যে কমিউনিটির প্রায় সব মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে জেনেছে।
ওয়ার্ল্ড ভিশন ময়মনসিংহের ৩০ জন সাংবাদিককে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রথম আলোর মাধ্যমেও আমরা সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমরা পাঁচজন সাংবাদিককে আমাদের কর্ম-এলাকায় ইতিবাচক সংবাদ সংগ্রহের জন্য পাঠিয়েছিলাম। তঁাদের একজন এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত আছেন।
আমরা যদি সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করি তাহলে কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক সাফল্য আসবে। কমিউনিটি ক্লিনিকের ধারণার মতো স্বাস্থ্যসেবায় যুগান্তকারী কাজ বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি আছে কি না, জানা নেই। এটাকে কীভাবে আরও সফল করে তোলা যায়, সে জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।
সরকার ও কমিউনিটির মধ্যে আরও যোগসূত্র বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা সরকারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে চাই। সময়ের সঙ্গে কমিউনিটি ক্লিনিকে কাজের মান আরও অনেক উন্নত হবে বলে আশা করি।
![জয়ন্ত নাথ](http://media.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2015%2F09%2F05%2F28d8126e5df41b47798cc66f370ada2b-4.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress)
জয়ন্ত নাথ: আমি ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা ও ফুলবাড়ী উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমার কর্ম-এলাকায় দুটি চিত্র রয়েছে। এক. সেবার ব্যবস্থা আছে কিন্তু মানুষ সেবা নিতে যাচ্ছে না। দুই. সেবা নিতে গিয়ে মানসম্পন্ন সেবা পাচ্ছে না। এ অবস্থায় প্রতি ৩০০ পরিবারের জন্য একজন পুষ্টি পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছি। তিনি কমিউনিটিতে বসবাসরত মা ও যেসব পরিবারে পাঁচ বছরের নিচে শিশু রয়েছে, তাদের পুষ্টির বিষয়ে সচেতন করছেন। সরকারের সব সেবা রয়েছে তারপরও গর্ভবতী মায়েদের চেকআপের হার মাত্র ২৫ থেকে ২৬ শতাংশ। আমাদের পুষ্টি পরামর্শক পরিবারে যাচ্ছেন। পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তাদের সচেতন করছেন।
কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার জন্য কমিউনিটি গ্রুপ ও কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ রয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপ ও সাপোর্ট গ্রুপ কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতি তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেকে ভালোভাবে জানে না। আমরা তাদের বুঝিয়েছি, এ প্রতিষ্ঠান তাদের। এটার রক্ষণাবেক্ষণ তাদেরই করতে হবে। এ ক্লিনিকের ভালো-মন্দের ওপর তাদের স্থানীয় দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এখন তারা এ বিষয়টি বুঝতে পেরেছে এবং কার্যকরভাবে হাসপাতালকে পরিচালনা করছে। তারা এখন প্রতিনিয়ত সভা করছে। ছোটখাটো যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো তারা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে।
মুক্তাগাছার ৩৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকের একটিতেও বিদ্যুৎ ছিল না, এখন প্রতিটিতে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা হয়েছে। সরকারের একটি কার্যকর অনলাইন রিপোর্টিং সিস্টেম রয়েছে। ফুলবাড়ী ও মুক্তাগাছা থেকে মাত্র ১৫ শতাংশ রিপোর্টিং হতো। এখন এখান থেকে প্রায় ১০০ শতাংশ রিপোর্টিং করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী একটা অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘কমিউনিটির মানুষ, গ্রুপ সাপোর্ট গ্রুপ—সবাই যদি বুঝতে পারে এ প্রতিষ্ঠান তাদের, তাহলে এটি সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।’
কমিউনিটি ক্লিনিকের ট্রাস্টের ফান্ডের কথা বলা হয়েছিল, মুক্তাগাছার একটা কমিউনিটি ক্লিনিকে ইতিমধ্যে পাঁচ লাখ টাকা তহবিল হয়েছে। এ টাকা দিয়ে তারা বিভিন্ন কাজ করছে।
![গোলাম মোদাব্বীর](http://media.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2015%2F09%2F05%2F3e25337c58383b827fdbd313f3c8ca0c-5.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress)
গোলাম মোদাব্বীর: গত তিন বছরে বরিশাল, ভোলা, বরগুনায় ৪০০ কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে কাজ করেছি। গ্রামের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একটি বড় আশ্রয়কেন্দ্র এই কমিউনিটি ক্লিনিক, এতে কোনো সন্দেহ নেই। গড়ে ৪০ জন দরিদ্র মানুষ প্রতিদিন এ কেন্দ্র থেকে সেবা নিচ্ছে। কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ সব জায়গায় কাজ করছে না। আবার কমিউনিটি গ্রুপ সাপোর্ট গ্রুপে কতজন আছেন? যঁারা আেছন, তঁারা ক্লিনিকে সহযোগিতা করছেন। কিন্তু কমিউনিটির ছয়-সাত হাজার মানুষকে কীভাবে ক্লিনিকের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে, সে বিষয়টিও ভাবতে হবে।
কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি উদ্দেশ্য আছে, তা হলো কমিউনিটির মানুষদেরই এটি পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীরা তিন মাসের প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য তাঁরা কতটা চাপ নিতে পারবেন, সেটা ভাবতে হবে।
তাঁদের আরও তিন মাসের প্রশিক্ষণের কথা ছিল কিন্তু তাঁরা সেটা পাননি। তবে তঁারা তরুণ এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন। এঁরা প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, সেটা কে দেখবে? বা এসব ক্ষেত্রে তাঁদের কে সহযোগিতা করবে, সেটিও একটি প্রশ্ন।
![আবদুল খালেক](http://media.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2015%2F09%2F05%2Fd9c9014045b05e6f20231090834a5d7f-6.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress)
আবদুল খালেক: ওয়ার্ল্ড ভিশনের সহযোগিতায় ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ী ও মুক্তাগাছা উপজেলায় ২৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক জরিপ করেছি। আমাদের জরিপকালীন কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় কোনো বিদ্যুৎ-সংযোগ ছিল না। অধিকাংশ পানির চাপকল বিকল ছিল। জয়ন্ত নাথের বক্তব্যে মনে হলো এক বছরের কম সময়ের মধ্যে এই দুটি উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
স্থানীয় লোকজনের কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতি খুব একটা আগ্রহ লক্ষ করা যায়নি। তাঁরা মনে করেন সেবার মান উন্নত না। আর ওষুধেরও অভাব রয়েছে। তারপরও কমিউনিটি ক্লিনিক কিন্তু চলছে।
তবে ক্লিনিকের সেবাদানকারীরা অকপটে বলেছেন, তাঁদের তিন মাসের প্রশিক্ষণ যথেষ্ট নয়। তাঁদের আরও কিছু প্রশিক্ষণ বা তঁারা যে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, সেটা যদি আবার তাঁরা নিতে পারতেন, তাহলে ভালো হতো।
ওয়ার্ল্ড ভিশনের উদ্যোগটি খুব ফলপ্রসূ হয়েছে। ৩০০ পরিবারকে একজন মানুষ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করছেন। সত্যিকার অর্থে মানুষ সচেতন হয়েছে।
কমিউনিটি ক্লিনিক—মা ও শিশু, তরুণ-তরুণী, নববিবাহিত দম্পতি সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেবা দিতে পারে।
এই প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যকর রাখতে পারলে কমিউনিটির মানুষ ব্যাপক সেবা পাবে। ওয়ার্ল্ড ভিশন পরিচালিত ফুলবাড়ী-মুক্তাগাছার কমিউনিটি ক্লিনিকের মডেলকে দেশের সব কমিউিনটি ক্লিনিকে প্রয়োগ করা যেতে পাের।
![মুনিরুজ্জামান বিপুল](http://media.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2015%2F09%2F05%2F771daa7ccf6e6e18b2631673980740d8-7.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress)
মুনিরুজ্জামান বিপুল: বাংলাদেশে যে কটি উদ্যোগ নিয়ে কাজ করি, তার মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক অন্যতম। আমরা ১১টি উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবাকে উন্নয়ন করার চেষ্টা করছি। সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের দিক থেকে যে উদ্যোগগুলো কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য নেওয়া হচ্ছে, তার সফলতা-বিফলতা দুটোই আছে। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধে আমরা কাজ করছি। এ ক্ষেত্রে একটা বিষয় লক্ষ করছি—তা হলো, পুষ্টির বিষয়টি সব সময় গুরুত্বহীন থেকে যাচ্ছে।
পুষ্টি স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা গুরুত্ব পেলেও পুষ্টি খুব একটি গুরুত্ব পাচ্ছে না। আমরা পুষ্টি নিয়ে কাজ করছি। সরকারের স্বাস্থ্যসেবার মূল ধারায় পুষ্টিকে আনতে হবে।
আমরা পেছনে থেকে পুষ্টির সেবা দিচ্ছি। একসময় আমাদের তহবিল থাকবে না, উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা চাই সরকারের স্বাস্থ্যসেবার মূলধারায় বিষয়টি চলে আসুক। দীর্ঘ মেয়াদে কমিউনিটি ক্লিনিককে টেকসই করতে হলে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একটা বাজেটের ব্যবস্থা করতে হবে।
কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে কমিউনিটি ক্লিনিককে টেকসই করতে হলে এবং কমিউনিটির মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হলে সেবার বিনিময়ে, অবস্থাভেদে কিছু পয়সা সরকার নেবে কি না, সে বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে।
এমন না যে ১০ টাকার সেবা ১০ টাকা দিয়েই কিনতে হবে। একটা প্রতীকী মূল্য দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। কমিউনিটির আর্থিক সহায়তায় সরকারের কিছু প্রতিষ্ঠান টেকসই হয়েছে, এমন উদাহরণ কিন্তু আছে। কমিউনিটি এবং সরকার উভয়ের সহযোগিতায় দীর্ঘ মেয়াদে এটা টেকসই হবে।
![মো. ইউসুফ আলি](http://media.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2015%2F09%2F05%2F2f6ecb26cd5345c2e619c44e60a10c83-8.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress)
মো. ইউসুফ আলি: ওয়ার্ল্ড ভিশন থেকে সিটিজেন ভয়েস অব অ্যাকশন প্রশিক্ষণ নিই। আমি ৩৫টির মতো সভা করেছি। এসব সভায় কমিউনিটির মানুষ উপস্থিত ছিল। তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে এই কমিউনিটি শব্দের অর্থ হলো জনগণ। কমিউনিটি ক্লিনিক মানে হলো জনগণের ক্লিনিক। এই ক্লিনিক আপনাদের। প্রাথমিকভাবে কমিউনিটি ক্লিনিকের সমস্যা চিহ্নিত করি। তারপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী সবাইকে নিয়ে একটি সভা করি। আমাদের পর্যবেক্ষণে ছয়টি ক্লিনিকে নিরাপদ
পানির সমস্যা ছিল।ইউএনও ওই সভায় ঘোষণা করলেন, তিনি ছয়টি টিউবওয়েল ও মুক্তাগাছার ৩৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করবেন। ঘোষণার খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি এসব কাজ করে দিয়েছেন। আগে উচ্চবিত্ত পরিবারের নারীরা কমিউনিটি ক্লিনিকে আসতে চাইত না। এখন এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। সবই আসছে।
অর্থের সমস্যাও দূর হচ্ছে। পরিচালনা কমিটির সদস্যরা কিছু কিছু অর্থ দিচ্ছেন। আমরা একটা সমস্যা লক্ষ করেছি, কখনো কখনো পর্যাপ্ত ওষুধ থাকে না। রোগীরা সেবা না পেয়ে চলে যায়। সরকারের দিক থেকে ওষুধের বিষয়টি নিশ্চিত করলে কমিউনিটি ক্লিনিকের ছয় হাজার মানুষই সেবা পাবে।
![শিপন হাবিব](http://media.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2015%2F09%2F05%2F046360242065fa9720771eb72723e163-9.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress)
শিপন হাবিব: আমরা পাঁচজন সাংবাদিক ওয়ার্ল্ড ভিশনে কর্ম-এলাকায় গিয়েছিলাম। কোনো সন্দেহ নেই, এসব এলাকায় মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। এর পেছনে ভূমিকা রয়েছে সরকার, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষ করে ভুক্তভোগী মায়ের।
কিন্তু মাতৃস্বাস্থ্য ঠিক রাখতে স্ত্রীর জন্য স্বামীর, বোনের জন্য ভাইয়ের, কন্যার জন্য বাবার যে ভূমিকার দরকার, সেটা আমরা লক্ষ করিনি। বিশেষ করে প্রতিটি স্বামীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
আমি মনে করি, বাড়ির পুরুষসদস্য ও স্বামী গর্ভবতী নারীর খোঁজখবর নিলে, সুযোগ-সুবিধার প্রতি খেয়াল রাখলে, খাওয়াদাওয়ার প্রতি লক্ষ রাখলে প্রত্যেক গর্ভবতী নারী সুস্থভাবে সন্তান প্রসব করতে পারবেন। প্রত্যেকে তঁার সন্তানকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। সন্তানকে বড় করতে চান। সন্তানের মধ্যে নিজের অপূরণীয় স্বপ্নগুলো ধারণ করেন। সন্তান সুস্থভাবে পৃথিবীতে আসার প্রথম শর্তই হলো মায়ের যত্ন নেওয়া।
তাই পরিবারের সবাই যদি গর্ববতী মায়ের যত্ন নেয়, তাহলে মা সন্তান প্রসবের অনেক ঝঁুকি ও সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। তিনি একজন সুস্থ-সবল সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন। সুস্থ সন্তান দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে।
দীন মো. নুরুল হক: সবার আলোচনায় কমিউনিটি ক্লিনিকের
অনেক ইতিবাচক দিক এসেছে। কিছু সমস্যার কথাও অনেকে বলেছেন। কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কারও কোনো দ্বিমত নেই।
কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছেন কমিউনিটি ক্লিনিক থাকবে কি না? কমিউনিটি ক্লিনিক থাকতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কমিউনিটি ক্লিনিকের ধারণাটি প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা থেকে এসেছে। তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য ট্রাস্ট ফান্ড তৈরির কথা বলেছেন। এ ফান্ডে সরকার প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থ দেবে।
তারপর কমিউনিটির মধ্য থেকেই ফান্ড তৈরি হতে থাকবে। কমিউনিটি ক্লিনিকের এমন কাঠামো থাকবে, যাতে এটি কোনো দিন শেষ না হয়। আমাদের মাতৃ ও শিশুমৃত্যু কমছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি।
কিন্তু শিশুদের খর্বকায় সমস্যা রয়েছে। পুষ্টি আর খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এক নয়। কখন কী খাবার খেতে হবে, কী পরিমাণ খেতে হবে, কোন বয়সে কী খাবার খেতে হবে—এ বিষয়ে আমরা গুরুত্ব কম দিই। কিন্তু এটি একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সন্তান জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। কতবার খাওয়াতে হবে, কতটুকু খাওয়াতে হবে, কীভাবে খাওয়াতে হবে, শিশুর ডায়রিয়া হলে কী করতে হবে, মায়ের কেন গর্ভবতী অবস্থায় টিকা নিতে হবে; এমন অনেক বিষয় কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে পরামর্শ ও নির্দেশনা পাওয়া যাবে। তাই সবার আন্তরিকতায় কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তুলতে হবে।
![রওশন আরা বেগম](http://media.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2015%2F09%2F05%2F607f0e663257bed4d7f053e486211a63-10.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress)
রওশন আরা বেগম: বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক একটি বিপ্লবী উদ্যোগ। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে গ্রামের দরিদ্র মানুষের অনেক ধরনের সেবা দেওয়া হয়। বিশেষ করে মা ও শিশুরা এখান থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সেবা পেয়ে থাকে। মায়েদের গুরুত্বপূর্ণ দুটো সেবা হলো গর্ভ-পূর্ববতী ও পরবর্তী সেবা। এ সেবার জন্য গ্রামাঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিকের কোনো বিকল্প নেই। কোনো কোনো ক্লিনিকে প্রসবের ব্যবস্থা আছে। আমাদের গর্ভ-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সেবার হার বেড়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বেড়েছে। এরপরও ৬০ শতাংশের বেশি প্রসব বাড়িতে হয়।
সম্প্রতি কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে আমরা একটি সমঝোতা চুক্তি করেছি, যাতে কমিউনিটি ও সূর্যের হাসি চিহ্নিত ক্লিনিক একসঙ্গে কাজ করতে পারে। চুক্তি মোতাবেক নয়টি জেলায় কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে সূর্যের হাসি চিহ্নিত ক্লিনিক একসঙ্গে কাজ করবে। এসব জেলার কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রসব করানোর লোকবল না থাকলে সূর্যের হাসি চিহ্নিত ক্লিনিক সে ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।
সূর্যের হাসি চিহ্নিত সাপোর্ট গ্রুপ কমিউনিটি ক্লিনিকের সাপোর্ট গ্রুপের সঙ্গে কাজ করবে, যাতে গ্রামের দরিদ্র মানুষের আরও বেশি করে ক্লিনিকে আনা যায়। আপনারা জানেন, আমরা কাজ করি একটি সেবাধর্মী প্রকল্পে। আমরা প্যারামেডিক দিয়ে প্রসবের কাজ করাই।
আমাদের প্রকল্প এলাকায় অনেক গর্ভবতী মা আছেন। অনুমতি নিয়ে তাঁদের বাড়িতে লাল পতাকা ওড়াই। এসব বাড়িতে কোনো সমস্যা হলে যাতে অন্যরা সাহায্য করতে পারে। কমিউনিটি ক্লিনিক ও আমরা একসঙ্গে কাজ করে স্বাস্থ্যসেবাকে দরিদ্র মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে পারব বলে আশা করি।
![ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার](http://media.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2015%2F09%2F05%2F615dc5f802e70c0cafe1abb7064f1c2e-11.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress)
ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার: কমিউনিটি ক্লিনিকের অনেক সফলতা আছে। গত ২২ আগস্ট সফল ক্লিনিক পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি সেবাকর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য ই-লার্নিংয়ের উদ্বোধন হলো। এটাকে অবশ্যই প্রশংসা করতে হবে। এর ফলে তাদের সেবার মান বাড়বে।
দেশে এখন ১৩ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। সবগুলো সমান চলছে তা কিন্তু না। কোনো কোনো ক্লিনিকে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী আসে। কোনো কোনোটায় হয়তো ৫ থেকে ১০ জন রোগীও আসে।
ওয়ার্ল্ড ভিশন ৮০টি ক্লিনিককে ভালোভাবে কার্যকর করতে পেরেছে। তাদের এ উদ্যোগ দেশের অন্য ক্লিনিকগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো উচিত বলে মনে করি। একই সঙ্গে সেভ দ্য চিলড্রেন ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ তাদের কর্ম-এলাকায় অনেক সফলতা অর্জন করেছে।
এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিককে সফল করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। হয়তো অনেক কমিউনিটি ক্লিনিক ভালো করতে পারছে না। কেন পারছে না, তাদের সমস্যা কোথায়? তদন্ত করে এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার, কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ ও উন্নয়ন সহযোগীদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে।
সব ক্লিনিককে সমানভাবে কাজে লাগাতে পারলে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। তবে গণমাধ্যমের উচিত ব্যর্থতার সঙ্গে সঙ্গে সফলতাগুলো তুলে আনা।
সরকার হাওর, উপকূল ও পাহাড়ি এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকের ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম সেখানকার চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে প্রতিবেদন করতে পারে। তাহলে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সমস্যা চিহ্নিত করে কাজ করা সহজ হবে। কোনো কোনো ক্লিনিকে ৫০ জনের বেশি রোগী হয়। কোথাও হয়তো ১০ জন রোগী হয়। এ জন্য চাহিদার ভিত্তিতে ওষুধ সরবরাহ করলে ওষুধের সমস্যা থাকবে না। সবার প্রচেষ্টায় কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনছে বলে মনে করি।
![আতিকুল হক](http://media.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2015%2F09%2F05%2Faf678c2e33d8d69e1218d565e7845621-12.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress)
আতিকুল হক: ওয়ার্ল্ড ভিশন সফলভাবে কাজ করেছে, এটা আমরা শুনে আসছি। কিন্তু তাদের কোনো গবেষণাধর্মী ফল নেই। ওয়ার্ল্ড ভিশন তাদের প্রকল্পের মূল্যায়ন করার জন্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। শিশুস্বাস্থ্যের বিষয়টি কেবল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার বিষয় হিসেবে দেখতে চাই না। যেমন শিশুর ডায়রিয়া হলো, জ্বর হলো, ওষুধ দিলাম সেরে গেল, বিষয়টি এমন না। শিশুস্বাস্থ্যের বিষয়টি সামগ্রিকতায় দেখতে হবে। যেমন শিশুকে মারধর করা, অতিরিক্ত বকাঝকা করা ইত্যাদি তার স্বাস্থ্যের ওপর, মানসিকতার ওপর প্রভাব ফেলে। একটি শিশুকে সুন্দর মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে তার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।
আব্দুল কাইয়ুম: কমিউনিটি ক্লিনিক সরকারের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ উদ্যোগ। এর ফলে গ্রামের দরিদ্র মানুষ তার বাড়ির পাশে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভালো স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। কোনো কোনো জায়গায় হয়তো সমস্যা রয়েছে।
দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিক যেন গ্রামের দরিদ্র মানুষকে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারে, এ জন্য সরকার, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি গ্রুপ ও সাপোর্ট গ্রুপসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আরও উদ্যোগী হবেন বলে আশা করি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
আলোচনায় সুপারিশ
* ডাক্তারদের দুই বছর গ্রামে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কেউ এক দিনও কম থাকতে পারবেন না
* কমিউনিটির ছয়-সাত হাজার মানুষকে কীভাবে ক্লিনিকের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে সে বিষয়টিও ভাবতে হবে
* সরকারের স্বাস্থ্যসেবার মূল ধারায় পুষ্টির বিষয়টি আনতে হবে
* সেবাদানকারীরা অকপটে বলেছেন, তাঁদের তিন মাসের প্রশিক্ষণ যথেষ্ট নয়। আরও প্রশিক্ষণ হলে ভালো হয়
* কমিউনিটি ক্লিনিকের ধারণাটি প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা থেকে এসেছে। তিনি প্রতি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য একটি ট্রাস্ট ফান্ড তৈরির কথা বলেছেন
* সব ক্লিনিককে সমানভাবে কাজে লাগাতে পারলে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে
স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক
দেশে ১৩ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। প্রতিটি ক্লিনিক ছয় হাজার মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে। কমিউনিটি গ্রুপ, কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপ ও স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা এসব ক্লিনিক পরিচালনা করছেন। কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমান সরকারের গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর রক্ষণাবেক্ষণ ও সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে
* গর্ভবতী মায়েদের প্রসব–পূর্ব ও পরবর্তী সেবা দেওয়া হয়
শিশুর সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা
স্ক্রিনিং অব ক্রনিক নন–কমিউনিকেবল ডিজিজ—ডায়াবেটিস, হাইপারটেনসন, আর্সেনিকোসিস, ক্যানসার, হার্টডিজিজ, চাইল্ট ক্লাবফিট, অটিজম ইত্যাদি
নিউট্রিশনাল এডুকেশন ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সাপ্লিমেন্ট
স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা শিক্ষা এবং পরামর্শ
উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফারেলের চেষ্টা করা
যাঁরা অংশ নিলেন
দীন মো. নুরুল হক : মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মহাখালী, ঢাকা
মাখদুমা নার্গিস : অতিরিক্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালক, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়
চন্দন জেড গোমেজ : অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর, ওয়ার্ল্ড ভিশন, বাংলাদেশ
আবদুল খালেক : প্রভাষক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
রওশন আরা বেগম : ম্যাটারনাল হেলথ স্পেশালিস্ট, এনএইচএসডিপি
আতিকুল হক : অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
গোলাম মোদাব্বীর : সিনিয়র অ্যাডভাইজর, হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন, সেভ দ্য চিলড্রেন
ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ
মুনিরুজ্জামান বিপুল : উপকর্মসূচি ব্যবস্থাপক, গেইন বংলাদেশ
জয়ন্ত নাথ : আঞ্চলিক স্বাস্থ্য সমন্বয়ক, ওয়ার্ল্ড ভিশন, বাংলাদেশ
শিপন হাবিব : নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক যুগান্তর
মো. ইউসুফ আলি : কমিউনিটি প্রতিনিধি
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো