সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে চাষিদের অনাগ্রহ
যশোর সদর উপজেলার মাহিদিয়া গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন গাজী এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেন। বিঘাপ্রতি গড়ে ২২ মণ ধান উৎপাদিত হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী ৩৩০ মণ ধান পেয়েছেন তিনি।
ইতিমধ্যে এক হাজার টাকা মণ দরে ৮০ মণ ধান স্থানীয় বাজারে কৃষক আলমগীর বিক্রি করেছেন। ধানের ভালো উৎপাদন ও ভালো দাম পেয়ে খুশি তিনি। সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে তাঁর কোনো আগ্রহ নেই।
আলমগীর হোসেনের মতো যশোরের কৃষকেরা সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ১৭ মে পর্যন্ত ধান সংগ্রহ অভিযানের ১০ দিন চলে গেলেও যশোর খাদ্যগুদাম এক মণ ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি।
যশোর জেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. লিয়াকত আলী বলেন, সরকারি যে দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তার চেয়ে বেশি দামে ধান বেচাকেনা হচ্ছে। যে কারণে খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করতে কৃষকের আগ্রহ কম।
খাদ্য ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলায় কৃষি অ্যাপের মাধ্যমে এবং অপর সাতটি উপজেলায় লটারির মাধ্যমে দুই লক্ষাধিক কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ২৯ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। ২৬ টাকা কেজি দরে ১৪ শতাংশের নিচের আর্দ্রতার ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৭ মে থেকে জেলায় সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও গত রোববার পর্যন্ত সরকারি গুদামে কোনো ধান দেননি কৃষকেরা।
এর কারণ হিসেবে কৃষকেরা বলছেন, সরকারি গুদামে ধান দেওয়া বেশ ঝক্কি-ঝামেলার। আর্দ্রতার কথা বলে প্রতি মণে দুই কেজি করে বেশি নেওয়া হয়। অনেক সময় ধান ফেরত দেওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় বাজারে এমন ঝামেলা নেই।
সদর উপজেলার খাজুরা বাজারের ধানের আড়তদার ব্যবসায়ী মো. আনিসুজ্জামান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, খাদ্যগুদামে চিটা ধান বা কম শুকনো ধান দেওয়ার সুযোগ নেই। এ জন্য কৃষকেরা ততটা আগ্রহী হচ্ছেন না।
এদিকে সদর উপজেলায় অ্যাপে নিবন্ধনের জন্য ১৭ হাজার ২৬০ জন এবং ধান বিক্রির জন্য সাড়ে আট হাজার কৃষক আবেদন করেছেন। ১৬ মে ছিল আবেদনের শেষ দিন। এ উপজেলায় লটারির মাধ্যমে ৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন ধান কেনা হবে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে।
জানতে চাইলে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, কৃষি অ্যাপে নিবন্ধনের জন্য যাঁরা আবেদন করেছেন, সেখান থেকে সাড়ে ১৪ হাজার কৃষককে ধান বিক্রির সুযোগ দেওয়া হবে। কৃষি কার্ড ছাড়াও অনেক কৃষক নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন। যাচাই–বাছাই করে তাঁদের কৃষি অ্যাপে নিবন্ধন দেওয়া হবে।