অবৈধভাবে বসবাসের অভিযোগে রাজধানী থেকে ৩১ জন বিদেশি নাগরিককে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গতকাল শুক্রবার ভোর চারটা থেকে সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ডিবির প্রায় ৪০০ সদস্য রামপুরা, গুলশান ও উত্তরার ১৪৭টি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করেন।
আটক বিদেশিদের মধ্যে নাইজেরিয়ার ১২ জন, উগান্ডার পাঁচজন, ক্যামেরুনের চারজন, গাম্বিয়ার তিনজন, আইভোরি কোস্টের দুজন, কেনিয়া, টোগো, মালি, মোজাম্বিক ও সেনেগালের একজন করে নাগরিক রয়েছেন।
ডিবি জানিয়েছে, উগান্ডার দুজনের কাছ থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ দুটি পাসপোর্ট পাওয়া গেলেও বাকিদের কাছে ভ্রমণ-সংক্রান্ত কোনো কাগজ মেলেনি। তাঁদের কেউ কেউ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। এঁদের মধ্যে রামপুরায় ছয়জন, গুলশানে চারজন, উত্তরা পশ্চিমে ১৫ জন ও উত্তরা পূর্ব থানায় ছয়জনের বিরুদ্ধে অবৈধ বসবাসের অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা করা হয়েছে।
এই ৩১ জনকে আটকের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ডিবির উপকমিশনার (দক্ষিণ) কৃষ্ণপদ রায় জানান, ছাত্র, পোশাক ব্যবসায়ী, খেলোয়াড় ইত্যাদি পরিচয়ে এই বিদেশিরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। একপর্যায়ে তাঁদের কেউ কেউ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কোনো বিদেশিকে বাসা ভাড়া না দেওয়ার জন্য বাড়ির মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানান।
ডিবি জানিয়েছে, এর আগে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিচ্ছিন্নভাবে কিছু বিদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের বিরুদ্ধে এমন সমন্বিত অভিযান এর আগে কখনো হয়নি। বিদেশি নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও নজরদারির কাজ মূলত পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি)। কিন্তু সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে ডিবি মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করে এ অভিযান চালায়।
গত ৫ অক্টোবর উত্তরায় জুবায়ের আহমেদ নামের এক স্কুলছাত্রকে হত্যার অভিযোগে আলজেরীয় নাগরিক আবু ওবায়েদ কাদেরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে জানা যায়, তিনি এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। কিন্তু তাঁর কোনো বৈধ কাগজ, এমনকি পাসপোর্টও নেই।
গতকাল অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, জুবায়ের হত্যার পর ডিবি বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। উত্তরা, বনশ্রী, গুলশানের বিভিন্ন বাসায় অবস্থানরত বিদেশিদের তালিকা করা হয়। সেই তালিকা ধরে গতকালের অভিযানে ডিবির ৩২টি দল অংশ নেয়। সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে প্রতি দলে ১২ থেকে ১৪ জন সদস্য ছিলেন। ছয়জন অতিরিক্ত উপকমিশনার তাঁদের সমন্বয় করেন। পুরো অভিযান সমন্বয় করেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। অভিযানে সব মিলিয়ে ৩৭৫ জনের মতো বিদেশির কাগজপত্র পরীক্ষা করা হয়। তাঁদের বেশির ভাগেরই কাগজ সঠিক পাওয়া যায়। অবৈধভাবে অবস্থানরত ৩১ জনকে আটক করে সংশ্লিষ্ট চারটি থানায় হস্তান্তর করা হয়।
শেখ নাজমুল আলম বলেন, আটক ৩১ জনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অবস্থান ছাড়া আর কোনো অপরাধের তথ্য পাওয়া যায়নি। তাঁদের তথ্য যাচাই ও বাংলাদেশ থেকে বের করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে প্রক্রিয়া অনুযায়ী যোগাযোগ করা হবে। আটককৃতদের পেশা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, এঁদের ঠিকমতো জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ এখনো হয়নি। তবে কেউ ব্যবসা, কেউ খেলোয়াড় বলে ডিবিকে তথ্য দিয়েছেন।
রামপুরা, গুলশান, উত্তরা পূর্ব ও উত্তরা পশ্চিম থানায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, গতকালই তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের কেউ বিকেল পর্যন্ত কনস্যুলার সুবিধা চাননি। কোনো দেশের দূতাবাস থেকেও তাঁদের বিষয়ে কেউ যোগাযোগ করেনি।
অভিযানে অংশ নেওয়া ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আহাদ বলেন, দেশে কিছু বিদেশী বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা, মাদক ব্যবসা ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠেছে। এর আগে বিভিন্ন সময় প্রতারণা, মাদক ব্যবসা, জাল মুদ্রা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে কয়েকজন বিদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে র্যাব সূত্র জানিয়েছে, তারা গত বছর জঙ্গি, মাদক, জাল মুদ্রা তৈরি ও পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৫৩ জন বিদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করে।
গতকালের অভিযানের বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এখনো বিষয়টি বিস্তারিত জানেন না।