বার্কলেতে বাংলাদেশ গবেষণা কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু আজ

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলেতে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ, যার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার কথা সোমবার (বাংলাদেশ সময় আজ মঙ্গলবার সকালে)। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রথম বাংলাদেশ বিষয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বতন্ত্র গবেষণাকেন্দ্র স্থাপিত হলো। উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকা থেকে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দিচ্ছেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী স্যার ফজলে হাসান আবেদ।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে—যা শুধু বার্কলে বা ইউসি বার্কলে নামে পরিচিত—আমেরিকার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি। সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত এই বিশ্ববিদ্যালয় একদিকে তার লেখাপড়ার মানের জন্য যেমন পরিচিত, তেমনি খ্যাত তার উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য।
উদ্বোধনের প্রাক্কালে প্রথম আলোর সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে কেন্দ্রের পরিচালক সঞ্চিতা সাক্সেনা বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু আমেরিকার নয়, বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেকোনো দেশের ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া ও গবেষণার সুযোগ পাবে। গার্মেন্টস খাত, আর্সেনিক সমস্যা, জলবায়ু-সংকটসহ বাংলাদেশের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে এই কেন্দ্রে অধ্যয়ন ও গবেষণার সুযোগ থাকবে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য অধ্যয়নেরও অন্যতম ক্ষেত্র। কেন্দ্রটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চট্টগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ উইমেন্স ইউনিভার্সিটির সঙ্গে অনুরূপ একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এসব চুক্তির ফলে কেন্দ্রের সঙ্গে ছাত্রছাত্রী বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সাক্সেনা জানান, বার্কলেতে আগে থেকেই দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক একটি ইনস্টিটিউট আছে, যার অধীনে বাংলাদেশ প্রশ্নটিও বিবেচিত হতো। এখন শুধু বাংলাদেশবিষয়ক একটি ভিন্ন কেন্দ্র স্থাপিত হওয়ায় বাংলাদেশ প্রশ্নে বিভিন্ন গবেষণার নানা দিগন্ত উন্মোচিত হবে। ১৯১৩ সাল থেকে কেন্দ্রটি চালু হলেও আজ থেকেই তা আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবে।
এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশ থেকে আগত ব্যবসায়ী সুবীর চৌধুরীর বদান্যতায়। তিনি কেন্দ্রের জন্য ১০ লাখ ডলার দান করেছেন। সে কারণে কেন্দ্রটি সুবীর অ্যান্ড মালিনী চৌধুরী সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ নামে পরিচিত হবে।
সাক্সেনা জানান, প্রাথমিকভাবে এই অর্থ থেকে কেন্দ্রের কার্যনির্বাহ ও গবেষকদের জন্য ফেলোশিপের তহবিল পাওয়া যাবে। অন্যান্য সূত্র থেকেও তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কোনো ভূমিকা আছে কি না, জানতে চাওয়া হলে সাক্সেনা জানান, তাঁরা এখনো এই প্রশ্নে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, তবে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দাতার কাছে যোগাযোগের ইচ্ছা তাঁদের রয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ব্যক্তিগত খাতের সঙ্গে জড়িত এমন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্য সহযোগিতার ব্যাপারে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসও এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে, সেখান থেকেও তহবিল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর্সেনিক, গার্মেন্টস ও জলবায়ু-সংকট ছাড়াও কেন্দ্রটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পয়োনিষ্কাশন প্রশ্নে গবেষণায় অগ্রাধিকার দেবে। সাক্সেনা জানান, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও রাজনীতিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ও তাঁদের অধ্যয়নের অন্তর্ভুক্ত হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতা প্রশ্নে একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইতিমধ্যে তাঁর গবেষণা শুরু করেছেন বলে তিনি জানান। সামাজিক সমস্যা সমাধানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিয়েও এই কেন্দ্র গবেষণায় আগ্রহী। শিল্প-সাহিত্যসহ মানবিক শাখার যেকোনো প্রশ্নে গবেষণার জন্য আবেদন বিবেচনায় কেন্দ্র আগ্রহী হবে বলে সাক্সেনা জানান। তিনি আরও জানান, প্রতিবছর কেন্দ্রটিতে ১০-১২ জন ছাত্র বাংলা ভাষা শিখছে। এসব ছাত্রছাত্রীর কেউ কেউ দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত, তবে তার বাইরেও অনেকে বাংলা শেখায় আগ্রহী।
ব্র্যাকের সঙ্গে কেন্দ্রের সহযোগিতার কারণ ব্যাখ্যা করে সাক্সেনা জানান, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে একটি অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। এ ব্যাপারে ব্র্যাকের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। এটা মোটেই কাকতালীয় নয় যে স্যার আবেদ এই কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ‘নীরব বিপ্লব’ শীর্ষক মুখ্য ভাষণ দিতে আমন্ত্রিত হয়েছেন।