বিপুল পাঠক, বসার স্থান কম

ময়মনসিংহ বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার। সাম্প্রতিক তোলা ছবি।  প্রথম আলো
ময়মনসিংহ বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার। সাম্প্রতিক তোলা ছবি। প্রথম আলো

ময়মনসিংহ নগরের ছোট বাজারের একটি ভাড়া ভবন থেকে ২০১০ সালের মে মাসে সার্কিট হাউস মাঠের জিমনেসিয়াম সেন্টারের পাশে নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হয় জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার। গত বছর সেটি বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারে উন্নীত হয়। শুরুতে দোতলা ভবন নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু একতলা ভবন নির্মাণ করেই গণগ্রন্থাগারটির উদ্বোধন করা হয়। প্রথম প্রথম পাঠকসংখ্যা কম ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে পাঠক সমাগম বাড়তে থাকে।

এই গ্রন্থাগারের এক বর্গকিলোমিটারের মধ্যে সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, মুসলিম গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাই গণগ্রন্থাগারটিতে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হারই বেশি। পাশাপাশি চাকরিপ্রত্যাশীদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এত পাঠকের বসার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।

গণগ্রন্থাগার সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে ১২০ জন পাঠক একত্রে বসে বই পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক পাঠক আসেন। তাঁদের জন্য স্থানসংকুলান হয় না। পাঠকদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন বয়সের নারী, শিশু ও প্রবীণ পাঠকেরাও এখানে আসেন।

গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর পরিচালিত এই গণগ্রন্থাগারের দুটি কক্ষে মোট ৬২ হাজার বই আছে। এর মধ্যে একটি কক্ষে মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা ও ভাষা আন্দোলন, জীবনী, রচনাবলি, সাহিত্য, উপন্যাস, কবিতা, সাংবাদিকতা, নারী, ধর্ম, তথ্যপ্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয়ের বইয়ের আধিক্য রয়েছে। আছে বঙ্গবন্ধু কর্নার, মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, ময়মনসিংহ কর্নার, মহিলা কর্নার, রবীন্দ্র ও নজরুল কর্নার। অপর কক্ষে শিশু কর্নার ও পত্রিকা পাঠের ব্যবস্থা রয়েছে। একটি ইংরেজি, একটি স্থানীয় পত্রিকাসহ শীর্ষস্থানীয় ১৩টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা রাখা হয়। গত অর্থবছরে ১ হাজার ২০০ বই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এখানে।

৮ মার্চ সকালে কয়েকজন পাঠকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বই পড়া নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাঁদের মধ্যে শাহানা আক্তার নামের এক ছাত্রী বলেন, গণগ্রন্থাগারটি সপ্তাহে দুই দিন বন্ধ থাকে। বই পড়ার ক্ষেত্রে এটি একটি প্রতিবন্ধকতা। তা ছাড়া বসার ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত। গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে। কোনো ক্যানটিন বা ফুড কর্নার নেই। একটানা দীর্ঘ সময় এই গণগ্রন্থাগারে অবস্থান করে পড়তে চাইলে একপর্যায়ে কিছু খেতে হয়। সেই ব্যবস্থা এখানে রাখা উচিত ছিল।

শাহবাজ ইসলাম নামের চাকরিপ্রত্যাশী আরেকজন পাঠক বলেন, বই পড়ার জন্য তিনি নিয়মিত এখানে আসেন। কিন্তু ইন্টারনেট সুবিধা নেই এবং কম্পিউটার ব্যবহার করার কোনো সুব্যবস্থা নেই। নৈশকালীনও বই পড়ার ব্যবস্থা নেই। গণগ্রন্থাগারটিকে আধুনিকায়ন করে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা দরকার। রাত পর্যন্ত গণগ্রন্থাগার খোলা রাখা উচিত।

বীণা রানী নামের এক গৃহবধূ বলেন, এখানের পরিবেশ অনেক ভালো। তিনি তাঁর বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে নিয়মিতই বই পড়তে এখানে আসেন। নারী ও শিশুদের জন্য পৃথক বসার ব্যবস্থা আছে। প্রায় সব ধরনের বই এখানে আছে। বিদেশি লেখকের আরও বই দরকার।

সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগ থেকে পাস করা উবায়দুল হক। তিনি বলেন, এখানে বিসিএস, ব্যাংক জবসহ সরকারি-বেসরকারি চাকরির প্রস্তুতির জন্য সহায়ক অনেক বই আছে। এখানে এসে এসব বই পড়ার সুযোগ পেয়ে তাঁর বেশ ভালো লাগে।

বইপড়া কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং পাঠকদের নানা সমস্যার ও চাহিদার কথা বিবেচনা করে প্রতি মাসে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে পাঠকেরা তাঁদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারেন। এ ছাড়া একটি অভিযোগ বা পরামর্শ বাক্স স্থাপন করা আছে। সেখানেও যেকোনো পাঠক কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁর মতামত জানাতে পারেন। ২৩ সদস্যের একটি পাঠক ফোরাম আছে।

গণগ্রন্থাগারের বিদ্যমান সমস্যা এবং সার্বিক চিত্র সম্পর্কে ময়মনসিংহ বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের সহাকরী পরিচালক মো. সালাহ্উদ্দীন বলেন, জেলা গণগ্রন্থাগার থেকে এটি বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী লোকবল বাড়েনি। পরিচালকসহ মোট পদ থাকার কথা ২১টি। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ১২ জন। গ্রন্থাগারটির কোনো আধুনিকায়নও হয়নি। পাঠকদের অত্যধিক চাপ রয়েছে। ভবন সম্প্রসারণ এবং লোকবল বৃদ্ধির চাহিদাপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। পরিচালক দায়িত্বভার গ্রহণ করলে দ্রুত উন্নতি লাভ করবে গণগ্রন্থাগারটি।