প্রাণ বাঁচাতে অক্সিজেন ব্যাংক

করোনায় আক্রান্ত মানুষের শ্বাসকষ্টের যন্ত্রণা দূর করতে স্থাপন করা হয়েছে অক্সিজেন ব্যাংক। ঢাকার তেজগাঁওয়ে পে ইট ফরওয়ার্ডের কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ডিপোতে। গত শুক্রবার।  ছবি: সংগৃহীত
করোনায় আক্রান্ত মানুষের শ্বাসকষ্টের যন্ত্রণা দূর করতে স্থাপন করা হয়েছে অক্সিজেন ব্যাংক। ঢাকার তেজগাঁওয়ে পে ইট ফরওয়ার্ডের কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ডিপোতে। গত শুক্রবার। ছবি: সংগৃহীত

ঈদের কয়েক দিন পর থেকে জ্বরে ভুগছিলেন ব্যবসায়ী মো. রুমান উদ্দিন আহমেদ। ৮ জুন মধ্যরাতে হঠাৎ প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ঢাকার উত্তরার এই বাসিন্দার। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তারা ভর্তি করাতে রাজি হচ্ছিল না। এদিকে অক্সিজেনের পরিমাণও কমতে থাকে দ্রুত।

এ রকম অসহায় অবস্থায় হাসপাতালের সামনে থেকে রুমানের চিকিৎসক বোন তৌহিদা বেগম অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য ফোন দেন পরিচিত ইকবাল তানজীরকে। তিনি খোঁজ দেন অক্সিজেন ব্যাংকের। সেখানে ফোন করার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসে অক্সিজেন। শেষ পর্যন্ত প্রাণে রক্ষা পান রুমান।

প্রতিদিন এ রকম অনেক পরিবারের অক্সিজেন সিলিন্ডারের দুশ্চিন্তা দূর করছে অক্সিজেন ব্যাংক। করোনার সময়ে অক্সিজেন-সংকটে ভুগতে থাকা মানুষের পাশে দাঁড়াতে এই ব্যতিক্রমী ব্যাংক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান পে ইট ফরোয়ার্ড, মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও নেসার ফাউন্ডেশন।

চট্টগ্রামে শুরু হওয়া এই উদ্যোগ এখন ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা-রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। একই সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে টেলিমেডিসিন সেবা।

যেভাবে শুরু

করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন শ্বাসকষ্ট নিয়ে। অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুও হচ্ছিল অনেকের।

অক্সিজেন নিয়ে মানুষের এই দুর্ভোগ নাড়া দেয় চট্টগ্রামের আলোচিত অজ্ঞাতনামা রোগীদের বন্ধুখ্যাত সাইফুল ইসলাম নেসারকে। মুমূর্ষু রোগীরা যাতে অক্সিজেনের অভাবে মারা না যান, সে জন্য ৪ জুন কাজ শুরু করে দেন তিনি। তাঁর কাছে ছিল একটিমাত্র অক্সিজেন সিলিন্ডার।

নেসারের এই উদ্যোগে শামিল হয় পে ইট ফরোয়ার্ড ও মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। সহায়তা দেয় ঢাকা ও চট্টগ্রামের অন্তত ২৫টি রোটারি ক্লাব। আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসেন পে ইট ফরোয়ার্ডের সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

>

পে ইট ফরোয়ার্ডসহ তিন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ। অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়া হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও যশোরে।

অক্সিজেন ব্যাংক গঠনের উদ্দেশ্য তুলে ধরে পে ইট ফরোয়ার্ডের স্বপ্নদ্রষ্টা বাদল সৈয়দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অক্সিজেনের অভাবে মানুষের মৃত্যুর সংবাদ পাচ্ছিলাম। এটি ভীষণভাবে আমাদের নাড়া দিতে থাকে। এর থেকে উত্তরণের জন্য অক্সিজেন ব্যাংক করার উদ্যোগ নিই। এর মধ্যে পে ইট ফরোয়ার্ডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য নেসার একটিমাত্র অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে কাজ শুরু করে দেন। আমরা তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।’

সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন

৪ জুন চট্টগ্রামে এই অক্সিজেন ব্যাংকের সেবা শুরু হয়। একটি সিলিন্ডারের জায়গায় এখন আছে ৫০টি। ঢাকায় ১৭ জুন থেকে ১০০ সিলিন্ডার নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সেবা দেওয়া শুরু করেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। যদিও অনানুষ্ঠানিকভাবে এর ১০ দিন আগে থেকে মানুষের কাছে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল। একই দিন রাজশাহী ও যশোরের মানুষদের জন্যও এই সেবা চালু হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে কক্সবাজার, খুলনা ও সিলেটে চালু হবে বলে জানান উদ্যোক্তারা।

পে ইট ফরোয়ার্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওয়াহিদ হোসেন জানান, অক্সিজেন ব্যবহারের জন্য কোনো ফি নেওয়া না হলেও নিরাপত্তা জামানত হিসেবে ১০ হাজার টাকা দিতে হয় ব্যবহারকারীকে। পরে তা ফেরত দেওয়া হয়। অবশ্য কেউ জমা দিতে না পারলে পরিস্থিতি বিবেচনায় বিনা জামানতেও সিলিন্ডার দেবেন তাঁরা।

মধ্যরাতে অক্সিজেন পেয়ে প্রাণ ফিরে পাওয়া রুমান উদ্দিনের বোন চিকিৎসক তৌহিদা বেগম বলেন, ‘কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই। অত রাতে এত সহজে অক্সিজেন পাব, কল্পনায় ছিল না। খুবই ভালো উদ্যোগ। মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।’