লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বোমা বিস্ফোরণে আজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত চারজন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ওই হামলায় ৯৯ জন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে প্রবাসী কর্মী ৭৮ জন এবং অন্য ২১ জন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্য। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
আজ সন্ধ্যায় লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের দূতালয় প্রধান আবদুল্লাহ আল মামুন সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত চার বাংলাদেশির মৃত্যুর বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস নিশ্চিত হতে পেরেছে। নিহতরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেহেদি হাসান, রাসেল মিয়া, কুমিল্লার রেজাউল ও মাদারীপুরের মিজান।’ তিনি জানান, নিহতরা দেশটিতে বৈধ কর্মী হিসেবে কাজ করতেন।
এর আগে লেবাননে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আল মুস্তাহিদুর রহমান এক ভিডিও বার্তায় বলেন, বৈরুতের দুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই বাংলাদেশি মারা গেছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। হাসপাতালে আহতদের সুচিকিৎসার জন্য দূতাবাস সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। আহতদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বিস্ফোরণস্থলের দুই শ গজের মধ্যে মোতায়েন করা ছিল নৌবাহিনীর একটি জাহাজ। বিস্ফোরণের পরপরই দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়ে আমরা বিস্ফোরণস্থলে পৌঁছাই। বৈরুত বন্দরে মোতায়েন করা জাহাজ বিএনএস বিজয়-এর কাছে গিয়ে জাহাজটির ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলি। তখন আমরা দেখতে পাই, জাহাজের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আর নাবিকসহ নৌবাহিনীর অন্তত ১৮ জন সদস্য আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত নৌবাহিনীর সদস্যের মাথায় আঘাত লেগেছে। তাদের দ্রুত আমেরিকান হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার পর তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যজনের অবস্থা গুরুতর থাকায় তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিস্ফোরণের বর্ণনা দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আল মামুন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় ঢুকছি, এমন সময় চারতলায় আমার ফ্ল্যাটে কম্পন অনুভব করলাম। সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলাম। নামার পর দেখলাম, নিচে অনেক লোকজন জড়ো হয়েছেন। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি লাল ধোঁয়ার কুণ্ডলী। প্রথমে ভেবেছিলাম মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রতিনিয়ত হামলার ঘটনা ঘটে থাকে, এটা হয়তো তেমন কিছু। ১৫ মিনিটের মধ্যে ইউটিউব আর বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত খবর থেকে জানা গেল, বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।’
লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের দূতালয় প্রধান জানান, বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণের খবর জেনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে মেরিটাইম টাস্কফোর্সের অধীনে বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ ‘বিজয়’ এর খোঁজ নিলাম। নৌবাহিনীর সদস্যরা জানান, তাদের জাহাজটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তখন জাহাজে গিয়ে আহত নৌবাহিনীর সদস্যদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাবু সাহা ২৫ ধরে লেবাননে কাজ করছেন। বিস্ফোরণের সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে বাবু সাহা এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘মঙ্গলবার বিস্ফোরণের সময়টাতে বাসার পাশের পার্কিংয়ে বসে ছিলাম। হঠাৎ ভূমিকম্পের মতো কিছু একটা ঘটেছে মনে হলো। উঠে বসার পর লক্ষ্য করলাম আমার পেছনের ১৩ তলা ভবনটি দুলছে। সামনের ১৭ তলা ভবনও দুলছে। মাটিতে দাঁড়ানোর পর মনে হলো ভূমিকম্প শুরু হয়েছে আমি কোন দিকে যাব, ভেবে পাচ্ছিলাম না। কারণ ভবন হেলে তো আমার ওপরই পড়বে। হঠাৎ দেখলাম ভবনের কাচ ভেঙে পড়ছে। এটা দেখে দাঁড়িয়ে থাকলাম। মিনিট দশেক পরে আকাশে দেখতে পেলাম ধোঁয়ার কুণ্ডলী।’