গাজীপুরে ধর্ষণের ঘটনা আপস করতে বলেছিলেন এসআই
গাজীপুরে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলা তুলে নিতে দফায় দফায় আপস-মীমাংসার প্রস্তাব পেয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গতকাল রোববার থানায় যান ধর্ষণের শিকার নারী ও তাঁর মা। দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুম হোসেন জিডি গ্রহণ না করে ওই নারীকে উল্টো আপস করার প্রস্তাব দেন বলে তাদের অভিযোগ।
ওই নারীর ছোট ভাই প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, ‘গতকাল আমার বোন ও মা বাসন থানায় যান একটি জিডি করতে। এ সময় সেখানে তাদের সঙ্গে কথা হয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মাসুদ হোসেনের। তাঁকে জিডি করার কথা জানালে তিনি তাঁর বোনকে আলাদা কক্ষে ডেকে নিয়ে তিনটি প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, বিষয়টি মীমাংসা করতে পারেন, তাকে বিয়ে করতে পারেন অথবা মামলা চালিয়ে যেতে পারেন।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘এসআই আমার বোনকে বলেন যে ডিএনএ টেস্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া না গেলে আপনার বিরুদ্ধে উল্টো মামলা হবে। আমি আপনার ভালোর জন্যই বলছি। চিন্তা করে দেখেন কোনটা করবেন।’
আজ সোমবার দুপুরে ওই নারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার পর থেকে স্থানীয় লোকজন মীমাংসার প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। সবাই বলছেন, মামলা করে কী হবে। তোমার একটা মেয়ে আছে। তাকে বিয়ে দিতে হবে। এসব জানাজানি হলে মেয়েকে বিয়ে দিতে সমস্যা হবে।’ তবে এসব কথায় তিনি ভয় পাননি জানিয়ে বলেন, ‘মামলার পরের দিন ধর্ষক ফোন দিয়ে ভয় দেখান। মীমাংসার প্রস্তাব দেন। তাঁর স্ত্রীও একই কথা প্রস্তাব দেন।’
অভিযোগের বিষয়ে গাজীপুরের বাসন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই নারীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। তখন উদাহরণ দিয়ে নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। এটা নিয়ে আসলে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাদের জিডিটাও নেওয়া হয়েছে।’
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কাউছার চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। ওই নারীকে জিডি করতে আসতে বলে হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এ ধরনের প্রস্তাব কিছুতেই দিতে পারেন না। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।’
যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তাঁর নাম ইমরান হোসেন ওরফে আনোয়ার (৪০)। তাঁর বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায়। তিনি গাজীপুরে থাকেন।
ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় ওই নারী বলেছেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে ইমরান মোবাইল ফোনে ওই নারীকে (৩২) তাঁর আশা ও আলো নামের একটি সমিতির অফিসে ডেকে নিয়ে যান। প্রথমে তিনি চাকরি দেওয়ার কথা বলে আপত্তিকর প্রস্তাব দেন। এতে তিনি রাজি না হলে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় ইমরানসহ দুজনের বিরুদ্ধে ১৮ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর মহানগরের বাসন থানায় একটি মামলা করেন।