ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের ৪ নম্বর কূপ থেকে পরীক্ষামূলক গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়েছে। গত সোমবার কূপটির প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। এতে প্রায় চার হাজার পিএসআই (প্রতি ইঞ্চিতে চার হাজার পাউন্ড) চাপে দুই কোটি ৮০ লাখ ঘনফুটেরও বেশি গ্যাস প্রবাহিত হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানির (বাপেক্স) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব ছারোয়ার গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, কূপটির সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করা হয়েছে। এখন ওই কূপ থেকে গ্যাস সরবরাহ করার জন্য তাঁরা প্রস্তুত। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডও (পিডিবি) তাঁদের জানিয়েছে, ডিসেম্বর নাগাদ ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস দিতে হবে।
গ্যাসক্ষেত্রটিতে রাশিয়ার কোম্পানি গ্যাজপ্রম দুটি (৩ ও ৪ নম্বর) কূপ খনন করেছে। এ দুটির উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক প্রায় পাঁচ কোটি ঘনফুট। শাহবাজপুরের ৪ নম্বর কূপটির খনন শেষ করার মধ্য দিয়ে গ্যাজপ্রম ১০টি কূপ খনন সম্পন্ন করল। গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর জন্য সরকার এই ১০টি উন্নয়ন কূপ খননের জন্য গ্যাজপ্রমের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। এখন আরও পাঁচটি উন্নয়ন কূপ খননের জন্য গ্যাজপ্রমের সঙ্গে সরকারের নতুন একটি চুক্তি হতে পারে বলে জানা গেছে। শাহবাজপুরে গ্যাজপ্রমের দুটি ছাড়াও আগে বাপেক্সের খনন করা দুটি কূপ রয়েছে।
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বোরহানগঞ্জ ইউনিয়নের শাহবাজপুর ওই ক্ষেত্রের কেন্দ্রস্থল। রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্স ১৯৯৫ সালে ক্ষেত্রটি আবিষ্কার করে। তবে ওই গ্যাস দেশের মূল ভূখণ্ডে আনা খুব ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় ও স্থানীয়ভাবে বাণিজ্যিক ব্যবহারের তেমন সুযোগ না থাকায় ক্ষেত্রটির উন্নয়ন বিলম্বিত হয়।
এখন ওই গ্যাস ব্যবহারের জন্য ভোলায় ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি খাতের ৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র অনিয়মিতভাবে চলছে। ভোলায় আবাসিক ব্যবহারের জন্যও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।
পেট্রোবাংলার সূত্র জানায়, এর পরও শাহবাজপুরের গ্যাস ব্যবহারের পরিকল্পনা বাণিজ্যিক বিবেচনায় পূর্ণাঙ্গ নয়। কারণ, বর্তমানে ক্ষেত্রটিতে খনন করা চারটি কূপের মোট উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক প্রায় সাড়ে আট কোটি ঘনফুট। ২২৫ মেগাওয়াটের নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য লাগবে সাড়ে তিন কোটি ঘনফুট। এ ছাড়া বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও আবাসিক ব্যবহারের জন্য সর্বোচ্চ চাহিদা এখন এক কোটি ঘনফুটের মতো।
দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রে গ্যাসের প্রাকৃতিক চাপ যেখানে কখনোই চার হাজার পিএসআইয়ের বেশি ছিল না, সেখানে শাহবাজপুর ক্ষেত্রে গ্যাসের চাপ প্রায় পাঁচ হাজার পিএসআই। সমৃদ্ধ এই ক্ষেত্রটির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে বাপেক্স সেখানে ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ চালাচ্ছে।