সাহেদের কোমরে দড়ি, আদালতে নিজের পক্ষে যুক্তি
করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে কোমরে মোটা দড়ি বেঁধে ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি নিজের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ডিবি কার্যালয় থেকে সাহেদকে আদালতে নেওয়া হয়। বেলা ১১টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত শুনানি নিয়ে সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই মামলায় রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজকে ১০ দিন ও কর্মী তরিকুল ইসলামের ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ সাহেদের গায়ে ছিল নীল রঙের শার্ট। শরীরে ছিল বুলেট প্রুফ জ্যাকেট। মাথায় হেলমেট। চোখে কালো চশমা।
সাহেদ আদালতকে বলেন, ‘স্যার, যখন কেউ করোনার চিকিৎসা দিতে এগিয়ে আসেনি, তখন আমি, আমার হাসপাতাল এগিয়ে এসেছিল। সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছি। আমি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। আমার বাবা করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আমার ব্যবস্থাপনা পরিচালক করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে এক মাস আমাকে বাসায় থাকতে হয়েছে।’
করোনা সংক্রমিত ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি করেন। তবে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে রিজেন্টের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া করোনা সংক্রমিত রোগীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
এসব অভিযোগ পাওয়ার পর র্যাব রিজেন্ট হাসপাতাল অভিযান চালায়। করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার প্রমাণ পেয়ে র্যাব রিজেন্টের সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করে। সাহেদ পলাতক ছিলেন। গতকাল বুধবার ভোরে সাতক্ষীরায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় র্যাব। বিকেলে তাঁকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করে র্যাব। রিজেন্টের জালজালিয়াতি অভিযোগের তদন্ত করছে ডিবি।
আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) বলেছে, সাহেদ নিজেকে ক্লিন ইমেজের লোক বলে দাবি করেন। তবে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রকৃতপক্ষে সাহেদ একজন ধুরন্ধর, অর্থলিপ্সু ও পাষণ্ড প্রকৃতির লোক। অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে তাঁদের কাছে মানুষের জীবন-মৃত্যুর কোনো মূল্য নেই। সাহেদ তাঁর সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ও চিকিৎসা দেওয়ার নামে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সাহেদের প্রতারণার বিষয়টি জানার পর কোনো রোগী যদি প্রতিবাদ করতেন, তাঁদের তিনি বিভিন্নভাবে হুমকি দিতেন। এর ফলে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পেতেন না। গত মার্চ মাস থেকে এখন পর্যন্ত সাহেদ করোনার ভুয়া রিপোর্ট ও চিকিৎসার প্রতারণার মাধ্যমে তিন থেকে চার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু আদালতকে বলেন, সাহেদ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। এর কোনো ক্ষমা নেই। সাহেদ হলেন দেশের শত্রু। তিনি ও তাঁর সহযোগীরা ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সাহেদের আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, সাহেদ ষড়যন্ত্রের শিকার। ছয় হাজার করোনার ভুয়া রিপোর্ট তৈরির অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। কোনো ভুক্তভোগী এই মামলা করেননি। মামলায় সাহেদসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে রিমান্ডের আদেশ দেন।
১০ বছর আগে ঢাকার একটি আদালত সাহেদকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাঁকে ৫৩ লাখ টাকা জরিমানা করেন। আদালত থেকে সাহেদের বিরুদ্ধে সাজার পরোয়ানা জারি করা হয়। তবে তিনি অধরা থাকেন।
সাহেদের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ সারা দেশে ৫০টির বেশি মামলা রয়েছে। মামলাগুলোর বেশির ভাগই প্রতারণার মামলা। ২০০৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এই মামলাগুলো হয়।