করোনায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের প্রস্তাব বিএনপির
করোনাভাইরাস জনিত দুর্যোগ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনে সরকারের কাছে প্রস্তাব করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে অবিলম্বে দেশের বরেণ্য অর্থনীতিবিদদের সমন্বয়ে একটি আপত্কালীন অর্থনৈতিক টাস্ক ফোর্স গঠনেরও দাবি করেছে বিএনপি।
আজ শনিবার বেলা ১১টায় গুলশানের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ দাবি জানান। এ সময় তিনি করোনাভাইরাস জনিত বৈশ্বিক মহামারির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় বিএনপির পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট ২৫টি প্রস্তাব তুলে ধরেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিবিদদের সহায়তায় এই প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে।
বিএনপি মনে করে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের গার্মেন্টসসহ রপ্তানি শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা খাতে ৫ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনার ঘোষণা করেছেন, তা যথেষ্ট নয়। বিএনপির অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে তাঁর ভাষণে বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাঁচিয়ে রাখার কোনো পরিকল্পনা বা এ জন্য বরাদ্দের কথা বলেননি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, তাদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য জিডিপির ৩ শতাংশ অর্থের সমন্বয়ে ৮৭ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল ঘোষণা করতে হবে। এর মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে স্বল্প-মেয়াদি, অনতিবিলম্বে। কিছু মধ্যমেয়াদি এবং কিছু দীর্ঘমেয়াদি। স্বল্প-মেয়াদি খাতে ৬১ হাজার কোটি টাকা, আর মধ্য-মেয়াদি খাতে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে ৮ হাজার কোটি টাকা অদৃশ্য খাত এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় করা যাবে। যাতে শাটডাউন প্রত্যাহার হলে সব খাতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সাধারণ ছুটি-পূর্ব স্তরে ফিরে আসতে সক্ষম হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম জানান, অর্থনৈতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিএনপির এই প্রস্তাবনা জরুরিভাবে বাস্তবায়নের জন্য তারা সরকারের কাছে পাঠাবেন।
দিনমজুরদের জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা
‘দিন এনে দিন খায়’ এমন সব শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, ভ্যানচালক, হকার, পরিবহন শ্রমিকদের প্রাথমিকভাবে এপ্রিল-মে-জুন এই তিন মাসের জন্য জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করে অনতিবিলম্বে ঘরে ঘরে গিয়ে নগদ অর্থ দেওয়ার সুপারিশ করেছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের একটি বক্তব্যের উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, নগদ টাকা দিয়ে দরিদ্ররা দুর্যোগ ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারে। তাই চাল-ডাল-লবণ-তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতি ও জটিলতা এড়াতে পণ্যসামগ্রীর পরিবর্তে নগদ অর্থ দিতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে এদের চিহ্নিত করতে হবে। তবে নগদ অর্থ প্রদানে কোনোভাবেই রাজনৈতিক বা দলীয় লোকজনকে এ কাজে সম্পৃক্ত করা যাবে না। প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিকভাবে ৩ মাসের জন্য আশ্রয়হীনদের অস্থায়ী আবাসন ও প্রয়োজনে তৈরি খাবার সরবরাহ করে তাদের দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য ন্যূনপক্ষে ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হবে।
বিএনপি বলেছে, ৮০ লাখের বেশি শ্রমিক বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে কাজ করছে। তাদের নগদ সাহায্য দিতে হবে। যাদের মজুরি-বেতন বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার আওতায় এটা করতেই হবে। আগামী ছয় মাস ব্যাপী সব অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের নগদ অর্থ সাহায্য দিয়ে জীবনযাত্রায় সমর্থন দিতে হবে। এই খাতে ছয় মাসের জন্য দুই কিস্তিতে প্রথম তিন মাসের এবং পরবর্তী কিস্তিতে অবশিষ্ট টাকা নগদ প্রদান করা যেতে পারে। এ খাতে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করতে হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলে শ্রমিকদের স্ব স্ব অ্যাকাউন্টে কিস্তির নগদ টাকা পরিশোধ করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র এবং নিয়োগপত্র দেখে এদের চিহ্নিত করতে হবে।
বিএনপির দাবি, গার্মেন্টস ও রপ্তানিমুখী শিল্প শ্রমিক শ্রেণিকে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে স্ব স্ব অ্যাকাউন্টে প্রাথমিকভাবে তিন মাসের একটি নগদ অর্থ সাহায্য দিতে হবে। পরবর্তীতে তা আরও ৩ মাসের জন্য বৃদ্ধি করা যেতে পারে। মালিকপক্ষদের এ টাকা বরাদ্দ না করে শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এই টাকা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে তারা আর্থিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হবে।
গার্মেন্টস ও রপ্তানি শিল্প শ্রমিকদের মতো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় পরিচালিত শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের জীবনযাত্রায় নগদ অর্থ সাহায্য দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, গার্মেন্টস শিল্পের মতো এসব প্রাতিষ্ঠানিক শিল্প-কারখানার শ্রমিকেরাও একই দুর্যোগের শিকার। এদের ৬ মাসের জন্য নগদ অর্থ সাহায্য করতে হবে। খাদ্য জোগান দিতে দুর্নীতি ও জটিলতা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সামরিক বাহিনী অর্থ বিতরণ করবে। এ খাতে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র এবং নিয়োগপত্র দেখে এদের চিহ্নিত করতে হবে।
প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য হাজার কোটি টাকা
বিএনপি বলেছে, ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে বাধ্য হয়ে কয়েক লাখ প্রবাসী শ্রমিক বাংলাদেশে ফিরেছেন। অনেকেই শূন্য হাতে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। এদের চিহ্নিত করে প্রত্যেক প্রবাসীকে তিন মাসের জন্য মাসিক ১৫ হাজার টাকা আপত্কালীন আর্থিক সাপোর্ট প্রদান করতে হবে। যাতে করে তারা যথাসময়ে পুনরায় বিদেশে স্বীয় কর্মস্থলে ফেরত যেতে পারেন। এ জন্য এ খাতে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হবে। একই সঙ্গে যে সব দেশে বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশি প্রবাসীদের চাকরি সুনিশ্চিত করতে হবে। তাদের যেন ছাটাই (Pay off) না করতে হয়।
স্বাস্থ্য খাতে ১৫ হাজার কোটির টাকার সুপারিশ
স্বাস্থ্য খাত এবং যারা করোনা মোকাবিলার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত সেসব হাসপাতাল এবং সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে বিএনপি। দলটির প্রস্তাব , করোনা মোকাবিলার সঙ্গে যারা যুক্ত সে সব ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জীবন ঝুঁকির বিবেচনায় জরুরি ভিত্তিতে তাদের স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা করতে হবে। আগামী তিন মাসের জন্য প্রতি চিকিৎসকদের জন্য ১ কোটি, নার্সদের জন্য ৭৫ লক্ষ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার বিমার বিপরীতে প্রিমিয়াম সরকার বহন করবে।
করোনা চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা সহকারীদের জরুরি ভিত্তিতে দ্রুতগতিতে পিপিই, করোনা পরীক্ষার কিট ও আনুষঙ্গিক ওষুধ ও দ্রব্যাদি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। রাজধানী, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে করোনা রোগীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল স্থাপন, চিহ্নিতকরণ, পৃথক কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন এর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক/নার্সদের করোনা পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত জনবল নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন আইসিইউ স্থাপনের জন্য ভেন্টিলেটরসহ উন্নত চিকিৎসা সামগ্রী শুল্কমুক্ত আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল ও রাজধানীর বড় বড় শূন্য আবাসিক হোটেল গুলোকে সাময়িকভাবে হসপিটালে রূপান্তরিত করে জরুরি স্বাস্থ্য সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে করোনায় আক্রান্তদের নদীতে ভাসমান জাহাজে আইসোলেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেওয়া যেতে পারে। তাতে আক্রান্তের হার কমে আসবে।
বয়স্ক ও বিধবাদের জন্য
বিএনপির দাবি, বয়স্ক নারী, বিধবা, প্রতিবন্ধী, ষাটোর্ধ্ব বয়স্কদের আগামী তিন মাসের জন্য প্রতি মাসে জনপ্রতি ৫০০০ টাকা করে নগদ অর্থ বিতরণ করতে হবে। এ খাতে আপাতত দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হবে। এ ছাড়া দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা পরিবারকে আগামী তিন মাসের জন্য বিনা মূল্যে রান্নার গ্যাস, গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার সরবরাহ করতে হবে।
মধ্য-মেয়াদি পদক্ষেপ
বিএনপির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিলম্বে হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কতিপয় পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা বলেছে, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কোনো ঋণ গ্রহীতাকে ঋণ খেলাপি ধরা হবে না। বিএনপি সুপারিশ করেছে, এই সময়কালীন ঋণের সুদ মওকুফ করতে হবে। ইএমআই (ঋণের নিয়মিত কিস্তি) পরিশোধ তিন মাসের জন্য স্থগিত করতে হবে। এ সময় শিল্প, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান Working capital এর Shortage হবে। সমস্ত ব্যাংকে Working capital দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিতে হবে। নতুন করে Co-latral এর প্রয়োজন হবে না।
বিএনপি বলেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এখনই ব্যাংক খাতে তারল্য বৃদ্ধি করার পদক্ষেপ নিয়ে ফিন্যান্সিয়াল মার্কেটে আস্থা বৃদ্ধি করতে হবে। সম্প্রসারণশীল মনিটরিং পলিসি নিতে হবে। বেসরকারিভাবে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, এটা ন্যূনতম ১৫ থেকে ১৬ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি রেট,সিআরআর, এসএলআর, আরইপিও-এর রেট কমাতে হবে, তবেই তারল্য বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংককে সব বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে এসএলআর-এর সীমার ঊর্ধ্বে রক্ষিত সব ট্রেজারি বিল bill এবং ট্রেজারি বন্ড কিনতে হবে, যাতে ব্যাংকের ট্রেজারি বন্ড বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশ ব্যাংককে ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পের জন্য এবং বিশেষ করে দেশের জন্য ব্যবহৃত পণ্য প্রস্তুতকরী প্রতিষ্ঠানের জন্য পুনঃঅর্থায়ন (re-finance) করতে হবে। ন্যূনতম ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড তৈরি করে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ হারে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিতে হবে। যেটা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ এ শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ঋণ হিসাবে পেতে পারে। ব্যবসায় অচলাবস্থার কারণে যেসব এসএমই অর্থ প্রবাহ সমস্যায় পড়েছে, তাদের সুনির্দিষ্ট রিলিফ-প্যাকেজ দিতে হবে। যেমন- আপত্কালীন সময়ে এসএমইগুলোকে কর-রেওয়াত দিতে হবে, ঋণ পরিশোধ স্থগিত রাখতে হবে। বিদ্যুৎ ও অন্যান্য বিল পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনে সেক্টরভিত্তিক সাবসিডি প্রদান করতে হবে। এসএমইগুলোকে এই দুর্যোগ মোকাবিলায় পৃথক ক্রেডিট লাইন বরাদ্দ করে তাদের জন্য পর্যাপ্ত ক্রেডিট প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।
আজ সরকারের ব্যয় সংযত করার দাবি করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, রাজস্বনীতি অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকারের ব্যয় সংযত করতে হবে। অপচয় বন্ধ করে সেই অর্থ দিয়ে রপ্তানিমুখী শিল্প, ওষুধ শিল্প এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় শিল্পকে আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে। বিশেষ করে কর নীতির আওতায় করপোরেট করের হার কমানো, আপত্কালীন সময়ের জন্য কর মওকুফ করা এবং ব্যক্তিগত এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর নিকট হতে advance income tax আদায় করা বন্ধ করতে হবে।
সরকারি অর্থ সংকুলান করার জন্য এডিবি থেকে অপ্রয়োজনীয়, অনুৎপাদনশীল ও কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিতে হবে। অপচয় বন্ধ করতে হবে। কঠোর কৃচ্ছ্র অবলম্বন করতে হবে। মেগা প্রকল্পগুলোর অর্থ ব্যয় কিছুটা মন্থর করা যেতে পারে। সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সচিব কতগুলো পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন প্রায় সবগুলোই শুধুই প্রশাসনিক পদক্ষেপ এবং জেলা ও স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বণ্টন। কোনো অর্থের বরাদ্দ নেই। এগুলো শুধুই কথামালা, বাস্তবায়ন হলেও কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। সরকারকেই অর্থ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
বিএনপি বলেছে, মহামারির পর সম্ভাব্য বিপর্যয় এড়াতে হলে কৃষি ক্ষেত্রে সহায়তা জোরদার করতে হবে। আগামী মৌসুমে স্থানীয় বাজার থেকে কৃষক পর্যায়ে পর্যাপ্ত খাদ্য ক্রয় করে মজুদ করতে হবে। কারণ, বিশ্ব মহামারির কারণে খাদ্য রপ্তানিকারক দেশগুলো খাদ্য রপ্তানি করতে পারবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। এ খাতে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হবে।
অসাধু ব্যবসায়ী মজুতদার ও দালাল শ্রেণির লোকদের নজরদারিতে রেখে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা এবং উৎপাদন ও সরবরাহ-চেইন নির্বিঘ্ন রাখতে হবে। অবিলম্বে সরকারকে বিশ্ব ব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও আইএমএফসহ দ্বি-পাক্ষিক আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থ সংগ্রহ করতে হবে।
প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্র্যাচুইটি জমা দুর্যোগকালীন সময় পর্যন্ত স্থগিত করতে হবে। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের (self-employed) এবং start-up দের (job creators not job seekers) সব কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে তাদের প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলে মাসিক কিস্তিতে এ অর্থ প্রদান করতে হবে। এ জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হবে। start-up এর সব ধরনের কর পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে হবে।
বিএনপি বলেছে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার, তথ্য প্রবাহ ও জন মতামত তুলে ধরে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দায়িত্ব পালন করে আসছেন। করোনা-ভাইরাস মহামারিতে সংবাদকর্মীরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে যে আর্থিক প্যাকেজ পেশ করা হয়েছে তার অধিকাংশ যুক্তিসংগত। দেশের এই ক্রান্তিকালে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সাংবাদিকদের আর্থিক ও অন্যান্য দাবিগুলো সুবিবেচনা করতে হবে।
দীর্ঘ-মেয়াদি প্রস্তাব
বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অভিভাবক হিসেবে দেশের প্রধান আর্থিক শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারেনি। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংককে তাদের মৌলিক ভূমিকায় ফিরে এসে বিধ্বস্ত ও বিশৃঙ্খল অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যথাযথ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্য আর্থিক, ব্যাংকিং ও কর ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি কাঠামোগত নীতি গ্রহণ করতে হবে।
ভবিষ্যতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা বাস্তব কারণে দেশে ফিরতে বাধ্য হবেন, তাদের সহজ শর্তে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। যেন তারা আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে নিজের ও অর্থনীতির উন্নয়ন সাধনে লিপ্ত হতে পারে। ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী অপ্রতিরোধ্য সংক্রামক রোগ ও মহামারির কারণে রোগ নির্ণয় ও স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে বড় ধরনের ট্রান্সফরমেশন হয়েছে। এই পটভূমিকায় দেশে ইবোলা, ডেঙ্গু বা করোনা ভাইরাসের মতো মহামারি মোকাবিলায় যথাযথ সক্ষমতা গড়ে তুলতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল, পরীক্ষা কীট, পিপিই, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ ও আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সংবলিত পর্যাপ্ত সংখ্যক পৃথক বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এরা যুদ্ধাবস্থার মতো যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত থাকবে।
দেশে ভবিষ্যতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ভেন্টিলেটর নির্মাণ শিল্প গড়ে তুলতে হবে। ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন তা বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বিএনপি ঘোষিত ভিশন-২০৩০ মোতাবেক জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।