ছাত্রলীগের ৮৬টি কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ
দুই বছরের জন্য গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ীও কমিটির মেয়াদ দুই বছর। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে চার বছরে পদার্পণ করলেও নতুন কমিটি হচ্ছে না। এ জন্য কোনো উদ্যোগও নেই। ফলে এখন অছাত্রদের নেতৃত্বেই চলছে ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১১ সালের ১০-১১ জুলাই। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১ (খ) ধারায় বলা আছে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যকাল দুই বছর। এর মধ্যে সম্মেলনের আয়োজন করতে হবে। অন্যথায় নির্বাহী সংসদের কার্যকারিতা লোপ পাবে। কেন্দ্রীয় কমিটির তরুণ নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার জন্য বয়স নির্ধারণ করা আছে ২৯। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন হয় না বলে প্রায় সময়ই দেখা যায়, সংগঠনে যাঁরা পরবর্তী সময়ে নেতা হওয়ার জন্য ‘যোগ্য’ তাঁদের অনেকে বয়সের কারণে নেতা হতে পারছেন না।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। জেলা কমিটিগুলো দেওয়া হচ্ছে। সব সাংগঠনিক ইউনিটের সম্মেলন শেষ করেই কেন্দ্রীয় সম্মেলন দেওয়া হবে।’
শুধু কেন্দ্রীয় কমিটি নয়, ১০১টি জেলা কমিটির মধ্যে ৭৩টি কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে। কিন্তু তিন বছরেও সেগুলোতে কমিটিই করতে পারেনি বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি। তারা গত তিন বছরে যে ২৮টি কমিটি করেছে, তার মধ্যে আবার ১৩টির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ২১ (ক) ধারা অনুযায়ী প্রতিবছর জেলা শাখাগুলোর বার্ষিক সম্মেলন করার কথা থাকলেও গত তিন বছরে ২৮টির মধ্যে কেবল পাঁচটির ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে। অভিযোগ আছে, বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি অর্থ লেনদেন, অযোগ্যদের পদায়ন, ঢাকায় বসে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জেলা কমিটিগুলো করেছে। এ নিয়ে সংগঠনের মধ্যে নানা বিতর্ক রয়েছে।
জেলা কমিটিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি। এর মেয়াদ এক বছর। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির মতো এই কমিটিও চার বছরে পা দিয়েছে। ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদের কমিটি পার করেছে ১৬ বছর। মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ ও শরীয়তপুরের কমিটিগুলো প্রায় আড়াই বছর আগে ভাঙা হয়। এখনো সেভাবে আছে। ১০ মাস আগে ভেঙে দেওয়া সিলেট জেলা কমিটিরও একই দশা।
বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতির বাড়ি বাগেরহাট। তাঁর নিজ জেলার ছাত্রলীগে কমিটির মেয়াদ পার হয়েছে এক দশক আগে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের কারণে এ কমিটি গত আড়াই বছরে তিনবার স্থগিত করা হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া এ কমিটি এখনো বহাল আছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল দাবি করেছেন, গত তিন বছরে ৪২টি নতুন জেলা কমিটি দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদককে তিন দিন ঘুরিয়েও তিনি এসব কমিটির নাম-তালিকা দেননি।
আর ছাত্রলীগের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, তাতে ৭৪টি জেলা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নামের তালিকা রয়েছে। নয়টি আহ্বায়ক কমিটির তালিকা রয়েছে। ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী এখনো ১৮টি সাংগঠনিক জেলায় কোনো কমিটিই নেই। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে ওয়েবসাইটের তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল পাওয়া যায়নি।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ২৯ বছরের কম বয়স্ক ও ‘নিয়মিত’ শিক্ষার্থীরাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদে থাকতে পারেন। কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কমিটির বেশির ভাগ নেতাই এখন আর নিয়মিত ছাত্র নন। কেন্দ্রীয় সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদের অন্তত ১৭ জন বিভিন্ন ব্যবসায়ে জড়িত, অন্তত ১৮ জন সরকারি-বেসরকারি চাকরি করছেন। দীর্ঘদিনেও নতুন কমিটি না হওয়ায় সংগঠনের তরুণ নেতারা হতাশায় ভুগছেন।
পরবর্তী সম্মেলন কবে হবে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, জেলা কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করে তারপর কেন্দ্রীয় সম্মেলন দেওয়া হবে। কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে আর কত দিন লাগতে পারে তা তিনি নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি।