কুষ্টিয়ায় বিক্ষোভের মুখে বিপণিবিতান চালু
কুষ্টিয়ায় ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের মুখে বিপণিবিতানসহ সব ধরনের দোকানপাট খুলে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে সকাল নয়টার দিকে দোকান খুলে দেওয়ার দাবিতে শহরের এন এস সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় পুলিশ মাইকিং করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ব্যবসায়ীরা থানা ঘেরাও করেন। পরে ব্যবসায়ী নেতারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করেছে। তবে পুলিশ বলছে, তারা শুধু মৌখিকভাবে নিষেধ করেছেন। উল্টো ব্যবসায়ীরা তাঁদের হুমকি দিয়েছেন। ইটপাটকেল ছুড়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, আজ সকাল নয়টার পরপরই শহরের বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এন এস সড়কে জড়ো হন ব্যবসায়ীরা। অনেকে দোকান খোলা শুরু করেন। অনুমতি ছাড়া দোকান খোলা যাবে না বলে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে মাইকিং করে পুলিশ। এতে ব্যবসায়ীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁরা দলবদ্ধ হয়ে মহড়া দিতে থাকেন। অনেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন। পুলিশ শান্তভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ব্যবসায়ীরা থানা ঘেরাও করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় থানার ফটকে সতর্ক অবস্থান নেয় পুলিশ। পরে জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এবং জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি রবিউল ইসলামসহ কয়েকজন নেতা ব্যবসায়ীদের শান্ত করেন।
রবিউল ইসলাম ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা থানার গেট থেকে সরে যান। এখানে কেউ ভিড় করবেন না। আপনারা দোকান খুলুন। ভয় পাবেন না। জননেত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের এ সুযোগ দিয়েছেন। তাই ঈদের আগে আপনারা ব্যবসা করবেন, সেই নিশ্চয়তা আমরা দিতে চাই।’
ব্যবসায়ী ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির জরুরি সভা বসে। এতে জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন সভাপতিত্ব করেন। প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ। সভাকক্ষে পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাত ঢুকলে বণিক সমিতির সভাপতি রবিউল ইসলাম উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি ব্যবসায়ীদের লাঠিপেটা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
জানতে চাইলে এসপি বলেন, পুলিশ ব্যবসায়ীদের মারধর করেননি। পুলিশ দেশের স্বার্থে কাজ করে। সিদ্ধান্ত না হওয়ার আগে মার্কেট খোলায় পুলিশ ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানায়। এরপরও অনেক ব্যবসায়ী নেতা পুলিশকে হুমকি দেন, চড়াও হন। এটা দুঃখজনক। পুলিশ মার্কেট বন্ধ ও বা খোলার কেউ না। জেলা প্রশাসক যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সেভাবে কাজ হবে।
সভায় মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘এন এস রোডে যা ঘটেছে, তা আমি জেলায় থাকা অবস্থায় মেনে নিতে পারি না। পুলিশ যেটা করেছে, সেটা অন্যায়। অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’ এ সময় এসপি মাইক নিয়ে কিছু বলতে গেলে তাঁকে থামিয়ে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসককে উদ্দেশ করে হানিফ বলেন, ‘আমার কাছে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের হয়রানি করা হয়। অহেতুক ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করা হয়। এটা যেন আর না করা হয়।’ এ সময় জেলা প্রশাসক কিছু বলতে গেলে তাঁকেও থামিয়ে দেওয়া হয়। পরে হানিফ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের কেনাকাটা করার জন্য বিপণিবিতানসহ সব দোকানপাট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন।
সভা শেষে জেলা প্রশাসনের ফেসবুক পাতায় জানানো হয়, সভায় জেলার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এতে ক্রেতাদের চাহিদা, বিভিন্ন দোকানিদের মালামাল বিক্রি না হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়া—এসব আলোচনা করা হয়। এসব কারণে আগামী ঈদুল ফিতর পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় জরুরি পণ্য ছাড়া গত ২৬ মে সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর ১০ মে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দোকানপাট চালু করা হয়। এতে কুষ্টিয়ার বিপণিবিতানগুলোয় ব্যাপক ভিড় তৈরি হয়। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ২০ মে এ জেলায় আবার দোকানপাট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল জেলা প্রশাসন।