মশকনিধনের দাবিতে 'মশারিমিছিল'
চারজন চার কোণা ধরে মশারি মেলেছেন। ভেতরে আছেন একজন। দিনের বেলা সড়কে এভাবে মশারি টানিয়ে পথ চলে মিছিল করেছেন একদল লোক।
সিলেট নগরীতে মশারি টানিয়ে এমন অভিনব মিছিল করেছে সিলেট কল্যাণ সংস্থা নামের একটি সামাজিক সংগঠন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে নগরীর জিন্দাবাজার এলাকা থেকে নগর ভবন পর্যন্ত এমন মিছিল করে সিটি করপোরেশনের চলমান মশকনিধন কর্মসূচি জোরদারের দাবি জানায় তারা।
মিছিল করার সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসীর নানা রকম ভোগান্তির বিষয়টিও প্রচার করা হয়। বলা হয়, ‘নগরীতে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ নগরবাসী। মশকনিধন কার্যক্রমে সিটি করপোরেশনের উদাসীনতা নাগরিকদের চিন্তিত করে রেখেছে। মশার কামড়ে অসুস্থ ব্যক্তির শরীর থেকে সুস্থ ব্যক্তির শরীরে নানা রোগ সংক্রমণ হতে পারে। বিশেষ করে শামীমাবাদ, কাজলশাহ, ওসমানী মেডিকেল এলাকা, জিন্দাবাজার, শেখঘাট, শিবগঞ্জ, মির্জাজাঙ্গাল, শাহজালাল উপশহর, মিরাবাজারে মশার উপদ্রব বেশি।’
মশারিমিছিল শেষে নগর ভবনে সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। মেয়রের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দিন। স্মারকলিপি দিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন সিলেট কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ এহছানুল হক। দাবির প্রতি একাত্ম হয়ে বক্তব্য দেন সংস্থার উপদেষ্টা হাজি মো. রজব আলী দেওয়ান ও সিলেট পুস্তক ব্যবসায়ী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. খলিলুর রহমান।
এহছানুল হক বলেন, ‘মশকনিধনের নাম করে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ওষুধ ছিটিয়ে মূলত আইওয়াশ করে। তারা মশা নিধন করে না। সকালে ওষুধ ছিটিয়ে দিলে বিকেলে আরও মশা বেড়ে যায়। তাই আইওয়াশ নয়, মশকনিধনে বাস্তবভিত্তিক স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান আমাদের।’
কর্মসূচি শেষে তিনি প্রথম আলোকে বলেন,‘ স্মারকলিপিতে নগরীর ঘনবসতি এলাকার একটি তালিকা দিয়েছি আমরা। এই এলাকাগুলোতে মশকনিধন অভিযান চালিয়ে আরেক দফা পর্যবেক্ষণ করে দেখার কথা বলেছি। তখনই দেখা যাবে যে মশকনিধন অভিযানে মশা নির্মূল হচ্ছে না।’
সিটি করপোরেশন বলছে, ২৭টি ওয়ার্ডে ১০ দিন করে মশকনিধন অভিযান গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। ২৭টি ওয়ার্ডে মশকনিধনের প্রাথমিক ওষুধ ছিটানোর কাজ শেষ হবে ৬৫ দিনে। মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য কেনা হয়েছে নতুন ৬০টি স্প্রে মেশিন। ওষুধ কেনা হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকার। এর মধ্যে তিন ধরনের ওষুধ রয়েছে। ওষুধগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কে মশকনিধন অভিযানের মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম মশকনিধন কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামনে ডেঙ্গুর মৌসুম। আমরা আগেভাগেই প্রস্তুতি শুরু করেছি। মশার লার্ভা ও প্রাপ্তবয়স্ক উড়ন্ত মশা নিধন করতে তিন ধরনের ওষুধ আমরা সংগ্রহ করেছি। ২৭টি ওয়ার্ডে ৬৫ দিনের মশকনিধন অভিযান চলবে। এপ্রিল মাসের পর থেকে আবার তিন মাসের নতুন করে মশকনিধন অভিযান শুরু হবে।’