'চতুর্মুখী প্রেমের দ্বন্দ্বে' খুন হন বড়াইগ্রামের মোবারক
গৃহবধূর চতুর্মুখী প্রেমের দ্বন্দ্বের জের ধরে নাটোরের বড়াইগ্রামে ইকোরী গ্রামের মোবারক হোসেন খুন হন বলে জানিয়েছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের তিন দিনের মাথায় গ্রেপ্তার হওয়া তিন তরুণ গতকাল বৃহস্পতিবার পৃথক তিন বিচারকের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য উল্লেখ করেছেন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আরেক আসামিও আজ শুক্রবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত সোমবার (১৫ জুন) বিকেলে ইকোরী গ্রামের বেড়ী বিলে গরু চরাতে গিয়ে কৃষক মোবারক হোসেন নিখোঁজ হন। সন্ধ্যায় বিলের একটি পাটখেত থেকে তাঁর হাত-পা বাঁধা মৃতদেহ উদ্ধার হয়। রহস্যজনক এ ঘটনায় মোবারকের স্ত্রী রানী বেগম বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ সন্দেহভাজনদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে হত্যার রহস্য উন্মোচন করে।
হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন নিয়ে আজ শুক্রবার দুপুরে নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করে। পুলিশ সুপার আসামিদের ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে জানান, হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা সোনাবাজু গ্রামের কাচু খাঁর স্ত্রী আরিফা খাতুন (৩০)। তিনি গোপনে অন্য তিন আসামিসহ নিহত মোবারকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সম্প্রতি মোবারক হোসেন বিষয়টি গ্রামের মানুষকে জানিয়ে দেন। এ নিয়ে আসামিদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ঘটনার দিন (১৫ জুন) মোবারক বিলে গরু চরাতে গেলে আরিফা খাতুন সেখানে গিয়ে তাঁকে দৈহিক মেলামেশার প্রস্তাব দেন। তিনিও রাজি হয়ে আরিফাকে নিয়ে পাটখেতে যান। এ সময় সেখানে আগে থেকে লুকিয়ে থাকা অন্য আসামিরা তাঁকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে চলে যান।
গ্রেপ্তার আরিফা খাতুন (৩০), রশিদ প্রাং (৩৮) ও আসাদুল ইসলাম (৩৫) গতকাল বৃহস্পতিবার নাটোরের পৃথক তিন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জিহাদ আলী (৩২) নামের আরও এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে। তিনিও শুক্রবার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, আসামিদের একই দিনে ভিন্ন ভিন্ন বিচারকের কাছে জবানবন্দি প্রদানের মধ্য দিয়ে ঘটনার সত্যতার ব্যাপারে চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। জবানবন্দি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তাঁরা হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে অভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন।
মামলার তদারকি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) আবুল হাসনাত জানান, তদন্তের শুরুতে তাঁরা সন্দেহভাজনদের মুঠোফোন পর্যবেক্ষণ করে কোনো তথ্যই উদ্ধার করতে পারেন না। পরে আরিফা খাতুনের মুঠোফোন পরীক্ষা করে দেখা যায় তাঁর ফোনের সিম উল্টো করে লাগানো ছিল। তাতে পুলিশের সন্দেহ বাড়ে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁরা পুরো ঘটনা স্বীকার করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বড়াইগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন আলী জানান, গৃহবধূ আরিফা খাতুনের চতুর্ভুজ প্রেমের দ্বন্দ্বে মোবারক হোসেনকে প্রাণ দিতে হয়েছে। তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য একই সঙ্গে নিহত মোবারকসহ অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যেতেন।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরামুল হোসেন, বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলীপ কুমার উপস্থিত ছিলেন।