মৃত্যুর আগে 'তারেক মাসুদ কমপ্লেক্স' দেখে যেতে চান মা
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের জন্মভিটায় ‘তারেক মাসুদ কমপ্লেক্স’ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তাঁর মা নূরুন নাহার মাসুদ। তিনি বলেছেন, এখানে চলচ্চিত্রের ওপর গবেষণা হবে, পাশাপাশি থাকবে লাইব্রেরি ও জাদুঘর। যার মধ্য দিয়ে তারেক মানুষের অন্তরের মধ্যে বেঁচে থাকবে। তিনি সরকারে প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমার মৃত্যুর আগে আমি এ কমপ্লেক্স দেখে যেতে চাই।’
ছেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে এই দাবি জানান নূরুন নাহার মাসুদ। তারেক মাসুদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তারেক মাসুদের জন্মভিটা নূরপুরে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
কর্মসূচির শুরুতে বৃহস্পতিবার সকালে তারেক মাসুদের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন তারেক মাসুদের মা নূরুন নাহার মাসুদ (৮২)। পরে তারেক মাসুদ ফাউন্ডেশন ও ভাঙ্গা ওরিয়েন্টাল লাইব্রেরির পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এরপর বেলা ১১টায় সমাধি প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, বাংলা চলচ্চিত্রের দিক পরিবর্তনের পুরোধা ব্যক্তি তারেক মাসুদ। তিনি খুব বেশিসংখ্যক ছবি নির্মাণ করেননি। কিন্তু তাঁর নির্মিত প্রতিটি ছবি মানুষের মনে নতুন নতুন জিজ্ঞাসার জন্ম দেয়, চিন্তার খোরাক জোগায়। এ চিন্তা, এ জিজ্ঞাসা জঙ্গিবাদমুক্ত, মুক্ত চিন্তা-চেতনার একটি দেশ ও সমাজ নির্মাণের প্রেরণা জোগায়।
তারেক মাসুদ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ভাঙ্গা কে এম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাশায়েদ হোসেন ঢালির সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ভাঙ্গা মহিলা কলেজের প্রভাষক হেদায়েত হোসেন, ভাঙ্গা কৃষক সমিতির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিকী, ভাঙ্গা উপজেলা উদীচীর সভাপতি মিঞা বে-নজীর আহমদ, তারেক মাসুদ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ মাসুদ, সংস্কৃতিকর্মী মোস্তাক খান প্রমুখ।
বক্তারা আরও বলেন, ‘তারেক মাসুদ বেঁচে থাকবেন তাঁর সৃষ্টির মধ্যে, তাঁর কর্মের মধ্যে। তাঁকে প্রতিনিয়ত আবিষ্কার করতে হবে তাঁর সৃষ্টির মধ্যেই। তারেক মাসুদের চিন্তা-চেতনা, ধ্যান ও ধারণা সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে এবং তাঁর আদর্শের মশাল নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট ‘কাগজের ফুল’ চলচ্চিত্রের চিত্রধারণের লোকেশন দেখে ঢাকায় ফেরার পথে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে তারেক মাসুদকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি। বিপরীতমুখী চুয়াডাঙ্গা এক্সপ্রেসের একটি বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত হন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন। ‘মুক্তির গান’, ‘মাটির ময়না’, ‘আদম সুরত’, ‘রানওয়ে’র মতো সাড়া জাগানো চলচ্চিত্রের নির্মাতা ছিলেন তারেক মাসুদ।