জলকপাট বানাতে গিয়ে বেহাল সড়ক, বিপাকে সাবমেরিন ল্যান্ডিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ
সড়কের মধ্যে হঠাৎ দেবে গেছে প্রায় ৩০ ফুট জায়গা। তাতে জমে আছে কাদামাটি। সেখান দিয়ে যানবাহন চলা তো দূরের কথা, হেটে পার হওয়াই যেন দুরূহ ব্যাপার। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে এই পথ দিয়ে চলাচল করছে স্থানীয় ব্যক্তিরা।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আলীপুর-অনন্তপাড়া সড়কের গোড়া আমখোলাপাড়ায় নির্মাণাধীন জলকপাট এলাকার চিত্র একটি। মৎস্য বন্দর আলীপুর থেকে পূর্বদিকে এগোলেই তা চোখে পড়বে। ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কের ৫টি স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে এমন জলকপাট। সব কটি জায়গায় সড়ক এমন বেহাল। সড়কের বাকি অংশের ইট–সুরকিও উঠে প্রায় চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে কুয়াকাটায় যাওয়ার বিকল্প হিসেবে পরিচিতি এই সড়কের এমন দশার ফলে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় আসা পর্যটকদের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে কুয়াকাটা সাবমেরিন ল্যান্ডিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ। গোড়া আমখোলাপাড়ায় সড়কটির নিকটবর্তী জায়গায় প্রথম শ্রেণির এই কেপিআই প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত।
সাবমেরিন ল্যান্ডিং স্টেশন কর্তৃপক্ষের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. তরিকুল ইসলাম জানান, সমুদ্রতলের মূল কেব্লের সঙ্গে সংযোগকারী ল্যান্ড অপটিক্যাল ফাইবার ও পাওয়ার কেব্ল এই স্টেশন থেকে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত বিস্তৃত। যার নিরাপত্তা বিধানের জন্য কুয়াকাটা সাবমেরিন কেব্ল ল্যান্ডিং স্টেশন কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তাকর্মীদের মোটরসাইকেল, পিকআপে করে টহল দিতে হয়। এ ছাড়া স্টেশনের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে জেনারেটর পরিচালনার জন্য ডিজেল পরিবহনসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতে এ সড়কটি ব্যবহার করতে হয়।
তরিকুল ইসলাম জানান, কুয়াকাটা সাবমেরিন কেব্ল ল্যান্ডিং স্টেশনের ব্যান্ডউইথের ধারণক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংবেদনশীল টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি এ সড়ক দিয়ে পরিবহন করতে হবে। সড়ক ও জলকপাট এলাকার দুরাবস্থার জন্য টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিদেশি প্রকৌশলীরা স্টেশনে আসতে পারছেন না। বিদেশি প্রকৌশলীদের আসার তারিখ এর আগেও দুই দফা নির্ধারণ করে বাতিল করা হয়েছে।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের গোড়া আমখোলাপাড়া অংশে জলকপাট নির্মাণের কাজ চলছে। তবে এখনও কাজ শেষ হয়নি। প্রবল বর্ষণে জলকপাট এলাকার ওপরের মাটি দেবে নেমে গেছে। যার ফলে কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস চলতে পারে না। শুধু মোটরসাইকেলে করে মানুষজন চলাচল করে। কিন্তু রাস্তার এমন দশার জন্য গর্তে পড়ে, এমনকি রাস্তার বাইরে উল্টে পড়ে প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ। গতকাল দুপুরে বায়েজিদ হোসেন (২৫) ও নুর হোসেন (৩০) নামের দুজন যাত্রী মোটরসাইকেল নিয়ে উল্টে পড়ে আহত হন। সড়কটির মাইটভাঙ্গা ও লক্ষিবাজারে একটি এবং চাপলীবাজার এলাকায় দুটি জলকপাটের নির্মাণ কাজ চলছে। কাজ শেষ না করে সবগুলো ফেলে রাখা হয়েছে।
শুধু জলকপাট এলাকার দুরাবস্থা নয়, এ সড়কটিরও বিভিন্ন অংশের বিটুমিন উঠে গিয়ে খোয়া-বালু বের হয়ে গেছে। কোনো কোনো অংশের দুই পাশের মাটি পর্যন্ত ভেঙে পড়ে গিয়ে সড়কও সংকুচিত হয়ে গেছে। প্রবল বর্ষণের কারণে সড়কটিতে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
কুয়াকাটা সাবমেরিন কেব্ল ল্যান্ডিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, সড়ক ও জলকপাটের এমন দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক, পটুয়াখালীর স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী, কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী এবং কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) চিঠি দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাউবোর উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি)-১–এর আওতায় ওই সড়কের বিভিন্ন অংশে জলকপাট নির্মাণ কাজ চলছে। প্রকল্পের পরামর্শক মো. মজিবুর রহমান জানান, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এ কাজ শুরু হয়। সড়কটির বিভিন্ন অংশে বেশ কিছু ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার ট্রাক, ছয় চাকার ট্রলি চলাচল করায় সড়কসহ নির্মাণাধীন জলকপাট এলাকার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।
বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘সড়কটির ওই অংশের ভয়াবহ অবস্থার জন্য আমাদের কাজে মারাত্মক অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, কুয়াকাটা সাবমেরিন কেব্ল ল্যান্ডিং স্টেশনের ধারণক্ষমতা বাড়ানোর কাজ বিলম্বিত হলে দেশের ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।’
কলাপাড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, জলকপাটগুলোতে এখন মাটির কাজ যা বাকি আছে, এটি দ্রুত শেষ করা হবে। এলজিইডি যদি ওই সড়কের ওপর রাস্তা করতে চায়, সেক্ষেত্রে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই। তবে বাঁধের ওপর তাঁদের যে রাস্তা আছে, তার নকশা-পরিকল্পনা ঠিক রেখে করতে পারবে। কোন জায়গা থেকে কোন জায়গা পর্যন্ত রাস্তা করবে এলজিইডি তার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিলে কাজ করার অনুমতি দেওয়া যাবে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জরুরিভাবে ওই সড়কের ছয়টি অংশে মেরামত করার উদ্যোগ নিয়েছি। অচিরেই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আমরা সড়ক এলাকা সুনির্দিষ্ট করে পত্র দেব। তারা অনাপত্তি দিলে প্রাক্কলণ তৈরি করে আমরা পুরো সড়কটিই নতুন করে নির্মাণ করব।’