বিপদ বাড়াচ্ছে খোলা শরবত
পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার হাটবাজারগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে সারা দেশ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে রয়েছে। সবকিছুই স্বাভাবিক। আগের মতোই ভিড়, ঠাসাঠাসি। কেউ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না। এর ওপর চলছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গা ঘেঁষে খাওয়াদাওয়া, একই গ্লাসে শরবত পান। এই খোলা শরবত করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকেরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহামারির এই সময়ে বেড়া উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ এমনিতেই বিশুদ্ধ খাবার ও পানির সংকটে রয়েছে। এরই মধ্যে তারা হাটে গিয়ে ক্ষতিকর খোলা শরবত ও খাবার খেয়ে আরও বেশি বিপদ ডেকে আনছে।
বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার বেড়েছে। প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয়জন করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হচ্ছে। জুলাই মাসে যেখানে ৭৪ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বেড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিল, সেখানে চলতি মাসের মাত্র ১৫ দিনেই ৬০ জন ভর্তি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক জানান, বেড়ায় প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে বেশির ভাগই হাসপাতালে আসছে না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচ-ছয়জন ভর্তি হচ্ছে। বাকিরা বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছে।
সরেজমিনে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার বোয়ালমারি, করমজা, কাশিনাথপুর, নাকালিয়াসহ কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি হাটেই ৮ থেকে ১০টি করে ভ্রাম্যমাণ শরবত ও খাবারের দোকান বসছে। হাটে আসা লোকজন এসব দোকানে শরবত বা খাবারের জন্য ভিড় করছে। শরবত ও খাবার বিক্রেতাদের কারও মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে এসব বিক্রেতা গ্লাস ও থালা ভালোভাবে না ধুয়ে তাতেই শরবত ও খাবার পরিবেশন করছেন। ক্রেতাদেরও মাস্ক পরতে দেখা যায়নি।
জানা গেছে, গরমের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় হাটে গিয়েই লোকজন শরবতে আকৃষ্ট হচ্ছে। হাটে বিক্রি হচ্ছে লেবু ও আখের—দুই ধরনের শরবত। লেবুর শরবতে চিনির পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে মারাত্মক ক্ষতিকর ঘনচিনি ও স্যাকারিন। মিষ্টতার জন্য আখের শরবতেও কৌশলে ব্যবহৃত হচ্ছে একই জিনিস। শরবত বিক্রেতারা অপরিচ্ছন্ন পাত্রে যাচ্ছেতাই উপায়ে পানি সংগ্রহ করে তার সঙ্গে বরফ মেশাচ্ছেন।
সম্প্রতি বেড়া পৌরসভার পোর্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বেড়াতে আসা মানুষের কারণে সৃষ্টি হয়েছে প্রচণ্ড ভিড়। সেখানে অন্তত ১০টি শরবতের ভ্রাম্যমাণ দোকান দেখা যায়।
শরবত বিক্রেতা আবদুস সাত্তার ও রুবেল মিয়া জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির জন্য তাঁরা বেশ কিছুদিন দোকান বন্ধ রেখেছিলেন। ঈদুল আজহার সময় থেকে আবারও শরবত বিক্রি শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে অসহ্য গরম পড়ায় শরবতের চাহিদাও ব্যাপক বেড়েছে।
এদিকে হাটবাজারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খোলা অবস্থায় বিভিন্ন ফল কেটে বিক্রি করতেও দেখা যায়।
সাঁথিয়ার করমজা হাটে আখের শরবত পান করছিলেন সাঁথিয়ার সোনাতলা গ্রামের মিজানুর রহমান, বেড়ার পেঁচাকোলা গ্রামের সিরাজুলসহ ছয়-সাতজন। তাঁরা জানান, প্রচণ্ড গরমের কারণে তাঁরা শরবত পান করছেন।
বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. জাহিদ হাসান সিদ্দিকী বলেন, খোলা শরবত ও খাবারের দোকানগুলোতে ভিড় থাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে। পাশাপাশি ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ ছড়ানোর মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। একই গ্লাস ও থালায় যেভাবে গণহারে খাবার ও শরবত পরিবেশন করা হচ্ছে, তাতে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।