৫০ বছর পর আবার প্রধান অতিথি রেহমান সোবহান
স্বাধীনতার আগের বছর ১৯৭০ সালে যে শ্রমিক সংগঠনের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধান অতিথি হয়েছিলেন দেশের একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সেই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মঙ্গলবার তিনিই আবার প্রধান অতিথি হলেন। এই বিরল উদাহরণ তৈরি হলো বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে। সেই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আর কেউ নন, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনটি মঙ্গলবার ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। সবাই এসেছেন রেহমান সোবহানের বক্তব্য শুনতে। ঠিক ৫০ বছর আগে এ রকমই পূর্ণ ছিল ঢাকা মুসলিম হল ইনস্টিটিউট মিলনায়তনটি। ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কর্তাব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে এভাবেই স্মৃতিচারণা করছিলেন। রেহমান সোবহানও বলছিলেন, শিল্পকারখানায় শ্রমিকশ্রেণির মালিকানা থাকার কথা তিনি তখনো বলতেন, এখনো বলছেন, ভবিষ্যতেও বলে যাবেন। তবে মুজিব বর্ষ শুরু হওয়ার প্রাক্কালে শ্রমিক সংগঠনগুলোর কণ্ঠও এ ব্যাপারে জোরালো হতে হবে।
ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শ্রমিকনেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের তিন সহসভাপতি মাহাবুব আলম, তপন দত্ত ও আবদুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক ওয়াজেদুল ইসলাম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মালেক, দপ্তর সম্পাদক সাহিদা পারভীন শিখা, অর্থ সম্পাদক কাজী মো. রুহুল আমিন, প্রবীণ শ্রমিকনেতা লুৎফর রহমান, চপল বাশার প্রমুখ। তাঁরা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশন অনুযায়ী শ্রম আইন ও বিধি প্রণয়নের দাবি জানান।
১৯৬৯ সালে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মনজুরুল আহসান খান ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক (২০০৮ সালে প্রয়াত) সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিকসহ অন্য শ্রমিকনেতারা মিলে। তখন এর নাম ছিল ট্রেড ইউনিয়ন যোগাযোগ কেন্দ্র। ১৯৭২ সালে সংগঠনের সম্মেলনে নাম পাল্টে রাখা হয় বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।
স্মৃতিচারণা করে রেহমান সোবহান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নরসিংদীর ঘোড়াশালে এক নির্বাচনী প্রচারাভিযানে যাচ্ছিলাম। পথে বঙ্গবন্ধু আদমজী পাটকল এলাকায় নামলেন। সেখানে দুই লাখ মানুষের সমাগম। সবাই মেহনতি মানুষ। আসলে মেহনতি মানুষের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কটা আগে ছিল, এখন নেই।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একদিন বললেন কলকারখানা শুধু সরকারের হাতে এলেই হবে না, এতে শ্রমিকশ্রেণির অংশ থাকতে হবে। অর্থাৎ শ্রমিকশ্রেণির মালিকানা থাকতে হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর এই দর্শন বর্তমানে হাওয়ায় উড়ে গেছে।
পোশাক খাতের কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের মালিকানা থাকার কথা ২০ বছর ধরে বলে এলেও কেউ কর্ণপাত করছেন না বলে উল্লেখ করে রেহমান সোবহান বলেন, ‘ট্রেড ইউনিয়নগুলোর পক্ষ থেকেও জোর গলায় এমন দাবি নেই। অথচ আমি বিশ্বাস করি কারখানায় শ্রমিকদের মালিকানা থাকলে তাঁরা মন দিয়ে কাজ করবেন। এতে সামাজিক অস্থিরতাও দূর হবে।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর অনেক স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা বলা হয়। মুখে বললে তো হবে না। সামনে মুজিব বর্ষ। বর্তমান সরকারের সামনে এখনই তুলে ধরতে হবে যে সমাজে বৈষম্য না রাখা এবং শ্রমিক শোষণ না করার স্বপ্নও ছিল বঙ্গবন্ধুর।